Rupkotha...Fairy tale ( রূপ কথার গল্প) / ছোট দের গল্প
আচ্ছা, সে হবেক্ষন। তুমি আগে আমায় কথা দাও তুমি এইরকম হুটহাট করে এইদিক ঐদিকে আর বেরিয়ে পড়বে না। আমার খুব চিন্তা হয় ঠাকুমা। জানো তো তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে বলো তো?
নাতনির কথার রেশ টেনে ঠাকুমা আলগা হেসে বললেন, আমি শীঘ্রই তার একটা ব্যবস্থা করবো বুঝলি পাগলী।
ভ্রু জোড়া কুচকিয়ে মামনি প্রশ্ন করলো কিসের ব্যবস্থা ঠাকুমা?
কোনো রকম ভনিতা না করেই গুটি গুটি পায়ে চলতে চলতে আসল কথাটা পারলো ঠাকুমা।
- বলি ও মামনি সারাজীবনই কি তোর এই ঠাকুমা বেঁচে থাকবে? একটা সুপাত্র এর হাতে তোকে তুলে দিতে পারলে যে আমি নিশ্চিন্তি। বড় চিন্তা হয় মনে আমার যদি হুট করে ভালো মন্দ কিছু একটা ঘটে যায় তোর কি হবে বলতো ? দিন কাল তো আর ভালো ঠেকছে না।
তুমি এই রকম অলুক্ষনে কথা একদম বলবে না বলে দিচ্ছি ঠাকুমা। তাহলে দেখো আমার যে দিকে দু চোখ যায় আমি চলে যাব।
রূপকথার গল্প/ বাংলা গল্প/ rupkothar golpo
- আমি জানি রে পাগলী এই বুড়ি কে ছেড়ে তুই কোথাও যাবি না। এ আমি নিশ্চিত। তাই তো এক বারখানটি আম কুড়োতে এসেছি অমনি ঠাকুমা ঠাকুমা করে পাড়া মাথায় তুলে ফেলেছিস।
অনেক হয়েছে ঠাকুমা। এবার একটু এই দাওয়ায় বসো তো। আমি তোমার জন্য জল নিয়ে আসি।
ঠাকুমা নাতনি তে বাড়ি আসতেই নাতনি ঠাকুমার জন্য জল আনতে গেল।
ওরে তুই তো তেতে পুড়ে চেঁচিয়ে পড়িয়ে বাড়ি ফিরলি, কোথায় আমি তোকে একটু আম এর শরবত খাওয়াব....
ও খাবো খনি পরে। এই নাও জল টা খাও। আর হ্যা শোনো আর কোনোদিন এই রোদে রোদে বেরিয়ে তুমি আম কুড়োতে যাবে না। তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।
ঠাকুমা ও নাতনির কথোপকথন এর মাঝে একটি ডাক কানে এলো।
কই রে দুগ্গা ঘর আছিস না কি ?
মামনির ঠাকুমার নাম দুগ্গা। মামনি ছুটে গিয়ে সদর দরজাটা খুলে দেখলো খেনতি ঠাকুমা এসেছেন। এতদিন পর ঠাকুমা ওর সই খেনতি কে দেখে খুব আলোকিত হলো। মামনি খেনতি ঠাকুমা কে প্রণাম করল।
থাক থাক মা, আশীর্বাদ করি সুপুরুষ এর সাথে যেন বিয়ে হয়। সুখে ঘর সংসার করো।
-আয় ঘরে আয় সই। মামনি একটু জল, বাতাসার ব্যবস্থা কর তোর খেনতি ঠাকুমার জন্য।
লজ্জায় মামনি ওখান থেকে সরে রান্না ঘরে পৌঁছে পালিয়ে বাঁচলো।
জল , বাতাসা নিয়ে ঘরে ঢুকবে এমন সময় মামনির কানে এলো
- তা দুগ্গা, মেঘে মেঘে তো জল অনেক দূর গড়ালো। মানে বলছি কি যে মামনির তো বিয়ের বয়স হলো এবার ওকে পাত্রস্ত করতে হবে তো ?
