সন্মান পর্ব ৪( Bangla golpo | Bengali story)

 

Sonman part 4 Bengali story Bangla golpo


সারাদিন অহনা ক্লাসে মন দিতে পারল না। বার বার তার স্যূষ এর কথা মনে পড়ছিল।  আয়ুশ কে প্রত্যাখ্যান করে সে নিজে দগ্ধে দগ্ধে মরছে। কারণ অহনাও মনে মনে আয়ুশ কে ভালোবেসে ফেলেছে। 


আজকাল সপ্তক এর ও কোনো কিছুতে মন বসতে চায় না। নিজেকে কেমন জানি একটা অসহায় মনে হতে থাকে। আচ্ছা, রিচা কি সত্যিই আমায় ভালোবাসে ! নাকি বড়লোক দের মেয়েরা ঐরকম ই হয় দুদিন ভালোবাসা দেখালো তারপর আর মন উঠে গেলে আর ফিরেও চাইবে না। আজ দুদিন হয়ে গেল সপ্তক কলেজে গিয়ে রিচা কে দেখতে পায় নি। কি হলো টা কি মেয়েটার শরীর ঠিক আছে তো রিচার! সেদিন যেন বড্ড বেশি রূঢ় ভাবে ব্যবহার করে ফেলেছি। কলেজে এসেও সপ্তক একদন্ড শান্তি পেল না। তার অস্থির দুটো চোখ রিচাকে খুঁজছিল। যে সপ্তক রিচাকে চোখের সামনে দেখলে বিরক্তি প্রকাশ করত আজ সেই রিচাকে এক পলক দেখবার জন্যই মনটা বড় অস্থির করছে। এইরকম কেন হচ্ছে ! সপ্তক নিজেই ভাবতে থাকে। ও ক্যান্টিনে এসে একটা ডিম পাউরুটি অর্ডার দিয়ে অন্য মনস্ক ভাবে বসে পড়লো।  তাহলে কি ......তাহলে কি আমিও রিচাকে ভালোবেসে ফেলেছি!  ভাবা মাত্ররই পাউরুটি টা মুখে দিয়েই সে খুব কাশতে থাকলো। বেশ জোর বিষম খেয়ে গেছে! হটাৎ কে যেন পিঠে আলতো করে চাপড়ে মাথায় তিন বার ফুঁ দিল। তারপর বোতল এর ছিপিটা খুলে তার মুখের সামনে দিল। সপ্তক চোখ তুলে দেখলো রিচা। সপ্তক চমকে গিয়ে উঠে দাঁড়ালো। 


Sonman part -4 | Bengali story | Bangla golpo 



- কি হলো সপ্তক? বোতল টা কি আমার বলে আই মিন বড়লোক দের বোতলের জল বলে এটা কি খাওয়া যাবে না। আমি যতদূর জানি জল এর কোনো জাত- ধর্ম কিছু নেই। প্লিজ জল টা খাও সপ্তক।

সপ্তক কিছুটা জল খেয়ে রিচাকে ফেরত দিল বোতল টা। 

জল টা খাওয়ার পর সপ্তক একটু ধাতস্থ হলো। 

- কি হলো , একা একাই খেয়ে নেবে? এটলিস্ট মুখের খাতিরে বসতে পর্যন্ত ও তো বলতে পারো।

সপ্তক এর তেমন কোনো বান্ধবী নেই। ও বাইরে একটু লাজুক প্রকৃতির। তাই রিচাকে নম্র ভাবেই বললো বসো।

- বাবা! ছেলের এতদিনে বুলি ফুটেছে মুখে। আচ্ছা আমি দুদিন ধরে দেখছি তোমায় কেমন কেমন জানি লাগছে, তুমি কলেজে এসে এদিক ঐদিক কি দেখছো? আমায় খুঁজছিলে নাকি?

- কই ......কই নাতো...আমি তোমায় খুঁজতে যাবো কেন। 

- তুমি নিজের মনকে একবার জিজ্ঞাসা  করে দেখো তো আমায় খুঁজছিলে কি না.... আমায় তো তোমার সহ্য হয় না। ভালো লাগে না। সামনে থাকলে তোমার বিরক্তি লাগে। আমি তো এই দুদিন তোমার আড়ালেই ছিলাম। আড়ালে থেকেই তোমায় ফলো করছিলাম। কিন্তু দেখলাম এই দুদিন এও তুমি শান্তিতে থাকতে পারো নি। প্লিজ সপ্তক প্লিজ নিজের মনের কথাটা বলে দাও না.... কেন আমায় এই ভাবে কষ্ট দিচ্ছ আর নিজেও কষ্ট পাচ্ছ বলতো?

( রিচা সপ্তক এর হাত দুটো চেপে ধরলো) ।

আজ আর সপ্তক তাকে বাধা দিল না। রিচা বললো, আই লাভ  ইউ সপ্তক । সপ্তক ও বলল, লাভ ইউ টু রিচা। 

এই ভাবে সপ্তক আর রিচার জীবনের একটা নতুন অধ্যায় শুরু হলো। 



Sonman part -4 | Bengali story | Bangla golpo 




................................

