ব্রেকআপ এর ছয় বছর পর

 

Break up love story

ঘড়িতে তখন সন্ধে সাত টা ত্রিশ বাজে। এই সময় সুপ্রিয় র অফিসের ছুটি হয় প্রতিদিন। এই সময়টা ওর  মতো অনেক চাকুরিজীবী দেরই স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার সময়। আবার বাড়ি ফেরার তাড়াও থাকে খুব। তবে সুপ্রিয় ওর  বাড়ি ফেরার বিশেষ তাড়া থাকে না। কারণ মা গত হয়েছেন এক বছর হলো। বাবা মারা গেছেন ছোট বেলাতেই। একার নিঝঞ্ঝাট সংসার। রাস্তা ঘাটে দেরি হলে কেউ বলার ও নেই দেখারও নেই। তবে যে কাজের মাসীটা কাজ করে যায় সুপ্রিয়র বাড়ির সে মাঝে মাঝে সুপ্রিয় কে আলগা শাসন করে। যাই হোক প্রতিদিন এর মত আজ ও সুপ্রিয় অফিস থেকে বেরিয়ে একটি চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো। সঙ্গে সঙ্গে সুপ্রিয় ওর গন্তব্য গামী একটি বাস এসে দাড়ালো । এত ভিড় বাস টাতে সুপ্রিয় আর ওঠার চেষ্টা করলো না। ওর তো বাড়ি ফেরার তেমন তাড়া নেই। চুপচাপ দাঁড়িয়ে সুখটান দিতে থাকলো। অফিস কলিগদের ছুটি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কারো আর টিকিটি খুঁজে পাওয়া দায়। ভিড় বাসে, ট্রেনে ঝুলতে ঝুলতেই বাড়ি রওনা দেয়। তাদের পরিবার আছে। সদ্য বিবাহিতা বউ আছে, সন্তান আছে। দিন শেষে তাদের সাথে একটু সময় দিতে তাদেরও তো মন চায়। কিন্তু সুপ্রিয়র কেউ নেই। মা কে নিয়েই এই শহরে ছিল কাজের সূত্রে। কিন্তু গত এক বছর হলো মা ও মারা গেছেন। বিয়ে আর করা হয়ে ওঠে নি সুপ্রিয়র। 


নেক্সট বাসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সুপ্রিয় এক ভার চা খেতে থাকলো। দু চুমুক মুখে দিতেই দূর থেকে দেখতে পেল একটি বাস আসছে। মনের তৃপ্তি মনেতে রেখেই চো চো করে তিন ঢোকে চা টা খেয়েই ভার ফেলে সুপ্রিয় বাসে উঠে পড়ল। এই বাস টাও বেশ ভিড়। আসলে এই সময়টাতো অফিস টাইম। স্বভাবতই বেশ ভিড় হয় এই সময় টা। সুপ্রিয় বাসে উঠে বসার জায়গা পেল না। ঠেলা ঠেলি করে দাঁড়িয়েই যেতে হচ্ছে। এই সময় ওর মোবাইল টা বেজে উঠলো। এই সময় আবার কে ফোন করলো - ভ্রু কুঁচকে সুপ্রিয় ভাবতে লাগলো। ফোন টা প্যান্টের পকেটে ছিল। আর সুপ্রিয় ওর এক হাতে ছিল অফিস এর ব্যাগ। অন্য হাত দিয়ে বাসের ওপরের হাতল টা ধরে ছিল। তাই ওই মুহূর্তে ওর ফোন রিসিভ করা সম্ভব নয়। ফোন টা রিং হতে হতে কেটে গেল। আবার মিনিট পাঁচেক পর ফোন টা বেজে উঠলো। এবার সুপ্রিয় খুবই আশ্চর্য হয়ে গেল। কে বার বার ফোন করছে! এই দিকে রিসিভ করা তো দূরের কথা ফোন টা পকেট থেকে বের করে দেখার মতো পরিস্হিতি ও এখন নেই। যায় হোক ফোন টা দ্বিতীয় বারও বাজতে বাজতে কেটে গেল। সুপ্রিয়র কোনো উপায় ছিল না।অফিস থেকে বাসে করে সুপ্রিয়র বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় চল্লিশ মিনিট মতো লাগে । সন্ধের দিকে যেহেতু কলকাতার রাস্তা খুব ব্যস্ত থাকে তাই এই চল্লিশ মিনিট টাইম টা ই প্রায় এক ঘন্টার কাছাকাছি লেগে যায়। বাস থেকে নেমেই সুপ্রিয়র আর ফোন এর কথা মনে পরে নি। রুমে ঢুকতেই সুপ্রিয়র মনে পড়ে গেল। তাড়াতাড়ি ব্যাগ টা রেখে পকেট থেকে ফোনটা বের করে ই নম্বর টা দেখা মাত্রই সুপ্রিয় দারুন ভাবে চমকে গেল। নম্বর টা তার খুব কাছের একটি মানুষের নম্বর। কিন্তু এই নম্বর থেকে তো আর কোনোদিন কল আসা সম্ভবই নয়। তবে আজ হটাৎ.....

