সোমবারের সকাল। ঘড়িতে আটটা দশ। মৃনাল বাবু তড়িঘড়ি জামা , প্যান্ট খানি গলিয়েই হাত ঘড়িটা পড়তে পড়তে যন্ত্র টার কাঁটা গুলোর অবস্থান দেখামাত্রই জিভ কাটলেন। ইসস! আজকে সপ্তাহের প্রথম দিন। সোমবার। আর আজকেই আমার কাজে বেরোতে এত দেরি হয়ে গেল। কি হবে! আট টা ত্রিশ এর বাসটা আর পাওয়া যাবে কি .... নিজেরমনে বিড়বিড় করতে করতে ঠাকুর প্রণাম করে বেরিয়ে পড়ছিলেন মৃনাল বাবু । এমন সময় জুঁই এসে মৃনাল বাবুর সামনে এসে দাড়ালো। জুঁই মৃনাল বাবুর বড় মেয়ে। বয়স ত্রিশ/ একত্রিশ হবে। একেই লেট। তারপর রাস্তা কেটে দাঁড়াতে মৃনাল বাবু একটু ভ্রু কুচকিয়ে বললেন, - কি হলো জুঁই মা! পথ আটকালি যে বড়! পরনে থাকা সস্তার সালোয়ার কামিজের ওড়না টায় হাত মুছতে মুছতে জুঁই এগিয়ে দেয় মৃনাল বাবুর লাঞ্চ বক্স টি। তুমি তো টিফিন বক্স টাই নিয়ে যেতে ভুলে যাচ্ছিলে। ভুলে গেলে কি খেতে! তুমি তো আর বাইরে থেকে কিছু টি কিনে খেতে শেখো নি। আরে, প্রয়োজনে বাইরে থেকেও মানুষ কিনে খায়। আমি জানি বাবা আমাদের এই চার ভাই- বোন এর মুখে অন্ন সংস্থানের জন্যই তুমি দিন রাত পরিশ্রম করে কারখানার কাজ করছো। কোনো দিন বাইরে থেকে কোনো স্ট্রিট ফুড কিংবা মিষ্টি তুমি কিনে খাও নি। কারণ এই সব তোমার কাছে ছিল বিলাসিতা। তাই আজ ও সেই অভ্যাস তোমার নেই। কিন্তু টিফিন বক্স না নিয়ে গেলে আমিও তো চিন্তায় চিন্তায় ভাত মুখে তুলতে পারতাম না বাবা।
জুঁই কে বুকে আগলে নিয়ে মৃনাল বাবু বললেন, জানি রে মা... তুই আমার জন্য বড্ড চিন্তা করিস। এই সংসার টাকে যে তুই ই আগলে রেখেছিস। তোর মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাকি তিন ভাই - বোন কে যত্নে শাসনে দিদির ছত্রছায়ায় তুই তো বড় করেছিস। কতই আর বয়স তোর! কিন্তু এইটুকু বয়সেই এই জগৎ সংসারে বিরাট কর্মকান্ডে যুক্ত তুই মা। তোকে আশীর্বাদ করি মা তুই আরো অনেক বড় মনের মানুষ হবি। মানুষের মতো মানুষ হবি।
Bangla golpo/ বাংলা গল্প/ Bengali golpo
- এই দিদি, এখানে লুকিয়ে লুকিয়ে বাবার আদর খাওয়া হছে। আর আমি বাবাকে খুঁজে যাচ্ছি।
কেন কি হয়েছে কৌতূহলী সুরটা মৃনাল বাবুর গলা থেকে বেরিয়ে এলো।
- বাবা আমার কিছু টাকার দরকার ছিল। ডাব্লু বি সি এস পরিক্ষা য় বসার জন্য ফরম ফিলাপ করবো।
সে আমি দিচ্ছিখন, বাবা এখন কাজে বেরোচ্ছে পিছু ডাকিস না।
মৃনাল বাবু এগিয়ে গেলেন। ভাবতে ভাবতে বাস স্টপ অবধি আসে মৃনাল বাবু। সত্যি ই জুঁই মা আমার সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মী । সংসার খরচের টাকা থেকে ঠিক একটু একটু টাকা জমিয়ে রাখে। তা দিয়েই তো পরীক্ষা র ফ্রম ফিলাপের টাকা টা দিতে পারবে জুঁই মা। ভাগ্গিস জুঁই আছে। নাহলে এখন তো মাসের শেষ। টাকা পয়সা প্রায় শেষের দিকেই।
