সুখী পরিবার ( রূপকথার গল্প/ ছোটদের গল্প)

 গল্প যেমনই হোক , ছোট দের কিংবা বড় দের আমরা সব রকম গল্পই পড়তে ভালোবাসি। তাই তো রূপকথার গল্প আজ ও আমাদের বড় দের হৃদয় এও সমান ভাবে সমাদৃত। গোপাল  ভাড় এর গল্পগুলো ও বিশেষ ভাবে আমাদের নজর কাড়ে। আজ কে আমি লিখতে চলেছি তেমন ই একটি মন ভালো করে দেওয়ার মত গল্প। চলুন তাহলে শুরু করে দেওয়া যাক। 


Rup kothar story

রূপকথার গল্প/ ছোটদের গল্প ( rupkothar golpo)

সুখী পরিবার



অনেক দিন আগের কথা। একটি গ্রামে পলাশ নামে একজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি তার বউ উমা ও তার একমাত্র সন্তান নয়ন  কে নিয়ে থাকতেন। গ্রামটিতে জনসংখ্যা ছিল বেশ চোখে পড়ার মতো। পলাশ এর গ্রামের ই শেষ দিকে একটি কারখানা য় কাজ করতেন। রোজগার ও মোটামুটি ভালোই ছিল। তখনকার দিনে এখনকার মত এত মানুষের চাহিদা ছিল না। তাই ওই বেতন এই সংসার টা বেশ ভালো ভাবে কেটে যেত। পলাশ এর সংসার টা ছিল খুবই সুখী পরিবার। পলাশ এর বউ উমাও ছিল খুব গুণবতী, ঠান্ডা, নম্র স্বভাবের। আর তাদের একরত্তি তিন বছরের নয়ন ছিল ভীষণ দুস্টু, ছটফটে। উমার সারাদিন সংসারের কাজ করতে করতে ও নয়ন এর দেখভাল করতে করতেই সময় চলে যেত।

Fairy tale story

রূপকথার গল্প / পারিবারিক গল্প ( fairy tale)

একদিন পলাশ কারখানা থেকে ফিরে বাইরের দাওয়ায় বসলো। তখন গরম কাল। উমা তখন বাইরের রান্না চালাটায় রান্না করছিল। নয়ন কয়েকটি খেলনা বাটি নিয়ে খেলছিল। এমন সময়- কয় গো নয়ন এর মা এক গ্লাস জল আন দিকি নি। পিপাসায় গলা শুকিয়ে গেল যে....

পলাশ এর গলা হাকারীতে উমা রান্না করতে করতে ধরমরিয়ে উঠলো। তরকারিতে জল টুকু দিয়ে ঢাকা দিয়েই উমা তড়িঘড়ি এক গ্লাস জল নিয়ে হাজির হলো।

গোল গোল চোখ করে কৌতুহল নিয়ে উমা জিজ্ঞাসা করলো পলাশ কে - কিগা, তুমার শরীর ঠিক আইছে তো? জ্বর - টর কিছুটি আশেক লাই তো?

এক গ্লাস জল এক নিঃশ্বাসে সাবার করে পলাশ কইলো, না গো। আমি ঠিক আছি।

- তবে এত তাড়াতাড়ি চলে আইলে যে বড়?

- তাড়াতাড়িই বটে। আজ মাইনের দিন তো। মনিব মাইনে পত্র দিয়ে আজ তাড়াতাড়ি ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন। কাল ভোর ভোর কাজে চলে যেতে বলেছে। 

- তা বেশ। হাত, পা মুখ ধুইয়া লও। আমি ভাত আনতেছি। 

উমা ভাত আনতে যাচ্ছিল। আবার ঘুরে এসে পলাশ কে বলল, কই গো নয়ন এর বাবা শুনতেছ?

- হা কও।

- একটা সুখবর আইছে!

- কি সুখবর? 

- তুমার বোন মানে আমার ননদিনী মা হতে চলেছে। আজই চিঠিটা এসেছে। তুমি আশা পযন্ত আমি মনকে ঠিক রাখতে পারি নাই। পাড়ার গোসাই বাবুকে দিয়ে চিঠি খান পইরেছিলুম। সামনে রবিবার স্বাদ বটে। 

বউ এর মুখে সুখবরটা শুনে পলাশ এর মুখ টা আনন্দে চিকচিক করে উঠলো।

- তাই লয় কি? এত তো খুব ভালো খবর খুব ভালো খবর। কই চিঠি খান আগে আন দেখি। পড়ি। কি কি লেখা আছে দেখি।