কি মনে হতে সুপ্রিয় হাত - পা ধুয়ে চটপট ফ্রেস হয়ে কল ব্যাক করলো। দু বার রিং হতেই ওপর প্রান্ত থেকে সেই পরিচিত মেয়েলি কণ্ঠস্বর টা শোনা গেল।

- হ্যালো..

বহুদিন পর সেই চেনা গলাটা শুনে সুপ্রিয়র বুকের ভিতর এ তোলপাড় শুরু করে দিল। ওর হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেল। কোনো ভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে ভাঙা ভাঙা গলায় প্রশ্নের বান করলো সুপ্রিয়

- এত দিন পর ফোন করলে? কেমন আছো ?

- ভালো । তুমি কেমন আছো সুপ্রিয়?

- এই ছয় বছর পর তোমার আমাকে মনে পড়লো রুবি ? কেমন আর থাকবো।  যেমন রেখে গিয়েছিলে তেমন ই আছি। আপনভোলা, অগোছালো....

- বিয়ে করেছো?

- না 

- কেন? 

- তেমন ভাবে কাউকে ভালোবাসতে পারবো না। অন্য কাউকে স্ত্রী এর মর্যাদা দিয়ে ঘরে এনে তাকে ভালো না বাসতে  পারলে তো তাকে অপমান করা হলো তাই নয় কি ?

- হটাৎ এত দিন পর ফোন করলে কেন ?

- এমনি। আজ হঠাৎ তোমার কথা খুব মনে পড়লো তাই ।

- আচ্ছা। তোমার বর কেমন হয়েছে? 

- খুব ভালো । তোমার মতোই ভালোবাসে। যত্ন করে। 

- বেশ। তাহলে তো তুমি সুখিই আছো। আচ্ছা একটা কথা বলতে পারবে রুবি আমায় কেন ছেড়ে চলে গেলে? এত এত স্বপ্ন দেখিয়েছিলে, তোমার জন্য আমি আমার জীবনটা সম্পূর্ণ বদলে ফেলেছিলাম। শুধু তোমাকেই পাগলের মতো ভালোবাসতাম। কি দোষ ছিল রুবি বলতে পারো? টাকাই কি জীবনের সব সুখ এনে দিতে পারবে? এই তো আমি এখন এত এত টাকা রোজগার করছি। কই তুমি ? তুমি নেই। তুমি অন্য কারো হয়ে গেছ। মা আমায় ছেড়ে চলে গেছেন। আমি খুব একা রুবি। খুব একা। টাকা আছে। কিন্তু টাকাটাই জীবনের সব কিছু নয় ।

- মাসি মা মানে তোমার মা....

- না রুবি মা ও এক  বছর হলো আমায় রেখে চলে গেছেন। তুমি খুব স্বার্থপর জানতো রুবি। খুব স্বার্থপর তোমার মত মেয়ে রা ভালোবাসার অভিনয় করতে জানে। তারপর সরল সাধা ছেলেটাকে মাঝ রাস্তায় ফেলে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে নেয়।

- ভুল ভাবছো সুপ্রিয়। সম্পূর্ণ ভুল ভাবছো । তুমি এখন ও আমার ওপর রাগ করে আছো। 

- রাগ আমি করি নি রুবি। তোমায় আমি ভালোবাসার জায়গায় বসিয়েছিলাম। তুমি আজ ও আমার মনে গেঁথে আছো  । তোমায় আজ ও আমি ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু কি জানতো মাঝে মাঝে যখন তোমার কথা মনে পড়ে সেইসব অভিশপ্ত দিন গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে তখন নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না। তোমায় রেগে গিয়ে স্বার্থ পর বলে ফেলি। তারপর তোমার ছবি গুলোকে আগলেই খুব কাঁদি। তোমার ছবি গুলোকে আঁকড়ে ই কত অভিযোগ, অনুযোগ করি। আমি আর পারছি না রুবি। আমায় একা করে রেখে কেন চলে গেলে? তোমার সেই দিন গুলোর কথা মনে পড়ে? 

