![]() |
- অনিক আমি আজও তোমায় আগের মতোই ভালোবাসি। কিন্তু...
- কিন্তু কি শ্রীমা? আমাদের ভালোবাসার মধ্যে আবার কিন্তু শব্দটা কেন আসছে শ্রীমা?
- অনিক তুমি আমার মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছো না। আমার পরিস্থিতি তে থাকলে তুমি বুঝতে পারতে।
- আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না শ্রীমা। কোনো অজুহাত ই শুনতে চাই না। আমি শুধু এইটুকু জানি তুমি শুধু আমার। আর তুমি শুধু আমাকেই ভালোবাসো।
- ভালো তো বাসি অনিক। তোমায় খুব ভালোবাসি। কিন্তু বাবা যে এই সম্পর্ক টা কিছুতেই মানছে না।
- মানছে না! মানাতে হবে শ্রীমা। আমার জন্য মানাতে হবে। আমাদের সম্পর্ক টা কে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য মানাতে হবে। কিন্তু প্রথম দিকে তো তোমার বাবা, মা দুজনেই আমাকে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু এখন কি হলো ?
- সে অনেক ব্যাপার অনিক।
- কি হয়েছে আমায় সবটা খুলে বলো শ্রীমা।
শ্রীমা কাঁদতে থাকলো। রেস্টুরেন্টর আশেপাশের চেয়ার থেকে অনেকেই ওদের দেখতে থাকলো ঘাড় ঘুরিয়ে। অনিক চারপাশ টা একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললো , প্লিজ শ্রীমা কেঁদো না। কি হয়েছে শান্ত ভাবে বলো। আমি তো আছি তোমার পাশে। কেঁদো না। সবাই দেখছে।
চোখের জল মুছে অনিক এর হাতে হাত দিয়ে শ্রীমা বলল- অনিক বাবা আমার অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন।
-হোয়াট?
অনিক যেন আকাশ থেকে পড়লো। দুটো বাড়ি থেকেই তাদের ভালোবাসার কথা সকলে জানে। এমনকি মেনেও নিয়েছে। কিন্তু এতদিন পর হটাৎ করে কি হলো!
-আঙ্কেল এর মাথা ঠিক আছে তো শ্রীমা?
শ্রীমা ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি সূচক ইশারা করে বললো, বাবা আমাদের সম্পর্ক টা তো প্রথম থেকেই মেনে নিয়েছিল। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ আগে বাবার এক বন্ধু তার ছেলের সাথে আমার বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে আসেন। ছেলে আমেরিকায় থাকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। তাই বাবা চাইছেন ওখানেই আমার বিয়ে টা দিতে।
অনিক এর রাগ মাথায় উঠে যায়। হাত টা মুঠো করে টেবিল এ সজোরে একটা আঘাত করে।
আবার চারপাশের লোকজন ওদের দেখতে থাকে।
শ্রীমা অনিক কে শান্ত করার জন্য বলে, চলো অনিক আমরা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যাই। আমাদের দিকে সকলে দেখছে। অনিক শ্রীমার কথা কানে না তুলে বললো,
- শ্রীমা আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম তোমার বাবার ব্যবহারে। একজনকে কথা দিয়েও উনি অন্য জনের সাথে তোমার বিয়ে দিতে চাইছেন।
এবার শ্রীমার একটু অনিক এর উপর রাগ হয়। চেয়ার ছেড়ে ও উঠে দাঁড়ায়। হনহন করে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে পড়ে ও। অনিক ও তাড়াতাড়ি করে বিল মিটিয়ে শ্রীমার পিছু নেয়।
- সরি শ্রীমা। আঙ্কেল এর নামে ওই ভাবে বলা আমার ঠিক হয় নি জানি। কিন্তু দেখো শ্রীমা যেই একজন প্রবাসী মোটা অংকের চাকরির ছেলে পেয়েছেন অমনি নিজের মত পরিবর্তন করতে চাইছেন উনি। এটাও কি ঠিক তুমি বলো?
শ্রীমা থমকে দাঁড়ালো। পিছন ফিরে অনিক এর প্রশ্নের পাল্টা উত্তরে ও জবাব দিল - সেই প্রসঙ্গে তো আমার বাবার সাথে তুমি কথা বলতে পারো।
- আমি?
- হ্যা। তুমি ছাড়া আর কে যাবে?
