সম্মান পর্ব -৫ ( bengali story | bangla golpo)

 

Sonman part 5 bengali story ( bangla golpo)


অনিক পরীক্ষা দিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে এ বাড়ি ফিরল। অনিক কে দেখেই জুঁই বুঝতে পারলো ওর পরীক্ষা ভালোই হয়েছে। অনিক বিকাল বেলায় বাড়ি ফিরে বাবা কে বাড়িতে থাকতে দেখে আশ্চর্য হলো। 

- বাবা আজ কাজে যায় নি? তাহলে কি আমার পরীক্ষা র টেনশন এ বাবা....

- বাবা !

- এই তো অনিক পরীক্ষা দিয়ে ফিরে পড়েছিস বাবা । চেয়ার ছেড়ে অনিক এর কাছে এসে ওর হাত দুটো ধরে মৃনাল বাবু বললেন, কেমন পরীক্ষা হয়েছে অনিক? পাশ করতে পারবি তো বাবা? তোকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন রে বাবা। 

- হ্যা বাবা। পাশ তো আমি করবোই। আর ভালো নম্বর পেয়েই পাশ করবো। তোমার আর দিদির আশীর্বাদ আমার মাথায় আছে কিনা।

- আচ্ছা, বেশ বেশ! তা অনিক তোকে আমার একটা খুশির সংবাদ দেওয়ার আছে। ভাবছি অহনা, সপ্তক ফিরলে একেবারেই সকলের সামনেই বলবো।


Sonman part -5 | Bengali story | Bangla golpo 


জুঁই তখন চা নিয়ে ঘরে আসছিল। বাবার মুখ থেকে ও কথা শুনে লজ্জায় পুনরায় রান্নাঘরে চলে গেল।

- কি কথা বাবা?

-ওরা আসলে বলবো।

-আচ্ছা ঠিক আছে।

আধা ঘন্টার মধ্যেয়েই অহনা আর সপ্তক কলেজ থেকে ফিরল। অনিক ওদেরকে বললো বাবা আমাদের আজ একটা খুশির সংবাদ দেবে।

সপ্তক তো আনন্দে টগবগ করে উঠল, - এই দাদা কি সংবাদ রে?

- ধুর সপ্তক। তুই একটু লাফালাফি টা কম করবি? আমি ও কি জানি নাকি বাবা আসুক বলবে। 

অহনাও এর সাসপেন্স ধরে রাখতে পারছে না।

অগত্যা তারা বড় দিদি কে ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করার জন্য রান্না ঘরে গেল। কিন্তু তেমন কোনো সুবিধা হলো না। জুঁই মুখ ঘুরিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে কিছু বললো না, কাজে ব্যস্ত থাকার ভান করলো। শেষমেশ তিনজনে মৃনাল বাবুর ঘরে ঢুকলো। ওই দিকে ওর তিন ভাই বোন এর কান্ডকারখানা দেখে তো জুঁই লজ্জায় শেষ।

- বাবা অহনা আর সপ্তক এসে গেছে। কি বলবে বলছিলে আমাদের?

খবর কাগজ থেকে মুখ তুলে মৃনাল বাবু বললেন, তোরা যখন আজ কলেজ আর অনিক পরীক্ষা দিতে বেরোলি তারপর আমিও কাজে বেরোব বলে রেডি হচ্ছিলাম। এমন সময় বিকাশ আর ওর মা এলেন। 

অনিক সপ্তক একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়্যি করে জিজ্ঞাসা করলো - কে বিকাশ বাবা?


Sonman part -4 | Bengali story | Bangla golpo 



বিকাশ নাম টা রান্না ঘর থেকে শুনেই অঞ্জু মরমে মরে গেল।

বিকাশ হলো রায় টেক্সটাইল এর হবু মালিক মিসেস অঞ্জু রায় এর একমাত্র ছেলে। সে কিনা বেশ কয়েক বছর ধরে তোদের দিদিকে ভালোবাসে। আর তোদের দিদিও। তা আজ ওদের বাড়ি থেকে বিকাশ আর বিকাশ এর মা আর ওদের বাড়ির একজন কাজের লোক এসেছিল। তোদের দিদিকে দেখে অঞ্জু দেবীর ভীষণ পছন্দ হয়েছে। তাই কথা বার্তা ফাইনাল করতে চেয়েছিল।

সপ্তক আর অহনা আনন্দে নাচতে শুরু করে দিল। দুজনের মধ্যে হই হত্ত গোল শুরু হয়ে গেল। দুজনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে খুনসুটি করতে করতে ঘরে চলে গেল। অনিক তখন ও মৃনাল বাবুর ঘরে ছিল।

মৃনাল বাবু বললেন, আমি ওনাদের বলেছি আরো কয়েকমাস টাইম দিতে। হুট করে বিয়ে দেওয়ার মতো সামর্থ আমার নেই। ঠিক বলেছি কিনা অনিক?