- ------------------


তুমি তখন ক্লাস নাইনে গার্লস স্কুলে  পড়। আমিও তখন ক্লাস নাইন। প্রদীপ দার কাছে বাংলা পড়তে গিয়ে তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা। দুজন এই দুজনকে আড় চোখে দেখতাম। মনে মনে তোমায় খুব ভালোলাগে গিয়েছিল। যাকে বলে love at first sight.. তারপর থেকেই তোমার পিছু নিতে শুরু করি। প্রতিদিন স্কুল যাওয়ার সময় তোমায় আগে স্কুলে পৌঁছে দিতাম। তারপর আমি স্কুল যেতাম। আবার বাড়ি ফেরার সময় তোমার সাথে গল্প করতে করতে তোমায় তোমার বাড়ির গলি অবধি দিয়ে আসতাম। মনে হত ইস! কি তাড়াতাড়ি সময়টা কেটে গেল। কিন্তু আবার যখন আমায় ব্যাকে বাড়ি ফিরতে হত মনে হত রাস্তা টা কত দূর। তখন তো আর তুমি থাকতে না। তখন খুব বিরক্ত লাগতো। এর পর এইভাবেই আমাদের বন্ধুত্ব টা চলতে থাকলো। তখন দুজন দুজনকে ভালোবাসলেও বলতে পারি নি মনের কথা। সেই প্রথম তুমি আমার জীবনে এসে আমার জীবন টাকে পরিপাটি করে সাজিয়ে তুলেছিলে। আমি তখন পড়াশোনায় খুবই অমনোযোগী ছিলাম। কিন্তু তুমি ই আমায় পড়াশোনার প্রতি ভসলবাসাটা শিখিয়েছিলে। তার জন্য আমি তোমার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। সেই জন্যই আমি এই পজিশন এ আস্তে পেরেছি। মনে আছে রুবি মাধ্যমিক পরীক্ষার কিছুদিন আগে আমার খুব নার্ভাস লাগছিল। পরীক্ষার দিন যত এগিয়ে আসছিল আমার আরো যেন টেনশন বাড়ছিল। কিন্তু তুমি আমার মনে অনেক সাহস জুগিয়েছিলে। বলা বাহুল্য ঠিক সেই সময় টা থেকেই তোমার আমার জীবনের নতুন মোড় শুরু হলো। সেই প্রথম তুমি আমার হাতে হাত রেখে আমায় বলেছিলে সুপ্রিয় তুমি যদি মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করো তাহলে আমি সারাজীবনের মতো তোমার কাছেই থেকে যাবো। আমরা কেউ কোনোদিন সেই ভাবে প্রপোজ করি নি। কিন্তু তোমার ঐ ছোট্ট একটি কথাই আমায় অনেক দুঃসাহস দেখানোর স্পর্ধা দেখিয়েছিল। আমি মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষ একমাস খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করলাম। এক তো এটাই ছিল জীবনের প্রথম পরীক্ষা। আবার এটাই ছিল তোমায় চিরদিনের মতো নিজের করে পাওয়ার প্রথম ধাপ। আমি সেই প্রথম ধাপ টা সসম্মানে পাশ করেছিলাম রুবি। সেই দিনটার কথা আমি কোনদিন ও ভুলতে পারবো না রুবি। দিনটা ছিল সতেরই এপ্রিল। মাধ্যমিকের রেসাল্ট বেরোনোর দিন। আমি তো ভালোই পরীক্ষা দিয়েছিলাম। তবু কেমন যেন একটা টেনশন হচ্ছিল। আমি ভগবান ওতো বিশ্বাস করি না। কিন্তু সেই প্রথম ঠাকুর ঘরে গিয়ে ভগবান এর কাছে প্রার্থনা করলাম যেন আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারি। আমি যেন রুবি কে দেওয়া কথা রাখতে পারি। আমি  পেরেছিলাম  রুবি। আমি তোমায় দেওয়া কথা রাখতে পেরেছিলাম। আমি সব সাবজেক্ট এই লেটার পেয়ে স্টার পেয়ে স্কুলের মধ্যে ফার্স্ট হয়েছিলাম। তোমার ভালোবাসার জোরে একটা সাধারণ ছেলে অসাধারণ হয়ে গিয়েছিল। সেটাই ছিল আমার জীবনের  টার্নিং পয়েন্ট। তুমিও ভালো রেজাল্ট করেছিলে। আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম। রেসাল্ট দেখে মা তো অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। আমায় নিয়ে আত্মীয় স্বজন রা খুব খুশি ছিল। আর আমি , আমি খুশি ছিলাম শুধু তোমায় নিজের করে পাব বলে। রেসাল্ট টা হাতে পেয়ে বাড়িতে এসে রুমের দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আর আয়নার সামনে নিজের চোখের জল টা মুছে কাঁদতে কাঁদতে বলছিলাম রুবি তুমি শুধু আমার। শুধু আমার। তুমিও আমার রেসাল্ট এর খবর পেয়ে ভীষণ খুশি হয়েছিলে। সত্যি ই রুবি ভালোবাসা মানুষকে কতটা বদলে দিতে পারে। 