-
মামনি নিঃশব্দে জল বাতাসা খেনতি ঠাকুমার হাতে দিয়ে একছুট্টে বেরিয়ে এলো।
(রূপকথার গল্প/ বাংলা গল্প/ rupkothar golpo)
হ্যা তা তো করতেই হবে। বাপ- মা মরা নাতনি আমার। ছোট থেকে তো আমি ই ওকে আগলে এত বড় করলাম। এবার শশুর ঘরে পাঠাতে হবে বইকি।
বাতাসা দুটো মুখে পুরে চিবোতে চিবোতে খেনতি ঠাকুমা একগাল হেসে বললো পাত্র আমার খুব চেনা। কলকাতায় ওকালতি করে। ওরা মেয়ে খুঁজছিল। আমি মামনির কথা বলেছি। ওরাও একটু লেখাপড়া জানা মেয়ে খুঁজছে। আমি মামনির কথা বলেছি। মামনি আমাদের রূপে গুনে অপরূপা। আমি নিশ্চিত এক দেখাতেই ওদের পছন্দ হয়ে যাবে।
দুগ্গা মুখ কাচুমাচু করে শুধলেন, তা না হয় বুঝলাম ভালো ছেলে , ভালো ঘর কিন্তু ওনারা কি এই অজ পাড়া গায়ে বিয়ে দিতে চাইবে।
- আমি সব কথা বলে কোয়েই তবে এখানে এসেছি দুগ্গা। ওরা রাজি আছে বলেই তো।
ও বেশ বেশ। তাহলে এখানে একদিন ডাকো ছেলে পক্ষকে।
- সেই কথাই তো বলতে এসেছি। তাহলে সামনের রবি বার আনছি।ওই কথাই রইলো। আজ বাড়ি যাই।
- ওকি খেনতি দুপুর এ এলি দুটো ভাত না খাইয়ে কি করে ছাড়ি তোকে বল। যা হয়েছে তাই দিয়েই খাবি।
- আচ্ছা, ঠিক আছে।
দুগ্গার পীড়াপীড়িতে খেনতি সেইদিন ওই বাড়িতে ই খেয়ে গেল।
Rupkothar golpo / রূপকথার গল্প/ ছোট গল্প/ মন ভালো করে দেওয়ার গল্প
এক বৈশাখের শুভ লগ্নে মামনির সাথে কলকাতা নিবাসী প্রণয় এর বিবাহ হয়। ঠাকুমা তার সামর্থের সব টুকু দিয়ে নাতনির বিবাহ দিলেন। এবং আশীর্বাদ করলেন ওরা যেন চির সুখী হয়।
তোমার কাছে আমার প্রথম থেকেই একটাই অনুরোধ ছিল। মামনির ধীর, স্থির, নম্র গলার স্বর শুনে প্রণয় কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলো কি অনুরোধ মামনি।
আমি তো তোমায় বলেছিলাম আমি ছাড়া ঠাকুমার কেউ নেই। ওনাকে আমাদের সাথে অষ্টমঙ্গলায় যাচ্ছি যখন এ বার এই নিয়ে চলে আসব।
- এতে আর বলার কি আছে মামনি? উনি নাহলে থাকবেনই বা কোথায় ? উনি আমাদের কলকাতায় এসে থাকবেন এত ভালো খবর।
মামনি আর প্রনয় কে অষ্টমঙ্গলায় আসতে দেখে ঠাকুমা খুব খুশি হলেন। প্রণয় ও মামনি কে জোড়ে দেখে বুড়ির চোখ যেন জুড়িয়ে গেল।
ঠাকুমা মামনির শত নিষেধ সত্ত্বেও কাঁপা কাঁপা হাতে কত কিছু নাত জামাই এর জন্য রাধলেন।
প্রণয় বেশ তৃপ্তি করে খেল। দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর থেকেই নাতনি ঠাকুমা একসঙ্গে বসে অনেক গল্প করলো। শশুর ঘরের সকলের কথা শুনে ঠাকুমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।
