তিন্নি আসে পাশে কাউকে দেখতে পেল না। জায়গাটা বেশ নির্জন। চারদিকে বড় বড় গাছ গাছা লিতে ভর্তি। সূর্যের আলো পর্যন্ত ঠিক ভাবে এখানে পৌঁছাতে পারছে না। চারপাশ থেকে বুনো ময়ূর ও পিয়াল পাখির আওয়াজ এ পরিবেশ টার নির্জনতা ভঙ্গ করছে। এতক্ষণ পর তিন্নি র সত্যি সত্যি ভয় করতে লাগলো। ও একবার আহ্বান এর নাম ধরে ডাকলো। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। বাধ্য হয়ে ওই রাস্তা ধরেই হাটতে থাকলো। কিন্তু এই জঙ্গল ঘেরা এলাকায় ও আগেও এসেছে ছোটবেলায়। মা, বাবার সাথে। তাও অবশ্য গাড়ি করে। এখন কিছুই বুঝতে পারছে না। কতদূর গেলে লোকালয় পাওয়া যাবে কি জানি। আসলে এটি একটি জঙ্গল। বসতি থেকে একটু ভিতর দিকে। এখানে সবাই ঘুরতে আসে গাড়ি নিয়ে। কিন্তু তিন্নি রা একটু আয়াডভেঞ্চার দেখাতে গিয়ে হাটতে শুরু করেছিল । ওরা ছিল মত পাঁচজন। মৌ, আহ্বান , রিশোভ, পিউ, তিন্নি। তিন্নি জঙ্গলের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ও ছবি তুলতে তুলতে এতটাই বিভোর হয়ে গিয়েছিল যে ও ওদের থেকে পিছনে পরে যায়।
হাটতে হাটতে হটাৎ তিন্নি একটি ছেলেকে দেখতে পায়। বয়স ওই চব্বিশ পঁচিশ হবে। মাথা ভর্তি চুল হালকা ব্রাউন কালার। রোগা রোগা চেহারা হাতে স্মার্ট ওয়াচ। পিঠে ব্যাগ। রেড কালারের সানগ্লাস। স্কাই কালার এর জিন্স ও ব্ল্যাক কালার এর শার্ট পরে কানে হেড ফোন গুঁজে আনমনে এই পথেই আসছিল। তিন্নি ওই ছেলে টিকে দেখে মনে একটু আশার ভরসা পেল। ছেলেটির সামনে গিয়ে তিন্নি বললো,
- এক্সকিউস মি! আমায় একটু হেল্প করতে পারবেন প্লিজ....এ
- হ্যা , বলুন
- একচুয়েলি, আমি ফ্রেন্ডস দের সাথে এখানে ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু ওদেরকে হারিয়ে ফেলেছি। ওরা সম্ভবত তালুরিয়া লেকের দিকে গেছে। আমার ফোন এর নেটওয়ার্ক নেই এখনে । তাই ওদের সাথে কন্ট্যাক্ট করতে পারছি না। প্লিজ আমায় একটু হেল্প করবেন।
- কি হেল্প করবো বলুন।
ছেলেটির এই উদাসীনতা দেখে তিন্নির মনে মনে রাগ হলো। ও ভাবলো সামনে এত সুন্দরী একটা মেয়েকে পেলে অনেক ছেলেরাই এখন যেচে আলাপ পরিচয় করে হেল্প করতে চাইতো। কিন্তু এ যেন অন্য রকম। তবুও মনের ক্ষোভ নিজের মধ্যে পুষে রেখে ও বললো
- তালুরিয়া লেক টা কোন দিকে একটু বলতে পারবেন?
- সোজা হাটতে হবে এখন মিনিট পনেরো। তারপর ডানে মিনিট দশেক, তারপর বায়ে মিনিট সাতেক হেটে আবার সোজা মিনিট......
ছেলেটিকে থামিয়ে দিয়ে এবার তিন্নি বললো আচ্ছা ঠিক আছে । আপনাকে আর রাস্তার ডিরেকশন দিতে হবে না। আপনি কি আমাকে ঐখানে নিয়ে যেতে পারবেন। দেখছেন ই তো ফোন এ একটুও নেটওয়ার্ক নেই। কোনোরকম কন্ট্যাক্ট করতে পারছি না।
ছেলেটা কি যেন একটু ভাবতে লাগলো। তিন্নি রও ছেলেটিকে বেশ অন্য রকম মনে হচ্ছিল। ছেলেটিকে ও উদেশ্য করে বললো আচ্ছা যত টাকা চাও তত টাকাই দেব। প্লিজ আমায় ওদের কাছে পৌঁছে দিন।
- টাকা দিলেই কি জীবনের সব কিছু কিনে নেওয়া যায় ম্যাডাম?
- না, মানে....
- আচ্ছা, চলুন নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু অনেকটা পথ।
- আপনার কোনো অসুবিধা নেই তো।
- না
এরপর তিন্নি ওই অচেনা ছেলেটির সাথে হাটতে থাকলো। আর ফোন এর নেটওয়ার্ক টা ঠিক করার চেষ্টা করতে থাকলো।
কিছুদূর হাটতে হাটতে তিন্নি জিজ্ঞাসা করলো,
- আচ্ছা, আপনার নাম কি?
- নাম জেনে কি হবে?
