রূপকথার গল্প ( rupkothar golpo/ fairy tale)
মহিমপুর নামে একটি গ্রাম ছিল। সেই গ্রামেই মামনি ওর বৃদ্ধা ঠাকুমার সাথে বসবাস করত। মামনি মা, বাবা ছিল না। ওর যখন অনেক কম বয়স তখনই ওরা অসুস্থ হয়ে মাস তিনেক এর ব্যবধান এই মারা যায়। মামনির ঠাকুমা খুব ভালোবাসতেন মামনিকে। তখনকার দিনে মেয়ে দের এত পড়াশোনার চল ছিল না। কিন্তু মামনিকে ওর ঠাকুমা পড়াশোনা শিখিয়েছিলেন। কিন্তু ঐ গ্রামের আসে পাশে কাছাকাছি কোনো কলেজ ছিল না। তাছাড়া তখন যাতায়াত ব্যবস্থাও ওতো উন্নত ছিল না। তাই মামনির কলেজ পরে ওঠা হয় নি। তবে মহিমপুর গ্রামের মামনি ই ছিল প্রথম মেয়ে যে সফল ভাবে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছিল। মামনির ঠাকুমা অনেক কষ্ট করে মামনিকে বড় করে তুলেছেন। বন- জঙ্গলে কাঠ কেটে বিক্রি করে, বাড়িতে গরু, ছাগল পুষে তার দুধ বেঁচে, ঘুটে বিক্রি করে। মামনিকে ওর ঠাকুমা সন্তান স্নেহে আগলে রেখেছিলেন ঠাকুমার কাছে মামনি ই ছিল সাত রাজার এক ধন । মামনি ই ছিল ঠাকুমার মেয়ে আবার ছেলেও। ঠাকুমা আদি কালের মানুষ হলেও ছেলে মেয়ের মধ্যে কোনোদিন বিভেদ করেন নি। মামনিকে তিনি সব দিক থেকেই স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। আর মামনিও যেন সবসময় তার ঠাকুমা কে চোখে হারায়। ঠাকুমা অন্ত প্রাণ মামনি। স্কুল থেকে ফিরে এসে ঠাকুমা কে না খুঁজে পেলে সারা গ্রাম মাথায় করে ফেলত মামনি। সেই মামনি আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। ঠাকুমারও যথেষ্ট বয়স হয়েছে এখন আর উনি আগের মতো কাজ করতে পারেন না। বয়স এর জন্য বনে জঙ্গলে ঢুকে কাঠ কুড়োতেও যেতে পারেন না। তাছাড়া মামনি ছাড়েও না । বাড়িতে ঠাকুমার যা গরু, ছাগল ছিল তাও বিক্রি করে দেয়। কারণ গরু ছাগল পুষলে খাটুনি অনেক হয়। মামনি দের তিন বিঘে মতো জমি ছিল। ওটাই ওরা ভাগ এ দিয়ে চাষ করায়। তা থেকে যে আয় হয় তা দিয়েই মামনি আর ওর ঠাকুমার দিব্বি চলে যায়। মামনি এখন গ্রামের পাঠশালায় ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা শেখায়।
( Rupkothar golpo/ রূপকথার গল্প)
এমনি একদিন মামনি পড়িয়ে বাড়ি ফিরছিল। এমন সময় পাড়ার মোড়ল মশাই পাশের মুদি খানা দোকান থেকে হাকার দেয়, - মামনি যাস নাকি?
- হ্যা মোড়ল জেঠু। নম্র গলায় মামনি বলল।
- তা বটে। কাল সকালে আমার বাড়ি তোর আর তোর ঠাকুমার নিমন্ত্রণ আছে বটে। কাল আমার নতুন বাড়ি টার গৃহপ্রবেশ তো তাই জন্য।
মামনি হাসি মুখে যাওয়ার সম্মতি জানিয়ে আবার হাটা শুরু করলো বাড়ির দিকে।
- ঠাকুমা, ও ঠাকুমা, ঠাকুমা....
বেশ কয়েকবার সাড়া না পেয়ে মামনি চিন্তিত হয়ে কাঁধ ত্থেকে ব্যাগ খানি দোয়ার এ রেখে বাইরের দিক টা খুঁজতে বেরোলো।
ওদের বাড়ির সামনেটায় একটি বড় বট গাছ আছে। ওই গাছের তলায় একটা মাচা আছে। ওখানে গরমের দিনে পাড়ার সকল ছোরা, বুড়ো এসে জিরোয়। কিন্তু ওই মাচাতেও কাউকে মামনি দেখতে পেল না যে তার ঠাকুমার খোঁজ দিতে পারবে। মামনির ঠাকুমাকে নিয়ে মাথায় কু- চিন্তা ঘুর পাক খেতে থাকলো। এই হলো মামনির বদ অভ্যাস। একটু খানি ঠাকুমা চোখের আড়াল হলেই ও ভয়ে মূর্ছা যায় এমন অবস্থা। মামনি হনহন করে হাট তে হাঁটতে দেখলো সামনে পচা, ট্যাপা, খেনতি খেলছে। ওদের কে ও হাপাতে হাপাতে জিজ্ঞাসা করলো- ওই কিরে তোরা আমার ঠাকুমা কে দেখেছিস?
ট্যাপা হাত দেখিয়ে ইঙ্গিত দিল ঘরই তলার দিকে যেতে দেখেছে। ঘরই তলাটা মামনি দের গ্রামের প্রায় শেষের দিকে। মামনি আবার ঠাকুমা ডাক হাকতে হাকতে সামনের দিকে এগিয়ে চললো।
অবশেষে ঘরই তলার কাছে একটি আমগাছের তলায় সে ঠাকুমা কে দেখতো পেল। বুড়ি সেথায় মনের সুখে কাঁচা আম কুড়োচ্ছে।
- ঠাকুমা....
মামনির চিৎকারে বুড়ি আম কুড়োতে কুড়োতে ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরে চাইলো। মুখে একচিলতে হাসি।
- তুমি এখানে আর আমি তোমায় সারা পাড়া খুঁজে বেড়াচ্ছি।
- ওমা, তাই নাকি... আচ্ছা চল... ঘর চল। আর এই নে, আম গুলো নিয়ে চল।
এই বলে ঠাকুমা কোঁচর খুলে বেশ অনেক গুলো আম মামনিকে দিল।
- তোমায় কতবার না বলেছি তোমার বয়স হয়েছে। হুট হাট করে কোথাও যাবে না। আমার একটা কথাও শোনো না তুমি। নিজের কথা মতো চল। বিরক্তি মেশানো গলায় মামনির গলা থেকে বেরিয়ে এলো।
আবার খানিকটা হেসে ঠাকুমা বললো তোর জন্য আম কুড়োতে আসলাম। তুই গরমে তেতে পুড়ে আসিস। ভাবলাম একটু আম পুড়িয়ে শরবত করে দেব। দেখবি খুব ভালো লাগবে তোর খেতে।
- আচ্ছা, সে হবেক্ষন। তুমি আগে আমায় কথা দাও তুমি এইরকম হুটহাট করে এইদিক ঐদিকে আর বেরিয়ে পড়বে না। আমার খুব চিন্তা হয় ঠাকুমা। জানো তো তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে বলো তো?
চলবে ...
আগামী কালই শেষ পর্ব পোস্ট করবো। সাথে থাকুন।
0 মন্তব্যসমূহ