- কিন্তু তোমার বাবার সামনে যেতে এমনি ই কেমন একটা ভয় করে আমার।
- ভয় পেলে চলবে না অনিক। এটা আমাদের জীবন মরণের ব্যাপার। আমি বাবা কে সরাসরি বলে দিয়েছি তোমায় ছাড়া আমি কাউকে বিয়ে করবো না।
- থ্যাংক ইউ।
- মানে?
- থ্যাংক ইউ মানে?
- আরে, থ্যাংক ইউ মানে জানো না? এইদিকে তোমার বাবা তোমার সাথে আমেরিকায় থাকা ছেলের সাথে বিয়ে দিচ্ছে।
- ফাজলামোর একটা সীমা আছে অনিক। এটা যদি পাবলিক প্লেস না হতো না তোমায় একটা কষিয়ে চড় মারতাম। আমি মরছি কিভাবে বাবার সন্মন্ধ টাকে কাটাব সেই চিন্তায় । আর ও নাটক শুরু করেছে।
- নাটকের কি আছে ! এই যে তুমি জোর গলায় বলেছ তোমার বাবাকে আমায় ছাড়া তুমি আর কাউকে বিয়ে করবে না । এতে আমার পরাণ টা কতটা খুশি হয়েছে জানো? তার জন্য তোমায় থ্যাংক ইউ বলবো না?
- ঠিক আছে অনেক হয়েছে। এবার একটা কিছু প্ল্যান বের করো।
- কিসের প্ল্যান?
- বাবা যাতে নিজে থেকেই এই সন্মন্ধ টা কেটে দেয় তার একটা প্ল্যান।
- ঠিক বলেছ।
অনিক আর শ্রীমা ততক্ষনে হাটতে হাটতে গঙ্গার ধারে চলে এসেছে। দুজনে কিছুক্ষন পাশাপাশি বসে রইল। তারপর অনিক হটাৎ চেঁচিয়ে উঠে বললো প্রতাপ দা এখন কোথায়?
- প্রতাপ দা? মানে আমার পিসির ছেলে?
- হ্যা গো। প্রতাপ দা এখন কোথায় আছে?
- কলকাতাতেই।
- ও তো তোমার আর আমার ব্যাপারটা পুরোটা জানে। আর প্রতাপ দা কে তো তোমার বাবা খুব ভরসা ও করে তাই না?
- তা করে।
- তাহলে প্রতাপ দা কে ডাকো একদিন একটা রেস্টুরেন্ট এ। সেখানে আমিও থাকবো। আর তোমার বাবা কে বলবে তোমার বাবার ওই বন্ধুর ছেলে টার সাথে তুমি একবার দেখা করতে চাও। ওকেও এখানে নিয়ে আসবে। তাহলেই আশা করি কাজ হয়ে যাবে।
- কি কাজ?
-আরে শ্রীমা তোমার মাথায় এখন এত কিছু ঢুকবে না। আমার কাছে প্রতাপ দার নম্বর আছে। আমি যা বলার প্রতাপ দা কে সব বলে দেব। আর তোমাকেও রাতে সব বলে দেব। তুমি শুধু সামনের রবিবার ওই ছেলেটাকে দেখা করতে বল রেস্টুরেন্টে।
-কেন গো? পুরো প্ল্যান টা এখনই বলো না। তুমি আর প্রতাপ দা মিলে ছেলে টাকে মারবে ধরবে নাকি?
-ধুর..... না রে বাবা। তুমি শান্ত মাথায় বাড়ি যাও। রাতে কল করে সব বলে দেব।
................................................…..
রবি বার :
রেস্টুরেন্টে দুটি চেয়ার এ মুখোমুখি শ্রীমা ও শ্রীমার পছন্দ করা ছেলে রাজেশ বসে আছে।
শ্রীমা খুব লজ্জা পাচ্ছিল। ও কি বলবে বুঝতে পারছিল না।
আশেপাশে একটু তাকিয়ে দেখল প্ল্যান মাফিক অনিক এসেছে কিনা। পিছন ফিরে দেখলো অনিক তাদের পরের সিট টা তেই আছে। শ্রীমা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
- হ্যা, বলো শ্রীমা। হটাৎ আমায় এই রেস্টুরেন্ট এ দেখা করতে বললে? আমি তো খুব সারপ্রাইজ ড হয়ে গেছি। খুব ভালো লাগলো ব্যাপারটা। এখন কার জেনারেশন এর মেয়ে তুমি। তুমি নিজে হবু বরের সাথে দেখা করতে চেয়েছ পার্সোনাল ভাবে এটা তো খুব ভালো কথা।
- শ্রীমা শুধু একটু হাসলো কিছু বললো না।
ওয়েটার কে শুধু তিন কাপ কফি অর্ডার দিল।
-শ্রীমা আমরা তো দুজন। তুমি তিন কাপ কফি অর্ডার দিলে কেন?
