তোমাকে চাই ( চতুর্থ পর্ব)

Tomake chai fourth part


( বছর ২০ আগের কথা) 


মিঠুর কোল আলো করে সবে সূর্য এসেছে। অভাবের সংসারে  দুধ কেনার মতো পয়সাও তখন ছিল না। মিঠুর বর পেশায় ট্যাক্সি চালক হলেও মদ খেত খুব। মদের নেশাই ওদের সাজানো ছোট্ট সংসার টা শেষ করে দিয়েছিল। ট্যাক্সি চালিয়ে যা পেত তাতে ছোট্ট সংসার টা কোনো মতে চলে যেতে পারতো। কিন্তু বিয়ের প্রথম প্রথম মিঠুর বর ভালোই ছিল। হটাৎ সঙ্গ দোষে মিঠুর বর অজয় মদ খেতে থাকলো। তার সাথে চলত মিঠুর ওপর অকথ্য অত্যাচার। মদের নেশায় এত টাই চুর হয়ে থাকতো যে , ট্যাক্সি নিয়ে আর বেরোতে পারতো না। কাজে যাওয়ার নাম করে বেরিয়ে মদ খেয়ে মদ্যপ অবস্থায় টলতে টলতে বাড়ি ফিরত।


সোজা হয়ে হাটা কিংবা দাঁড়ানোর মতো ক্ষমতা তখন থাকতো না অজয়ের। 

বাড়ি ফিরে টলতে টলতে কোনো কোনোক্রমে ভাঙা দরজাটা র কাছে এসে হাঁক দিল....

- মিঠু, ওই মিঠু দরজা খোল


কোলের বাচ্চাটা তখন ও একটু দুধের জন্য খিদে তে উচ্চ স্বরে কেঁদে চলেছে।


দরজায় আবার দম দম শব্দ


মিঠু রাগে , কষ্টে ছোট্ট সূর্য কে আগলে কাঁদতে থাকলো


- কি হলো শালী... দরজাটা খোল।


চোখের জল মুছে নাক টেনে মুখ ঝামটা দিয়ে.... না খুলবো না।।তোমার লজ্জা করে না ? কোলের বাচ্চাটা সকাল থেকে দুধ না খেয়ে কেঁদেই চলেছে। আর তুমি .... তুমি মদ গিলে বাড়ি ফিরছ? তুমি বাবা ! বাবা নামের কলঙ্ক তুমি।।


- তুই শালী দরজাটা খোল 

দরজাটা খুলে দেয় মিঠু।

কোনোক্রমে পা টেনে টেনে অজয় ঘরে ঢুকেই ভাঙা তক্ত পোষ টার সামনে এসে ধপাস করে শুয়ে পড়লো ।


- কি হলো তোমায় না বলেছিলাম আসার পথে দুধ এর প্যাকেট টা কিনে আনতে


অজয় এবার চোটে গিয়ে উঠে বসে।


- আবে, শালী তো দেখছি চুপচাপ একটু ঘুমোতেও দেবে না।


- আচ্ছা, বাচ্চাটা খিদের চোটে এত কাঁদছে আর তোমার ঘুম পাচ্ছে।

- তোর কাছে পয়সা আছে তুই নিজেই কিনে আন

- আমার কাছে? আমার কাছে কোথায় পয়সা? যেকটা টাকা ছিল সে তো তুমি আজ সকাল বেলা কেড়ে কুড়ে নিয়ে চলে গেলে।

-ফালতু ন্যাকা কাঁদিস না। পাশের বাড়ি থেকে ধার নিয়ে আন গে যা ...আমি পরে দিয়ে দেব।

-অনেক বার ধার নিয়েছি। শুধতে পারি নি। ওরা আর দেবে না।

-তবে মর গে...

-কি বললে তুমি? 

-মরতে বললাম।

মিঠু সূর্যকে আকড়ে ধরে আবারো কাঁদতে থাকলো।

মদের নেশায় অজয় তক্তপোষ থেকে উঠে এসে মিঠুকে বেধড়ক মারতে থাকলো।

কোলের বাচ্চাটা আরো জোর জোর কাঁদতে থাকলো।

কান্নার শব্দ ও ঝগড়ার আওয়াজ শুনে পাশের বাড়ি হারার মা এসে অজয়কে ধমকাতেই অজয় আরো রেগে গেল।


- আমাদের স্বামী, স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে তুমি কে... হে?

মিঠু আরো অপমানিত বোধ করলো।

হাতজোড় করে হারার মা কে মিঠু বললো মাসিমা তুমি চলে যাও। তোমায় না জানি কি গালাগাল দেবে।

মিঠুর কথায় হারার মা নিঃশব্দে ওখান থেকে চলে গেল।

ততক্ষনে কোলের শিশুটা খিদের জ্বালায় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে।

হারার মা চলে যাওয়ার পর অজয় এর মধ্যে তখন ও কোনো মনুষত্ব বোধ জেগে ওঠে নি।

- শালী সব বাড়িতে ঢুকে জটলা বাধানোর স্বভাব এদের.... রাগে গড়গড় করতে থাকলো।

ভাবলাম একটু শান্তিতে ঘুমাবো তাও হলো না।

- খেতে দে আমায়।

- খাবার নেই

- নেই মানে? 