- এ মা! ঠাকুমা তুমি কেঁদো না। তোমায় আমরা কালই ওখানে আমাদের সাথে নিয়ে যাবো। দেখবে তোমার কত্ত ভালো লাগবে।
- তা কি হয় রে পাগলী। আমি হেথায় বেশ আছি। তোকে সব সময় আশীর্বাদ করি তুই সুখী হ। তোকে সৎ পাত্রের হাতে তুলে দেওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। এবার আমি মরলেও শান্তি।
- ঠাকুমা তোমায় কতবার ওই কথা বলতে বারণ করেছি বলো তো।
সিঁদুর এ রাঙা মামনির মুখ খানি একবার দু নয়ন ভোরে দেখে ঠাকুমা বললো আঁধার অনেক হল এবার শুবি চল।
পরদিন ভোর ভোর প্রণয়ের ঘুম ভাঙতেই ও মামনিকে ডেকে দেয়।
কয় গো উঠে পোড়। সকাল সকাল না বেরোলে কলকাতা পৌঁছাতে বেশ দেরি হয়ে যাবে। ঠাকুমা কেও তৈরি হয়ে নিতে বলো।
মামনি ধরমর করে উঠে বসলো। ঠাকুমার ঘরে ডাকতে গিয়ে দরজাটা একটু ঠেলতেই ওরা দেখলো দরজা খুলে গেল।
ও ঠাকুমা, ঠাকুমা.... মামনি বেশ আতঙ্কের সাথে বললো ঠাকুমা তো এতক্ষন ঘুমিয়ে থাকেন না। গায়ে হাত দিয়ে ডাকতেই মামনি অনুভব করলো ঠাকুমার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। মামনি ডুকরে কেঁদে উঠলেন ঠকাউ.....মা....
প্রণয় ওকে আস্বস্ত করার চেষ্টা করলো। কিন্তু মামনি র কান্না দেখে প্রণয় এর ও চোখে জল চিক চিক করতে লাগলো।
পাড়া প্রতিবেশী রা উপস্থিত সকলে। অনেকেই বলা কওয়া করছে। বুড়ির হলো সুখের মরণ। নাতনির ভালো জায়গায় ভালো ঘরে প্রতিষ্ঠিত ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে বুড়ি হাসতে হাসতে স্বর্গে গেল।
তারপর ঠাকুমার মুখেঅগ্নির ব্যবস্থা করা হলো। গ্রামের অনেকেই বললেন মামনি তো মেয়ে ও মুখে অগ্নি দিতে পারবে না। কিন্তু মামনি কাঁদতে কাঁদতে নিজের ভাব প্রকাশ করল, ঠাকুমা কোনোদিন ছেলে- মেয়ের মধ্যে বিভেদ দেখে নি। আমি ঠাকুমার থেকে সেই শিক্ষা পাই নি। ছেলে মেয়ে উভয়ই সমান। ঠাকুমা এতদিন আমায় কোলে পিঠে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন। যদি স্বর্গ বলে কিছু থাকে আমি চাই ঠাকুমা স্বর্গবাসী হন। এই বলে মামনি মুখেঅগ্নি দিল। প্রণয় ও মামনির সাথে ছিল। ঠাকুমার চিতার সামনে মামনি কাঁদতে কাঁদতে বললো তোমায় ছেড়ে কি করে থাকবো ঠাকুমা। খুব তাড়াতাড়ি অন্য রূপে আমার কাছে ফিরে এসো ঠাকুমা, ফিরে এসো।
সমাপ্ত
ছবি : সংগৃহীত
1 মন্তব্যসমূহ
FE23D8B3CB
উত্তরমুছুনkiralık hacker
hacker arıyorum
kiralık hacker
hacker arıyorum
belek