মৃনাল বাবুর মেজ ছেলে অনিক। পড়াশোনায় তুখোড়। এম.এ কমপ্লিট করে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছে। বছর চারেক হলো। অনিক নিশ্চিত ও ডব্লিউ বি সি এস পরীক্ষায় বেশ ভালো নম্বর পেয়েই ঊর্ত্তীণ হবে। এই চাকরিটা নিয়ে অনিক এর অনেক স্বপ্ন। অনিক ঠিক করে রেখেছে চাকরিটা পেয়ে গেলে বাবাকে এবার বিশ্রাম দেবে ও। বড় দিদি মানে জুঁই এর ভালো ঘরে বিয়ে দেবে। ছোট ভাই টার ও কলেজ পড়তি ছোট বোনটার পড়াশোনার দায়িত্ব নেবে ও। বড় দিদির কাছ থেকে ফ্রম কেনার টাকা টা নিয়ে অনিক বেরিয়ে পড়ল।
Bangla golpo/ বাংলা গল্প/ Bengali golpo
জুঁই ঘরে ঢুকে দেখে তখন সপ্তক আর অহনা দুটিতে প্রায় মারপিট করতে আরম্ভ করে দিয়েছে।
- এই থামবি তোরা! সকাল সকাল দুটিতে মিলে কি শুরু করেছিস শুনি ? .....বড়দিদির গলা শুনতে পেয়ে দুজনেই দুজনের দোষ ঢাকতে একে অপরের নামে দোষ দিতে দিতে বড়দিদির সামনে হাজির। দুজনের চেঁচামেচি তে জুঁই এর কান ঝালা পালা হয়ে যাওয়ার জোগাড়। সপ্তক আর অহনা একই বয়সী। ওরা যমজ ভাই - বোন। দুজনের মধ্যে এই মিল তো এই ঝগড়া।
দুজনের মধ্যে মধ্যস্ততা আনতে জুঁই দুজনকেই প্রথমে চুপ করতে বলে আর জিজ্ঞাসা করে, - কি রে সপ্তক কি হয়েছে বল।
-দেখনা বড় দিদি... অহনার চিরুনি টা একবার নিয়েছি । অমনি ও তেলে বেগুনে জ্বলে রে... রে করে আমার দিকে এগিয়ে এলো কেড়ে নেবে বলে। আচ্ছা আমি কি চিরুনি টা খেয়ে নেব বল? চুল টা আঁচড়িয়ে ই তো দিয়ে দিতাম। অভিযোগ এর স্বরে সপ্তক বলল।
-ইস স! ও নেবে আমার চিরুনি। ও সপ্তাহে একদিন ও শ্যাম্পু করে কিনা সন্দেহ। চুলে ময়লায় ভর্তি, আমার চিরুনি নোংরা হয়ে গেলে কি ও পরিষ্কার করে দেবে.... বেশ ঝাঁঝ দেখিয়ে অহনা বললো।
জুঁই পড়লো মহা ফ্যাসাদে। কাকে সামলিয়ে কাকে আগে চুপ করাবে ঠিক করতে পারলো না। তারপর সপ্তক কে বলল, তুই আর অহনার চিরুনি নিস না। তোর তো আলাদা চিরুনি আছে।
Bangla golpo/ বাংলা গল্প/ Bengali golpo
Bengali golpo - sonman
অহনা সপ্তক এর দিকে মুচকি হেসে বললো ঠিক হয়েছের ।অহনা দেখলি তো বড় দিদি কি বলল।
- কিনতু দিদি সামান্য চিরুনি পরিষ্কার করার ভয়ে ও আমায় ওর চিরুনি ব্যবহার করতে দেবে না? কি কুঁড়ে রে বাবা। তুমি দেখে নিও বড়দিদি অহনার কপালে একটা কুড়ে বর ই জুটবে। এই বলে সপ্তক দৌড়ে বাইরে বেরিয়ে গেল।
তুই আয় আজ বাড়িতে তোর মজা দেখাচ্ছি। আমার বর নাকি কুঁড়ে হবে। এত বড় কথা!
জুঁই কি বলবে ভেবে পেল না। আসলে সপ্তক আর অহনার এইরকম খুনসুটি র সামাল জুঁই কেই দিতে হয়।
আর রাগে ফসফস করতে হবে না। তোর তো কলেজ এর দেরি হয়ে যাচ্ছে। খাবি আয়। খেতে দিচ্ছি। জুঁই চলে গেল রান্না ঘরে ।
চলবে...
ছবি : সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