- তুমি একদম ঠিক বলেছ। তুমি একদম চিন্তা করো না বাবা। আমি চাকরিটা নিশ্চই পাবো। আমি দিদির খুব ধুমধাম করে বিয়ে দেব তুমি দেখে নিও বাবা। 

- আমি জানি রে বাবা। তুই তো আমার মনের বল। তাই তোর কাছেই সব কিছু বলে আমি হালকা হই। 



................................


Sonman part -5| Bengali story | Bangla golpo 


পরদিন কলেজ যাওয়ার পথে অহনা আবার বাস স্টপে এসে দাড়ালো। কিন্তু ও আয়ুশ কে আশেপাশে কোথাও দেখতে পেল না। অহনা র চোখ দুটি আজ আয়ুশ কে খুঁজছে। বাস চলে এলো। অহনা ইচ্ছা করেই বাস টা ছেড়ে দিল। রাস্তায় যতদূর চোখ যায় ও আয়ুশ কে খুঁজতে থাকে। কিন্তু না, আয়ুশ এর দেখা নেই। অহনার দু চোখে জল চলে আসে। সে প্রানপনে চেষ্টা করে নিজেকে সামলাতে। বড়লোক দের প্রেম- ভালোবাসা বুঝি এইরকম ই হয়? একদিন - দুদিন ভালোবাসা দেখায়, কর্তব্য দেখায়, যত্ন নেয়, তৃতীয় দিনের দিন আর ফিরেও তাকায় না। কেন? আয়ুশ ! কেন তুমি আমার সাথে এইরকম খেলাটা খেললে.... বেশ তো আমি ছিলাম নিজেকে নিয়ে । সাজানো জীবনটাকে ওলটপালট করে দিয়ে গেলে কেন বলো। আমি কি অপরাধ করেছি বলতো তো? আমি গরিব ঘরের মেয়ে তাই তুমি আমায় দুদিন বাইকে লিফ দিয়ে প্রপোজ করে মজা লুটলে তাই না! প্লিজ আয়ুশ! প্লিজ ব্যাক মাই লাইফ... দ্বিতীয় বাস টাও এসে গেল। তবুও অহনা বাসে উঠলো না। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। হটাৎ ই ঝাপসা চোখে অহনা দেখলো আয়ুশ  আসছে বাইক নিয়ে। এতক্ষন অহনা মনে মনে খুব চাইছিল কখন আয়ুশ আসবে। তাকে নিয়ে অনেক অনেক ইমোশনাল কথা ভেবে নিয়েছে। এখন ওকে আস্তে দেখে ও মনে মনে আয়ুশ এর উপর খুব রাগ করলো এত দেরিতে আসার জন্য। আয়ুশ অহনার সামনে এসে দাড়ালো। কিন্তু অন্য দিনের মতো তাকে আর বসার অফার দিল না। অহনার গা টা গেল জ্বলে। অহনার চোখ- মুখের হাবভাব দেখে আয়ুশ মনে মনে খুব মজা পারছিল । এবার মিস অহনা ! এবার তুমি তোমার মনের কাছে জব্দ হয়েছ। নিজের আবেগের কাছে জব্দ হয়েছ। গতকাল তুমি আমায় খুব অপমান করেছিলে। আমি তো দেখেছি অহনা তোমার চোখে আমার প্রতি ভালোবাসা আমি তো পড়ে নিয়েছি। তুমি নিজেকে যতই লুকানোর চেষ্টা করো না কেন , তুমি ধরা পড়তে বাধ্য। আমি তোমায় কিছুতেই অফার টা করবো না। তুমি ই আসবে আমার কাছে। আয়ুশ মনে মনে বলল, আর অভিমান নয় মিস অহনা। প্লিজ উঠে এসো। আয়ুশ এর কাছ থেকে কোনোরকম অফার না পেয়ে অহনা নিজে থেকেই আয়ুশ এর বাইকে চেপে বসলো। কিন্তু বাইকে বসে আয়ুশ কে টাচ করলো না। বেশ গ্যাপ দিয়ে বসলো। 

- এই ভাবে বসলে যে পরে যাবে অহনা।

- তাতে তোমার কি?


Bengali heart touching love story



- ওহ! আচ্ছা। 

এবার আয়ুশ ইচ্ছে করেই এইদিক ঐদিকে স্পিড এ বাইক চালাতে থাকল। অহনা বাধ্য হয়েই ওকে চেপে ধরলো।

- এই বার বলো মিস অহনা, রাগ ভাঙল?

- জানি না।

- বাবা! এখনো এত রাগ আমার ওপর?কালকের উত্তর টা কিন্তু আমি এখনো পেলাম না। 

- কিসের উত্তর?