- সুপ্রিয় আমি তো চেয়েছিলাম তুমি পড়াশোনায় ভালো হও। সমাজে প্রতিষ্ঠিত হও। তুমি তো প্রথম দিকে বখাটে ছেলেদের সাথে শুধু আড্ডা দিতে, ক্লাস নাইন থেকেই বিড়ি , সিগারেট খাওয়া শুরু করে দিয়েছিলে। কিন্তু সেদিন তোমার ঐ পরিবর্তনে আমি সত্যি ই মন থেকে খুব খুশি হয়েছিলাম সুপ্রিয় তুমি বিশ্বাস করো? 


- বিশ্বাস! তুমি কাকে বিশ্বাস করার কথা বলছো রুবি? তোমায় ? তোমায় আর আমি এই জনমে বিশ্বাস করতে পারবো না রুবি। হ্যা আমি আজ ও রুবি কে ভালবাসি। যে রুবি আমায় অন্ধকার থেকে আলোয় এনেছিল। জীবনের মূল্য বুঝতে শিখিয়েছিল। আমি সেই রুবিকে ভালোবাসি। কোনো অহংকারী রুবি কে আমি ভালোবাসি না। যে শুধু মাত্র টাকার জন্য ভালোবাসাকে ছেড়ে সুখ, বিলাসিতার জন্য অন্য কাউকে ভালোবেসে সুখী হতে চেয়েছে। তোমার জন্য ,,রুবি হ্যা তোমার জন্য আমার কেরিয়ার জীবনটা শেষ হয়ে গেছে। ছারখার করে দিয়েছো তুমি আমাকে। আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়টায় তোমায় পাশে পাই নি। বরঞ্চ তোমার ভিতরকার নোংরা মানসিকতাটা তুমি তুলে ধরেছিলে আমার কাছে। ছি ! রুবি , তখন আমার কাছে শুধু টাকা ছিল না তাই তুমি টাকার বড়াই দিয়ে সম্পর্ক টা থেকে বেরিয়ে গেলে। আমাদের তো সেই স্কুল লাইফ থেকে ভালোবাসা রুবি । আর কয়েকটা দিন তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারলে না?

- তুমি ভুল বুঝছো সুপ্রিয়। আমি সেদিন তোমায় যদি পুরো সত্যি টা বলতে পারতাম তাহলে আর তোমার কাছে আমি অপরাধী হয়ে থাকতাম না। 

- কি সত্যি? 

- মনে আছে সুপ্রিয় সেদিন তোমায় আমি বলেছিলাম আমি সব কিছু ছেড়ে তোমার কাছে চলে এসেছি সুপ্রিয়। চলো, আমরা পালিয়ে বিয়ে করে নিই। কারণ বাড়ি থেকে তোমার আর আমার সম্পর্ক টা অনেক দিন আগে ই জেনে গিয়েছিল। আমার বাবা, মা এর নিষেধাজ্ঞা অবজ্ঞা করেও আমি শুধু তোমায় ভালোবেসেছিলাম। তোমার সাথে দেখা করার জন্য ফোনে কথা বলার জন্য অনেকবার মারও খেয়েছি। শুধু তোমার জন্য সুপ্রিয় শুধু মাত্র তোমার জন্য আমার কলেজ পড়াটা কমপ্লিট আর হলো না। বাবা আমাদের সম্পর্কে র কথা জানতে পেরে আমায় বাইরে বেরোনো পর্যন্ত বন্ধ করে দিল। তাও লুকিয়ে অনেকবার তোমার সাথে দেখা করার চেষ্টা করেছি। কয়েকদিন পর বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেন। পাত্র এন আর এস । আমি বিয়েতে রাজি হই নি সুপ্রিয়। তুমি যে বলছো এন আর এস পাত্র দেখে টাকার লোভে আমি বিয়ে করেছি তা নয়। আমার জায়গায় থাকলে তুমি কি করতে বলো? যখন দেখলাম বাড়ি থেকে সম্পর্ক টা মানতে চাইছে না, তখন তোমার সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে চাইলাম। কিন্তু তুমি তখন বেকার। তুমি আমায় ফিরিয়ে দিলে। বললে এখন কোনো রোজগার করি না। আরো কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে। আমি তো বলেছিলাম বলো সুপ্রিয় বিয়ের পর আমি অনেক টিউশনি করবো। তোমার মায়ের সামান্য পেনশন এতেই আমাদের কোনো মতো চলে যাবে। তারপর একদিন ঠিক সুখের মুখ আমরা দেখতে পাব। তোমায় কত বোঝালাম। কিন্তু তুমি সেদিন তোমার সিদ্ধান্তে ছিলে অনড়। তোমার তখন মুখের একই বুলি আরো কয়েকটা দিন অপেক্ষা করো। নিজের কেরিয়ারটা একটু গুছিয়ে নেই। কিন্তু ওতো দিন তো সময় সময় ছিল না। বাড়ি ফিরে শুনতে পেলাম বাবা কাকে যেন ফোনে বলছে তোমার নামে থানায় ডায়রি করবে যে তুমি নাকি আমায় ডিস্টার্ব করছো। আমি শুনতে পেয়ে বাবার পায়ে ধরে বললাম , আমি আর সুপ্রিয়র সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবো না বাবা। তুমি ওর নামে কোনো অভিযোগ কোরো না। শুধু একটি বার সুপ্রিয়র সাথে কথা বলতে দাও।