- হ্যা আনতেছি।

উমা ঘরে ঢুকলো চিঠি খানা আনতে। নয়ন এতক্ষন খেলছিল। বাবা কে দেখতে পেয়ে ছুটে এসে বাবার কোলে এসে বসলো।


আসলে সেই সময় ফোন এর অত চল ছিল না। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অত উন্নত ছিল না। আর পলাশ এর বোন শোভার বিয়েও হয়েছিল অনেকটা দূরে। তাই যোগাযোগ খুব কম ই হত। 



চিঠি খান পরে পলাশ এর মনটা খুশিতে ভোরে গেল। চিঠি টা পড়ে ভাঁজ করে রাখতে রাখতে পলাশ বললো, আমার একরত্তি বাপ- মা মরা বোনটিকে আমি ই তো মানুষ করে ছিলাম। আজ সে গুছিয়ে সংসার করছে। স্বামীকে রোজগার করতে  সাহায্য করছে। আবার এখন মা ও হবে। আমি দূর থেকেই ওকে এখনই আশীর্বাদ করি ও আর ওর বাচ্ছা যেন ভালো থাকে। সুস্থ থাকে। 


- হম। কিন্তু ওরা তো আমাদের ওখানে যেতে কোয়েছে মুদের।  আইছে  রবিবার স্বাদ তো। আমরা যামু না ওখানে? আবার আমরা হলুম গিয়ে ওর বাপ ঘরের লোক। মুই দের তো যাওয়া দরকার লয় কি ? এমনিতেই কোথাও যাওয়া হয় না। নয়ন টারে নিয়ে কোথাও ঘোরান নিয়ে যেতে পারি নাই। চলো শোভার ঘর যাই।


- হ্যা, যাইব তো বটেই।

উমার ও মনটা খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো।

- শুধু যাইলেই হৈলো না। সাথে করে দামি তাঁতের কাপড়, নয় রকম মিষ্টি, দই,মাছ , মুড়কি, চিড়ে এই সব নিয়ে যেতে হইব। শোভার ও তো শশুর, শাশুড়ি কেউ লাই। আমি ই ওকে স্বাদ দেব। নয়নের বাবা শুনছো , তুমি সব গুছিয়ে কেনা কাটা গুলো সেরে রেখো। আইছে রবিবার তাহলে আমরা রওদুল পুর এ শোভার বাড়ি যাব। 

- না গো নয়নের মা আগের দিনই বেরিয়ে পড়বো। দিনের দিন গেলে তো পৌঁছাতে দেরি হবে। আমি আজি খেয়ে গিয়ে গরুর গাড়ি ঠিক করে আসছি। খেতে দাও এখন।

 নয়নকে কোলে করে নিয়ে উমা ভাত বাড়তে গেল।



যথারিতি পলাশ তার বউ উমা ও ছেলে নয়নকে নিয়ে শনিবার ভোরেই  রওনা দিল রওদুল পুরের উদ্যেশে।সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধেয় হয়ে এলো। এতদিন পর দাদা, বৌদি, ভাইপো কে দেখে শোভার চোখে আনন্দে জল চলে এলো। দাদা বৌদি কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকলো। এতদিন পর ননদিনী কে মনে পড়লো বুঝি... মনের সব অভিমান উগরে দিল শোভা। একরত্তি ভাইপো কে আদর করে আবেশ মাখা গলায় বলল আমার ছোট্ট ভাইপো টাই কত বড় হয়ে গেছে। কোলে নিতে যাচ্ছিল শোভা নয়নকে।

আরে, আরে করো কি... তুমার সময়ে ভরা পেটে বাচ্ছা কোলে নেওয়া উচিত হইব না।

দুপক্ষের কুশল বিনিময় এর পলাশ বললো আচ্ছা রমেশ কে তো দেখছি না। 

রমেশ হলো শোভার বর। 

ও তো সিঙ্গারা বেচতে গেছে হাটে। আজ তো হাট বার। আজ দু- তিনটে গ্রাম থেকে লোকে হাটে আসে। আজ একটু বেশি বেচা কেনা হয়। তাই ওর আজকের দিনে ঘরে ফিরতে সন্ধে হয়ে যায়। জানোই তো দাদা সিঙ্গারা বিক্রি করেই আমরা সংসার চালাই। দুটো পয়সা বেশির জন্য একটু বেশি ই খাটতে হয় এই আর কি। সপ্তাহে রোজ ওই পাড়ার শিমুল গাছটার নীচে সাইকেলে করে গিয়ে সিঙ্গারা বেঁচে ও। আজ শুধু হাটে যায়। গ্রামে লোকবসতি কম কে রোজ রোজ সিঙ্গারা কিনে খাবে? আমি সকাল বেলা সিঙ্গারা গড়ে দিই। আর ও গিয়ে বিক্রি করে দিয়ে আসে। 