ছেলেটির অদ্ভুত কথা শুনে রাগ হয়ে যাচ্চে তিন্নির। তাও নিজেকে বারবার সামলে নিচ্ছে।
- বাই দ্য ওয়ে...আমার নাম তিন্নি। আমি গত পরশু এখানে এসেছি। আমার বাবার জব ট্রান্সফার হয়ে এখানে হয়েছে। আমরা এখানেই শহরের দিকে একটি কোয়ার্টার এ আছি। আমার পরিচয় তো আমি দিলামই। এবার আপনার টা বলতে অসুবিধা কোথায়?
- আমি আগন্তুক।
- ইস স! এটা আবার কেমন নাম। এইরকম আবার কারো নাম হয় নাকি?
- না , এটা আমার আসল নাম নয়। আপনার কাছে এটাই আমার মনে হলো পারফেক্ট নাম হবে।
- আচ্ছা। তাই বলেই না হয় আপনাকে ডাকবো। কি আর করা যাবে । কিন্তু আপনি থাকেন কোথায়? কি করেন?
- এখানেই থাকি। একটি কোম্পানি তে জব করি।
ঐদিকে তিন্নির ফ্রেন্ডস রা ওকে দেখতে না পেয়ে খুবই চিন্তিত। বিশেষ করে আহ্বান। আহ্বান হলো তিন্নির হবু বর। ওরা ভেবেছিল তিন্নি হয়তো ছবি তুলতে তুলতে সামনের দিকেই এগিয়ে গেছে। সেই জন্য ওরাও এগিয়ে যায়। কিন্তু এখন দেখতে না পেয়ে ওরা সবাই খুব চিন্তিত। ওদের নিজেদের মধ্যে এখন তিন্নিকে নিয়ে গোলমাল চলছে। মৌ মনে ভয় নিয়ে বললো, দেখো আহ্বান দা তোমার কিন্তু অন্তত তিন্নিকে চোখে চোখে রাখা উচিত ছিল। পিউ বলল আচ্ছা আমরা কি তিন্নির কেউ না? আমরাও তো ওরবন্ধু। দোষ সবাই এর ই কম বেশি আছে। কাউকে একতরফা দোষারোপ করা ঠিক নয়। তিন্নির ও অনেক দোষ আছে। সে যাই হোক।এখন ওই সব ভাবার সময় নয়। আমরা আর ওর জন্য বেশি না এগিয়ে এখানেই বরঞ্চ ওয়েট করি। আমার মনে হয় ও বেশিদূর এগোয় নি। রিশোভ বলল, তিন্নি তো জানে তালুরিয়া লেক যাবো আমরা। ও ওখানে চলে যায় নি তো?
- আরে বোকা, তালুরিয়া লেক গেলে তো ওকে এই পথ দিয়েই তো হেটে যেতে হবে। এত দূর রাস্তায় যখন ওকে দেখতে পেলাম না, তখন হয়তো ও পিছন এই আছে। এখানেই অপেক্ষা করা ওর জন্য ঠিক হবে। পিউ বেশ বিচক্ষণতার ভঙ্গিতে বললো।
-আমি এই জন্য বলেছিলাম জঙ্গল এরিয়ায় গাড়ি নিয়ে ঘুরতে হয়। হেটে হেঁটে ঘোরা উচিত নয়।
আহ্বান এর কথায় পিউ সায় দিল।
কিন্তু এটা তো সেইরকম হিস্র জন্তুদের জঙ্গল নয়। তাই আর কি এই ভাবে আসা।
এতক্ষনে তিন্নির বেশ ছেলেটিকে ভালো লাগলো মনে মনে। ছেলেটি নিজের নাম নাই বলুক। কিন্তু ছেলেটি বেশ চরিত্রবান। এতটুকু সময়ে একবারের জন্যও নির্জন রাস্তায় তিন্নির দিকে কোনো কুনজর এ তাকায় নি। ছেলেটি তাকে হেল্প করছে তার জন্য কোনো টাকা চায় নি। একটা উদাসীনতা ভাব আছে ছেলেটির মধ্যে কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং ছেলেটি। খুব রহস্যময়।ছেলেটির সাথে এক সাথে পথ চলতে চলতে ছেলেটিকে যেন তিন্নির অনেক আপন মনে হলো। হটাৎ ই তিন্নি বলে বসলো,
চলবে ....
ছবি : সংগৃহীত
( এটি প্রথম পর্ব। আগামী কাল ই শেষ পর্ব। বন্ধুরা আপনাদের কাছে অনুরোধ রইলো গল্পগুলি ভালো লাগলে আমার ব্লগটি জনপ্রিয় করে তোলার জন্য প্লিজ আমার গল্প গুলি অনেক অনেক শেয়ার করে আমার সাইট টি জনপ্রিয় করে তুলুন। আপনাদের সহযোগিতা আমাকে অনেকটা দূর এগোতে সাহায্য করবে। আমি এর আগে পোস্ট এ অনেক গল্প লিখেছি। সেই গুলি পড়তে পারেন। আশা করি ভালো লাগবে। আমি রান্না, রেসিপির ব্লগ দিতাম। কিন্তু ওইসব নিয়ে আর না লিখে আমি গল্প লিখেই জনপ্রিয়তা অর্জন করতে চাই। প্রতিদিন একটু একটু করে গল্প লিখেই আপনাদের হৃদয়ে একটু একটু করে জায়গা করে নিতে চাই। আপনাদের সাপোর্ট ছাড়া সম্ভব নয়। আপনারা প্লিজ পাশে থাকুন। ও আমাকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিন। সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।)
0 মন্তব্যসমূহ