রিমলি আর ইমলি দুজন খুব ভালো বন্ধু। সেই ছোট বেলা থেকেই। নার্সারি থেকেই ওরা একই স্কুলে পড়েছে। দুজন এই বেশ সম্ভ্রান্ত পরিবারের ই মেয়ে। তবে রিমলি যতটা হাসি খুশি প্রাণবন্ত, ইমলি অতটা নয়। রিমলি খুবই মিশুকে। সবাই এর সাথেই হেসে খেলে কথা বলে। কিন্তু ইমলি কে উপর থেকে আর পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো মনে হলেও ওর ভিতর টা ছিল অন্যরকম। ও একটু বড়লোক দের সাথে মিশতে পছন্দ করে। দামি রেস্টুরেন্ট ছাড়া খেতে চায় না। বাইরের দোকান গুলোতে ভালো ভালো ট্রেনডি ড্রেস বিক্রি হলেও , ওগুলো যেহেতু সস্তার মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে তাই ওগুলো না কিনে নামি শপিং মলে গিয়ে কেনে। কিন্তু রিমলি প্রাণ ভরে চৈত্র সেলে শপিং করে, বাইরের দোকান থেকেও জিনিসপত্র কেনে আবার ইচ্ছে হলে মল থেকেও কেনে।
রিমলি আর ইমলি এখন অনেকটাই বড় হয়ে গেছে। এখন ওরা কলেজে পরে। দুজন খুব ভালো বন্ধু হলেও দুজনের মনের অমিল ও আছে বিস্তর। তবু রিমলি সব কিছু মেনে , মানিয়ে নেয়। কলেজ থেকে ফেরার পথে ফুচকা ওয়ালা দেখে , রিমলি বলে - উফফ! ফুচকা! আই লাভ ফুচকা। চল না ইমলি দুজনে মিলে একটু ফুচকা খাই। বেশ টক, ঝাল দিয়ে ভালো ভাবে আলু টা মাখতে বলবো । ওহ! যা খেতে লাগবে না... ভেবেই আমার জিভ জল চলে আসছে।
- ইসস! রাস্তার কত ধুলো , ময়লা ওই ফুচকার আলু মাখা, জল এ পড়ছে। আমার তো ভেবেই গা গুলোচ্ছে। তোর কি করে এত খাওয়ার শখ জাগছে কি জানি। আমার তো দেখেই গা ঘিনঘিন করছে। (ইমলি)
- উমম! বললেই হলো! ওরা আলুর গামলা সবসময় ঢাকা দিয়ে রাখে। টক জল এর হাঁড়িও। তুই কি ফেসবুকের সব মিমস গুলো দেখে মাথায় এই গুলো ঢোকাস না কি রে? তাছাড়া দেখ হাতে গ্লাভস পরে তবেই ফুচকা বিক্রি করছে। চল, খাবি চল। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। ( রিমলি)
- না বাবা! আমি খাবো না। তোর ইচ্ছে থাকলে তুই খা !
- আচ্ছা । ঠিক আছে। তুই তবে একটু অপেক্ষা কর। আমি লোভ আর সামলাতে পারছি না। আমি খেয়ে আসি কয়েকটা মনের সুখে। ( রিমলি)
রিমলি ফুচকার দোকানের দিকে এগোতে লাগলো।
ওই শোন একবার.... ইমলির কন্ঠস্বর এ রিমলি থমকে দাঁড়িয়ে পিছু ফিরল। ইমলি রিমলির একটু কাছে গিয়ে বলল শোন না, তুই ফুচকা খা। আমি সামনের ওই ওয়াও মোমো তে গিয়ে এক প্লেট মোমো পার্সেল করে আসছি।
রিমলি একটু হেসে কি যেন কি ভেবে ফুচকার দোকানের সামনে এলো।
মন, প্রাণ ভরে ফুচকা খেল। ফুচকা খেয়ে রিমলি আরো কুড়ি টাকার পাপরিচাট কিনে খেতে খেতে ইমলি জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো। প্রায় পনেরো মিনিট পর ইমলি মোমো সপ থেকে বেরোলো। দূর থেকেই রিমলি দেখলো ওর মুখটা বেশ হাসি খুশি।
ইমলি সামনে আসতেই জিজ্ঞাসা করলো, - কি রে এত হাসিখুশি যে? মোমো তে কি স্যুপ ফ্রী পেলি।
- আরে, নারে। মোমো শপ এ একটা হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে দেখা হলো। ওহ! হেভি দেখতে ।ও আমায় ওর ফোন নম্বর টা দিয়েছে।
- আরে, এত বিশাল ব্যাপার। তাহলে এতদিন পর ইমলি সেন সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হতে চলেছে।
ইমলি মাথা নিচু করে বললো, - হয়তো।
- খুব পছন্দ হয়েছে দেখছি। এক দেখাতেই মিঙ্গেল হওয়ার এত ইচ্ছা ? ( রিমলি )
- তা তুই ঠিক ই বলেছিস
তারপর ফোন ইমলি সাথে ছেলেটার বেশ কয়েকবার কথা হয়।ছেলেটার নাম আকাশ। ও বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান। ও একটি মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত। ইমলির খুবই পছন্দ হয় আকাশকে। প্রায় একসপ্তাহ কথা বলার পর আকাশ প্রপোজ করে ইমলিকে।
আকাশ একদিন দেখা করতে বলে ইমলিকে ।