- আজ তিনদিন ধরে ঘরে কোনো দানা নেই। সেই খবর রাখো? 

- তোর কাছে ও পয়সা ছিল কিনিস নি কেন?

- সংসার বাঁচানোর টাকা থেকে আগে যে কটা টাকা জমাতাম তাও তো তুমি এই কয়েক মাসে কাজে না গিয়ে আমার থেকে জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে মদ গিলেছো লজ্জা করে না? দুই দিন হারার মায়ের থেকে চাল এনে রেঁধেছি। আর চাই কি করে? 

ধ্যাৎ....

টলতে টলতে কুঁজো থেকে দুই গ্লাস জল খেয়ে অজয় ঘুমিয়ে পড়লো।

মিঠুও সারা রাত না খেয়ে বাচ্ছা নিয়ে শুয়ে পড়লো।


ভোর বেলায় উঠোন ঝাঁট দেওয়ার সময় দেখলো হারার মা তড়িঘড়ি রান্না চাপিয়ে দিয়েছে। এটা অবশ্য মিঠু রোজ দিনই হারার মা কে দেখে। মিঠু এও জানে হারার মা লোকের বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়। 

মিঠু আজ হারার মা কে দেখে একটু ইতস্তত করে ওর সামনে এলো।

- কিছু বলবি মিঠু?কাল রাতে কিছু খেলি? 

মিঠু মাথা নিচু করে রইলো।

বুঝেছি... আমায় তো একবার রাত্রিরে ডাকতে পারতিস

- তুমি সারাদিন হাড় ভাঙা পরিশ্রম করো। আবার ভোরে কাজ সেরে সকাল এই বেরিয়ে পরো। তাই আর তোমায় ডেকে তুলি নি।

- তা, বলে তুই দুধের শিশুর মা, তোর না খেলে চলে। তাছাড়া কাঁচা নাড়ি তে কিছু না খেয়ে থাকে রে...

- ওসব কথা পরে হবে মাসিমা। মাসিমা আমার একটা কিছু কাজের ব্যবস্থা তুমি করে দিতে পারবে?

- কি যে কথা তুই বলিস? এত টুকু কোলের শিশু নিয়ে তুই কাজ করবি কি করে? 

- ওসব আমি জানি না মাসি। একটা কাজ যদি তুমি দেখে না দাও এই মা আর ছেলে না খেতে পেয়েই মরে যাবো।

অনেক ভেবে চিন্তে মাসি বললো একটা কাজ আছে জানিস তো

মিঠুর চোখে মুখে দিনের আলোতেও যেন তারার ঝিকিমিকি খেলে গেল।

-সত্যি বলছ মাসি?

- কিন্তু খুব বড় লোকের বাড়ি। ওই বাড়ির ম্যাডাম এর ও তোর মত একটা কচি ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে। তার কাছে সর্বক্ষণ থাকার জন্য ও একটু আধটু বাছাটার দেখাশোনার জন্য মেয়ে খুজিছিল।তাহলে তোর কথা বলবো।

- সেই ভালো মাসিমা।

- কিন্তু তুই পারবি? ছেলে সামলিয়ে? 

- খুব পারবো , মাসিমা, খুব পারবো ও নিয়ে তুমি চিন্তা করো না। 

- বেশ তো, তাহলে আজই বলব। তুই এক কাজ কর। দুটো মুঠো চাল নিয়ে যা। যা হয় একটু ফুটিয়ে খা এখন।

মিঠু আনন্দে আত্মহারা হয়ে ঘরে ঢুকলো। ঠাকুরকে প্রণাম করলো।

ঘুমন্ত সূর্যকে কোলে নিয়ে খানিকটা আদর করলো।

বেলা যত বাড়তে থাকল মিঠু অধৈয্য হয়ে পড়লো। বার বার ঘর থেকে গলা বাড়িয়ে দেখতে লাগলো মাসি এসেছে নাকি।

অবশ্য মাসির আসতে আসতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধেয় হয়ে যায়। তা মিঠু জানে। কিন্তু আজ কেন জানি না মিঠুর মন মানছিল না ।


চলবে...


( কিছু ব্যক্তিগত কারণে তাড়াতাড়ি লেখা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চেষ্টা করছি লেখার। আপনারা প্লিজ পাশে থাকুন। আমার গল্প ও টিপস গুলি আরো জনপ্রিয় করে তুলতে অনেক অনেক শেয়ার করুন। সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।) 


আগের পর্বের লিংক

https://www.sobarjonnoi.com/2023/03/tomake-chai-love-story-third-part.html




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