আজ অনিক এর ডব্লিউ বি সি এস পরীক্ষা। বেরোনোর সময় অনিক দিদিকে প্রণাম করতে গেল। জুঁই তখন ও রান্না ঘরে কাজে ব্যস্ত। অনিক এর ডাকে তড়িঘড়ি বাইরে বেরোলো।

- কি রে কিছু বলবি অনিক? সব ঠিক ঠাক গুছিয়ে নিয়েছিস তো? Admit card নিয়েছিস?

- হ্যা দিদি সবকিছুই ঠিকঠাক নিয়েছি। তোকে প্রণাম করতে এলাম। 

- আগে ঠাকুর প্রণাম করেছিস? 

- তুই আর বাবাই তো আমার ভগবান রে দিদি। তোদের আশীর্বাদ পেলেই আমি ঠিক পাশ করে যাব।

- একদম বাজে বকবি না। যা ঠাকুর ঘরে প্রণাম করে এসে বাবা কে প্রণাম করে আয়।

- ওহ! বাবা এখনো কাজে বেরোয় নি? আমি ভাবলাম বাবা বেরিয়ে গেছে।

- না রে.... আজ তো তোর পরীক্ষা । তাই বাবা একটু বেশি ই উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। যা গিয়ে দেখা করে আয়। মানুষ টা মনে শান্তি পাবে।

ঠাকুর ঘরে প্রণাম করে এসে অনিক বাবার ঘরে ঢুকলো।

- বাবা, আসবো?

- আয়, অনিক আয়। ঘরে আয়। 

অনিক ঘরে ঢুকে মৃনাল বাবুকে প্রণাম করল।

- থাক বাবা... থাক । ভালো করে পরিক্ষা দিস বাবা। তোকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন, এই পরিবারটার অনেক দায়িত্ব তোর ওপর। 

- একি বাবা... তোমার চোখে জল...

- জল নয় রে বাবা.... ও কিছু নয়। তুই সকাল সকাল বেরিয়ে পড়। নাহলে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে পারবি না।

অনিক বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে দিদি কে প্রণাম করে বেরিয়ে পড়ল।


.....................................


Sonman part -4 | Bengali story | Bangla golpo 




অনিক পরীক্ষা দিতে চলে গেল। সপ্তক আর অহনাও খেয়ে কলেজ চলে গেছে। সবাই খেয়ে বেরোয় বলে, সকাল সকাল ই জুঁই এর হেঁশেল এর সব কাজ হয়ে যায়। ও দাওয়ায় বসে, পরের দিনের রান্না হওয়া চাল এর কাকর বাচছিল। শুধু অনিক এর  পরীক্ষা ছিল বলে মৃনাল বাবুর মনটা বড় বেশি অস্থির হচ্ছিল তাই উনি বাড়িতেই ছিলেন। ঠিক করে রেখেছিলেন একটু দেরিতে অফিস যাবেন। 

এমন সময় সদর দরজা ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজ এ জুঁই চালের থালাটা দাওয়ায় বসিয়ে কৌতূহলি হয়ে দরজা খুলল, 

জুঁই খুব অবাক হয়ে গেল। বিকাশ আর ও মা আর সাথে ক্যাবলা এসেছে। জুঁই প্রথমে নিজের চোখ কেই বিশ্বাস করতে পারছিল না। এমন অসময়ে না জানিয়েই এনাদের আগমন সত্যিই জুঁই কে বড্ড ভাবিয়ে তুললো। জুঁই সদর দরজা খুলে আনমনে দাঁড়িয়েই রইলো।

- কি হলো আমাদের ভিতরে আস্তে বলবে না জুঁই?

- বিকাশের  কথায় চমকে গিয়ে জুঁই বললো, অবশ্যই আসুন সকলে। জুঁই সকলকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। বিকাশ এর মা অঞ্জু দেবী ই জুঁই আর বিকাশ এর ব্যাপারটা পুরোটা খুলে বলে মৃনাল বাবুকে। কিন্তু সব কিছু শুনে মৃনাল বাবু বলেন, আমরা নিম্ন মধ্যবিত্ত। আপনারা অনেক বড়লোক। আপনাদের সাথে কি আমাদের খাপ খাবে! তাছাড়া আমার এখন যা অবস্থা আমার পক্ষে এখনই বিয়ে দেওয়ার মতো সামর্থ নেই। আমায় কয়েকটা মাস সময় দিতে হবে। 

- অঞ্জু দেবী বললেন, এতদিন যখন অপেক্ষা করতে পেরেছি আর এই কটা দিন অপেক্ষা করতে পারবো না! ঠিক পারবো। আর জুঁই কে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আপনার যেমন সামর্থ্য তেমন ভাবেই মেয়ের বিয়ে দেবেন। আমার কিছুই দাবি নেই। আমি শুধু আমার বৌমা কে আমার ঘরে নিয়ে যেতে চাই। 

ক্যাবলার জুঁই দের বাড়ি ঘর অবস্থা দেখে একদম পছন্দ হলো না। বিকাশ বাবু কিনা রায় টেক্সটাইল এর হবু মালিক। সেই বাড়ির বউ হয়ে যাবে এই ছা পোষা ঘরের মেয়ে। ক্যাবলা মনে মনে ফন্দি বাঁধতে থাকলো। 


চলবে....


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