Fairy tale story

রূপকথার গল্প 

পলাশ ও উমা সব ই শুনলো শোভার কথা। শোভা এই অবস্থা তেও সিঙ্গারা ভেজে দেয়। তবে গিয়ে রমেশ বিক্রি করতে পারলে ওদের কয়টি টাকা রোজগার হবে। এই শুনে পলাশ এর মনটা খুব ই খারাপ হয়ে গেল। ওদের গল্পের মাঝখানে ইতিমধ্যেই রমেশ এসে উপস্থিত হয়েচে। সব শুনে পলাশ বললো , এক কাজ কর বোন। তোরা আমাদের সঙ্গে ই আমাদের ওখানে চল।

- কিন্তু দাদা আমার ব্যবসাটার কি হবে ....রমেশ প্রশ্নটা করে বসলো। 

- তোমাদের এখানে লোকবসতি কম রমেশ। তাই তোমার বিক্রি পাট্টাও কম হবে। তুমি আমাদের ওখানে এই ব্যবসা টা করবে। দেখবে তুমি অনেক বেশি লাভবান হবে। আমি যে কারখানায় কাজ করি ওই কারখানার সামনে সিঙ্গারা বিক্রি করবে। দেখবে তোমার ভালো বিক্রি হবে।

রমেশ প্রথমে একটু দোটানায় পড়েছিল। নিজের জন্মভিটে ছেড়ে যেতে কার ই বা মন চায়? তবু ব্যবসার জন্য রমেশ সায়  দেয়।


পরের দিন অর্থাৎ রবিবার বেশ আরোম্ভর করেই উমা স্বাদ দিল শোভার। সুন্দর করে পায়ে আলতা পরিয়ে দিল। তাঁতের কাপড় পরিয়ে দিল। ঘরোয়া ভাবেই বেশ আন্তরিকতা র সাথে শোভার স্বাদ সম্পন্ন হলো।

পরের দিন ওরা সবাই মিলে রওনা দিল পলাশ দের গ্রামে । কিন্তু রমেশ ছিল খুবই চরিত্রবান, সভ্য ছেলে ও আত্মসম্মান ছিল ওর মধ্যে ভরপুর। ও কিছুতেই পলাশের বাড়ি থাকতে চাইল না। অগত্যা পলাশ দের বাড়ির পাশে একটা ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে রমেশ ও শোভা ওখানে থাকতে শুরু করলো।

পরের দিন থেকেই কথা মত রমেশ পলাশের কথা মত ওদের কারখানার পাশে সিঙ্গারা বিক্রি করতে বসলো। সত্যি ই ওদের গ্রামের তুলনায় অনেক বেশি সিঙ্গারা বিক্রি হলো। রমেশ ও শোভা খুব খুশি হলো। তবে এখন শোভা একা নয়,   সিংড়ারা ভাজার কাজে পলাশের বউ উমা সাহায্য করতে লাগলো । ধীরে ধীরে রমেশ এর ব্যবসার উন্নতি হতে শুরু করলো। ইতি মধ্যে রমেশ এর ছেলেও হয়ে গেল। তারা পাকাপাকি ভাবে এখানেই বসবাস করতে থাকলো। দুটি পরিবার বেশ সুখেই ছিল। 

এরপর কেটে গেছে অনেক গুলো বছর। এখন রমেশ সাইকেল নিয়ে আর সিঙ্গারা বেচতে যায় না। ও কারখানার পাশে বড় সিঙ্গারা র স্টল দিয়েছে। চার- পাঁচ জন কর্মচারী ওখানে কাজ করে। বেশ অনেক টাকার ই ব্যবসা চলে দিনে। কষ্টের সংসারে আজ কোনো অভাব নেই রমেশ এর। বরাবরই অভাব নেই পলাশ এর সংসারের এও। পলাশ এখন ওই কারখানরই ম্যানেজার পোস্টে কাজ করছে। দুজন এরই ছেলেরা হেসে খেলে এক সাথে বড় হচ্ছে। ননদ ভাজে পাশাপাশি থেকে মিলেমিশে ঘর সংসার করছে। একজনের দায় বিপদে অন্যজন ঝাঁপিয়ে পড়ছে। একসঙ্গে আনন্দে সামিল হচ্ছে। এই ভাবেই দুটি পরিবার সুখে দুঃখে পাশাপাশি আছে। 


সমাপ্ত

ছবি : সংগৃহীত







 





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