বাবার অনুমতি নিয়েই সেই দিন শেষ বারের মতো তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। তুমি যাতে আমায় ঘৃণা করো তোমার চোখে অপরাধী হওয়ার জন্যই আমি বলেছিলাম তোমার থেকে অনেক মোটা অংকের চাকুরি ওয়ালা পাত্রের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে সুপ্রিয়। হ্যা, জীবনে ভালো ভাবে বেঁচে থাকার জন্য টাকার মূল্য অনেক খানি। আর তুমি কবে প্রতিষ্ঠিত হবে সেই আশায় আমি বসে থাকতে পারবো না। ন্যাকা ন্যাকা সস্তার ভালোবাসায় আর আমি গলতে নারাজ। বাবার পছন্দের পাত্র এর সাথেই বিয়ে করে সুখে থাকতে চাই। তোমার কাছে নিজেকে ঘৃণার পাত্রী তে পরিণত করেছিলাম। যাতে তুমি আমায় খুব ঘৃণা করো। খুব সহজেই তুমি আমায় তোমার  মন থেকে মুছে ফেলতে পারো। আমি আজও.... আমি আজও....

- আজও .... কি রুবি? চুপ করে আছো কেন কথা বলো?

- না থাক। আজ আর এই কথাটা বলা ঠিক হবে না সুপ্রিয়। 

- তোমার বলার হয়তো অধিকার নেই রুবি। কিন্তু আমি ছয় বছর আগেও রুবিকে ভালোবাসতাম। আজ ও সেই রুবিকেই ভালোবাসি। সারাটা জীবন আমি তোমার স্মৃতিকে আকরেই বেঁচে থাকতে চাই রুবি। জানো তো রুবি তুমি চলে যাওয়ার পর আর কেরিয়ার আর এ তেমন মন দিতে পারি নি। তবে চাকরিটাও খুব একটা মন্দ না। মাইনেও ভালো পাই। কিন্তু টাকা দিয়েই তো আর সব পাওয়া সম্ভব নয়। এই ধরো এখন আমার কাছে টাকা আছে কিন্তু তুমি আমার জীবন থেকে চলে গেছ বহুদূরে।

- একটা কথা বলবো সুপ্রিয়?

- বলো

- তুমি আবার নতুন করে জীবনটা শুরু করো। একটা বিয়ে করো।

- তা আর হয় না রুবি। আমি একজনকেই শুধু ভালবেসেছি। অন্নকাউকে ভালোবেসে তাকে ঠকাতে পারবো না। আচ্ছা এই ছয় বছর পর হঠাৎ আমায় ফোন করলে কেন?

- মনে পড়ে গেল সুপ্রিয়। আমার অবসরে স্বপ্নে এখনো তোমার বিচরণ। আমি আমার স্বামীকে শ্রদ্ধা করি ওনার খেয়াল রাখি। ভালোও বাসি। কিন্তু জীবনের প্রথম ভালোবাসার জায়গাটা আলাদা ওটা কাউকে দেওয়া সম্ভব না। আজ রাখি সুপ্রিয়। তুমি আমায় কখনো ফোন কোরো না।

- না না। তোমার সাজানো সংসার আমি কখনো নষ্ট করবো না। তুমি ভালো থেকো বর্তমানকে নিয়ে। আমি অতীত কে নিয়ে বেশ আছি। ভালো থেকো রুবি।


সমাপ্ত

ছবি : সংগৃহীত



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