- যা! এর মধ্যেয়েই ভুলে গেলে?তুমি তো তাহলে দেখছি খুব খারাপ স্টুডেন্ট। 

- এই আমি স্টুডেন্ট হিসাবে খারাপ নই। আর হ্যা, আগের দিনের প্রশ্নটা আমার মনে আছে। কিন্তু আমি তার উত্তর দিতে রাজি নই।

আচমকা আয়ুশ বাইক থামিয়ে দিলো। অহনা আয়ুশ কে জাপটে ধরলো। কি হলো এইভাবে কেউ বাইক দাঁড় করায়। আর একটু হলেই তো আমি পরে যেতাম

- পড়তে না। আমি আছি তো। অহনা I'm be serious.. plz ahona plz tell me will you love me? Plz believe me I love you... Plz answer me. আমি তোমার সাথে কোনো তামাশা করছি না অহনা। তোমায় কোনোদিন আমি অপমান ও করব না। গরীব , বড় লোক কারো মুখে লেখা থাকে না অহনা। প্লিজ আমার ইমোশন কে নিয়ে আর খেলা করো না। আমি কাল সারা রাত ঘুমোতে পারি নি। আয়ুশ এর চোখে জল। প্লিজ অহনা তুমি কি চাও প্লিজ বলো।

- আমি ও তোমায় খুব ভালোবেসে ফেলেছি আয়ুশ। খুব ভালোবেসে ফেলেছি। তোমায় আমি হারাতে চাই না আয়ুশ। কিন্তু সময় ভীষণ ভয় হচ্ছে, কোনো দিন যদি অর্থ , সম্পদ আমাদের মাঝে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়?

- কখনো হবে না অহনা। এই আমি তোমায় কথা দিলাম। সারাজীবন আমি তোমারই হয়ে থাকব।

অহনা সেই প্রথম কলেজ কেটে পার্কে গিয়েছিল আয়ুশ এর সাথে সময় কাটাতে। 

.............................


- রিচা, প্লিজ এখান থেকে চলো । আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে।

- আরে, এ. সি চলছে। চারদিকে এত খোলামেলা। প্লিজ আর একটু ওয়েট করো। আমার এখন ও অনেক শপিং করা বাকি। এখনো তোমার জন্য কয়েকটা শার্ট দুটো জিনস কিনবো।

- প্লিজ ...রিচা প্লিজ তোমার কথা রাখতে কলেজ ফাঁকি দিয়ে আমি এতদূর এসেছি। কিন্তু আমি তোমার থেকে কিছু নিতে পারবো না। আমি আগে জানলে আসতাম ই না। বড় দিদি জানতে পারলে খুব বকবে আমায়। 

- ওহ ! তোমার বড়দিদি তো আর তোমায় এখানে খুঁজতে আসবে না। তুমি যে ড্রেস গুলো পরো সপ্তক সে গুলো একদমই ব্যাকডেটেড। তুমি এত হ্যান্ডসাম। কিন্তু তোমার কোনো ড্রেসিং চয়েস ই নেই। তাই আমি ই দায়িত্ব নিয়ে তোমায় ড্রেস কিনে দেব।।

- না রিচা। এতদিন আমার বড়দিদি ই আমার সব ড্রেস কিনে দিয়েছে। আর এই গুলোই আমার পছন্দ। আমার কোনো হাল - ফ্যাশন এর জামার দরকার নেই। এই ভাবে যদি তুমি আমাকে মেনে নিতে পারো তাহলে থাকো। নাহলে আমার জীবন থেকে সরে যেতে পারো। আমি কারো জন্য আমার বড়দিদির রুচি, সংস্কার, আদশকে অসম্মান করতে পারবো না।

সপ্তক রিচাকে একা রেখেই দ্রুত শপিং মল থেকে বেরিয়ে পরে।

রিচা বেশ অসুন্তুষ্ট হয়। সপ্তক বাড়ি ফেরার সময় অহনাকে আয়ুশ এর বাইকে ফিরতে দেখে। কিন্তু ও রাস্তায় অহনাকে ডাকে না। বাড়ি ফিরে সপ্তক আগে অহনার খোঁজ নেয়।

- বড়দিদি, অহনা ফিরেছে কলেজ থেকে?

- কেন রে... আজ বাড়ি ঢুকেই অহনার খোঁজ লড়াই করতে করতে তো কলেজ বেরোলি দুটোতে তা এখনো লড়াই টা বাকি আছে নাকি ?

- উফফ! দিদি বলো না ও এসেছে কি না?

জুঁই দেখলো সপ্তক এর চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ভাব। হ্যা ফিরেছে আধা ঘন্টা আগে। স্নানে গেছে। কেন কি হয়েছে রে?

সপ্তক এখুনি জুঁই কে কিছু বলতে চাইছিল না। কিন্তু জুঁই সপ্তক এর হাত টা জুঁই এর মাথায় রেখে বলল,কি হয়েছে বলে সপ্তক। আমায় আর চিন্তার মধ্যে রাখিস না।


চলবে 

ছবি : সংগৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