ইমলি ঠিক করে ও রিমলি কে নিয়ে দেখা করতে যাবে আকাশ এর সাথে।
সেই মতো রিমলিকে নিয়ে ইমলি দেখা করতে যায় আকাশ এর সাথে।
আকাশ ইমলিকে গোল্ডেন পার্কে বিকেল চারটার সময় দেখা করতে বলেছিল।
সেই মতো রিমলি ও ইমলিও চলে এসেছে গোল্ডেন পার্কে।
কিন্তু ওইসময় আকাশ কে দেখতে না পেয়ে ইমলি খুব অধৈয্য হয়ে পড়েছিল।
রিমলি বরাবরই একটু শান্ত। ও রিমলিকে বললো - দেখ রাস্তায় হয়তো জ্যাম। কেউ চারটায় বললেই কি ঘড়ির কাঁটায় কাটায় আসতে পারে। একটু অপেক্ষা করি আমরা। ঠিক চলে আসবে। ইমলি বিরক্তি প্রকাশ করে বললো , দেখ আমি আর পাঁচ মিনিট দেখবো। তারপর বাড়ি চলে যাব।।
কথা শেষ হতে না হতেই, দেখলো আকাশ আসছে।
মুহূর্তের মধ্যেয়েই ইমলির চোখে মুখে হাসির ঝলক খেলে গেল।
ঐতো আসছে আকাশ।
রিমলি দূর থেকে দেখলো সত্যি ই একটা হ্যান্ডসাম ছেলে হেঁটে আসছে। ও মনে মনে ভাবলো হ্যান্ডসাম ছেলে আবার মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত। ইমলির কপালটা ই খুব ভালো।
সামনে আসতেই প্রথমে ইমলি আর আকাশ হাত মেলাল। তারপর ইমলি পরিচয় করিয়ে দিল রিমলি সাথে।
তারপর আকাশ বললো - চলো একসাথে কোথাও ঘুরে আসি।
তিনজনে পার্ক থেকে বেরিয়ে এলো। আকাশ একটা বাইকের সামনে এলো। বলল -
চলো
- মানে? তুমি তো বলেছিলে তোমার বুলে রো চারচকা গাড়ি আছে!
- যদি বলি মিথ্যে বলছি? তাহলে কি তুমি আমায় ভালোবাসবে না? ( আকাশ)
- কখনোই না। ভালোবাসবো না।
ইমলি প্রচন্ড রেগে গেল। রিমলি ওকে বোঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যর্থ হলো।
- তুমি আমায় না তাহলে আমার গাড়ির নাম শুনে আমায় ভালবেসেছ তাই তো?
ইমলি কিছু না বলে হনহন করে পার্ক থেকে বেরিয়ে হাঁটা দিলো।
রিমলি প্রায় দৌড়ে গিয়ে ইমলিকে থামিয়ে বোঝালো - সব কিছুকে টাকা পয়সা দিয়ে হিসেব করতে যাস না ইমলি। খুব ভুল করছিস। ওতো ভালো কোম্পানি তে চাকরি করে তুই দেখে নিস ও সত্যি সত্যি একদিন ওই গাড়ি কিনে তোর কাছে আসবে। তুই ওর সাথে দুর্ব্যবহার করিস না। বেচারা তোকে ভালোবাসে।
- ওই রকম ভালোবাসার দরকার নেই। ( ইমলি)
- আচ্ছা, তবে দেখা যখন করতেই এলি আর একটু দাঁড়িয়ে যা। বেচারা কেমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে দেখ। ( রিমলি)
- তোর ইচ্ছে হলে দাঁড়া। ( ইমলি চলে গেল)।
রিমলি আকাশ এর কাছে আবার ফিরে এলো। বললো
আমার বন্ধুর জন্য আমি ক্ষমা চাইছি তোমার থেকে। আসলে ও অবুঝ।
- অবুঝ নয় রিমলি। আসলে ও লোভী। ওর মধ্যে শুধু বড়লোকি চাল আছে। আমি এক সপ্তাহ কথা বলে বুঝে গেছি। ঐরকম ভালোবাসার আমার ও দরকার নেই। আমি ও ওইসব মেয়েদের ঘৃণা করি।
রিমলি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললো আমায় একটু বড় রাস্তাটা অবধি লিভ দেবে তোমার বাইকে? আসলে ইমলি ত চলে গেল তাই আর কি
- অবশ্যই। এসো।
আকাশ এবার সত্যিই একটি ঝা চকচকে বুলেরও গাড়ির সামনে এসে গাড়ির দরজা খুলল।
রিমলি অবাক হয়ে বলল - এটা তোমার গাড়ি? তাহলে তুমি মিথ্যে কেন বললে ইমলিকে?
- ওকে পরীক্ষা করে দেখলাম রিমলি। ও আমার ভালোবাসার যোগ্য কিনা। যোগ্য তো তুমি।
পকেট থেকে একটা হিরের আংটি বের করে অকাশ প্রপোজ করলো রিমলি কে । উইল ইউ ম্যারি মি রিমলি? আমি এর পরের সপ্তাহেই তোমার বাড়িতে যাবো মা বাপি কে নিয়ে বিয়ের কথা বলতে। আমি তোমায় প্রেমিকা না করে সরাসরি বউ করে নিতে চাই।
রিমলির চোখে জল।
এরপর রিমলি উঠে বসলো আকাশ এর গাড়িতে।
ইমলি বড় রাস্তা থেকে দেখতে পেল রিমলি চেপে আছে আকাশ এর ঝা চকচকে চার চাকা গাড়িতে।
সমাপ্ত
ভালোবাসা টাকা পয়সা দেখে হয়না। মন থেকে হয়। অর্থ থাকলেও অনেক সময় মানসিক শান্তি পাওয়া যায় না।
0 মন্তব্যসমূহ