-আসলে আমার দাদার সাথে তোমায় পরিচয় করানোর জন্যই তোমায় এখানে ডেকে আনলাম।
-মানে? তোমার দাদা মানে? তোমার নিজের দাদা?
-হ্যা। ওই যে আসছে।
রাজেশ দেখলো একটি প্রতিবন্ধী ছেলে খোঁড়াতে খোঁড়াতে আসছে।
- দাদা এখানে বোস। সাবধানে বোস।
রাজেশ অবাক হয়ে যায়। সে বলে
- আমি আর আমার বাবা জানতাম তুমি একমাত্র সন্তান। তোমার একটা এইরকম দাদা আছে আগে জানতাম না তো?
- ওকে নিয়েই কিছু কথা আছে তোমার সাথে রাজেশ।
- কি কথা
- তুমি তো দেখতেই পারছো আমার দাদা প্রতিবন্ধী। ওর সারাজীবন এর দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে। তুমি রাজি তো?
- হোয়াট? আমি নেব একজন প্রতিবন্ধী ছেলের দায়িত্ব?
- মা , বাবার অবর্তমানে ওর দায়িত্ব তো আমাদেরই নেওয়া উচিত। বাবা এতদিন চেপে ছিলেন ব্যাপারটা। আসলে দাদা খুব একটা বাইরে বেরোতেন না। তাই তোমার বাবা ও জানত না যে আমার একটা দাদাও আছে। তাছাড়া আমার দাদা এইরকম জানলে কেউ যদি বিয়ে না করে তাই বাবা....
- চুপ করো শ্রীমা। আমরা ভেবেছিলাম তুমি মা বাবার একমাত্র সন্তান। বিয়ের পর তোমার বাবা তার বিজনেস টা আমার নামে লিখে দেবে। সব প্ল্যান ই ভুল ছিল আমাদের।
- ও তাহলে তুমি আমায় আমার টাকা দেখে শুধু বিয়ে করতে চেয়েছিলে রাজেশ।
- হ্যা তাই। বিদেশে পরে থেকে মোটা টাকা রোজগারের চেয়ে দেশে মোটা অংকের বিজনেস করবো এটাই ছিল আমার উদেশ্য। শেষ পর্যন্ত কি না এই প্রতিবন্ধী ছেলে টাকে আমায় টানতে হবে প্লাস সম্পত্তিও ভাগাভাগি হবে। দরকার নেই এই বিয়ের।
রাজেশ উঠে চলে যাচ্ছিল। তখনই প্রতাপ দা উঠে দাঁড়িয়ে দেখালো ও সম্পূর্ণ সুস্থ ।
রাজেশ এবার আরো অবাক হলো। তার মানে তুমি প্রতিবন্ধী নয়?
- শ্রীমা বললো না । ও আমার নিজের দাদাও নয়। ও আমার পিসির ছেলে।
- তাহলে তোমরা এতক্ষনে মজা করছিলে?
- না । আমি দেখলাম তুমি সত্যিই আমাকে বিয়ে করতে যাচ্ছিলেন নাকি আমার বাবার টাকা কে।
রাজেশ আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে বেরিয়ে পড়ল। সমস্ত কিছু প্রতাপ দা রেকর্ড করে রেখেছিল । শ্রীমা যাতে ওর বাবাকে শোনাতে পারে।
সব কিছু শোনার পর শ্রীমার বাবা অনিক এর সাথেই পুনরায় বিয়ে ঠিক করেন।
সমাপ্ত
ভালোবাসা শুধু টাকা পয়সা দিয়ে হয় না। আর টাকা পয়সা থাকলেই সেই মানুষটা সুন্দর হয়ে যায় না। সুন্দর হতে হলে সেই মানুষটার মনটা আগে সুন্দর হতে হয়।
ছবি : সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