একটি ভিখিরি ছেলের গল্প ( হৃদয়স্পর্শী গল্প)

 

A painfull begger story

রাজু আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বেশ অনেক গুলো টাকা পেল।রাজুর  দুটো পা ই  পঙ্গু। কোনো রকমে দুটো হাতের ভর দিয়ে ও ভিক্ষা করে ওর দিন যাপন করে। ওর বর্তমান জীবনের মতোই অতীত টা খুবই ভয়ংকর। রাজু যখন হয় জন্মে থেকেই ওর দুটি পা এর হাঁটুর নিচুর অংশ থেকে নেই। অর্থাৎ ও জন্মগত প্রতিবন্ধী।

........…..............................


রাজুর বাবা একটি কারখানা য় কাজ করতো। ওই কারখানা তেই ওর মা ও প্যাকিং এর কাজ করতো। রাজুর মামার বাড়ির দাদু অর্থাৎ  রাজুর মা মিলি জন্মানোর কয়েক বছর পরেই মারা যায়। তাই মিলিকে অল্প বয়সে কাজে নামতে হয়। মিলির মা লোকের বাড়ি কাজ করে সংসার চালাতেন। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোতো। তাই মিলির পড়াশোনা হয় নি। অল্প বয়সেই পাড়ার একজন মাসির সহায়তায় মিলি একটি কারখানায় প্যাকিং এর কাজ টা পায়। কাজটা পাওয়ার পর মিলি দের মা মেয়ের সংসার টা বেশ হেসে খেলে চলে যাচ্ছিল।মিলির মাকে আর লোকের বাড়ি কাজ করতে যেতে হত না। মিলি সকাল বেলা হলেই  আটটা র ট্রেন ধরে কাজে চলে যেত। আর মিলির মা মিলির জন্য রান্না করে দিত। বাড়ির কাজ করতো। বেশ সুখেই কাটছিল মা- মেয়ের সংসার। 

একটি ভিখিরি ছেলের গল্প ( হৃদয়স্পর্শী গল্প)

কারখানাতেই অন্য পোস্টে কাজ করতো দীপক ঘোষ। মাল বাইন্ডিং এর কাজে। সেখান থেকেই মিলির সাথে দীপক এর পরিচয়। আসতে আস্তে বন্ধুত্ব। ও পরে এই বন্ধুত্ব ভালোবাসায় পরিনত হয়। দীপক  এর পরিবারে ছিল দীপক এর মা বাবা। কারখানায় এক সঙ্গে কাজ করার সুবাদে দীপক আর মিলির মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দীপক আর মিলি কাজের জায়গাতে কথা বলা ছাড়াও ছুটির পর একসঙ্গে সময় কাটাত। ধীরে ধীরে কারখানার সকলেই তাদের সম্পর্কে র কথা জানতে পেরে যায়। সবাই ই চাইতো দুই জনের বিয়েটা হোক। একদিন দীপক ও মিলির কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মিলি বলে যদি দুই বাড়ি থেকেই এই বিয়ে মেনে নেয় তবেই সে এই বিয়ে করবে। দীপক কে মিলি তাদের সম্পর্কের কথা তাদের বাড়ি জানাতে বলে। দীপক তাতে রাজি হয় না। কারণ জানতে চাইলে দীপক এর কোনো সঠিক উত্তর না দিয়ে কথা ঘুরিয়ে বলতো আগে মন্দিরে গিয়ে বিয়েটা করি তারপর বললে ওরা তো ছেলে ছেলের বউ কে ফিরিয়ে দেবে না! নিশ্চই ঘরে তুলবে। তবু মিলির মধ্যে সন্দেহ এর দানা বাধে। মিলির সন্দেহজনক মুখের দিকে তাকিয়ে এক রাশ হেসে বলে আগে তোমার মায়ের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেবে তো! কি হলো মিলি দেবে না? মিলি খুশি হয়ে ওদের বাড়ি নিয়ে এসেছিল। মিলির মায়ের ও দীপক কে দেখে ভারী পছন্দ হয়েছিল। তিনি এই বিবাহে সম্মতি দেন। কিন্ত দীপক দের বাড়ি বিয়ের ব্যাপারটা বলতে বললে দীপক বেঁকে বসে । খানিকটা আপত্তি সত্ত্বেও বাপ মরা মেয়ের সুখের দিকে চেয়ে মিলির মা  দীপক এর সাথেই বিয়ে দেন মন্দিরে।


কিন্তু বিয়ের পর মিলি শশুর বাড়ী গেলে তাকে ও বাড়ির কেউ মেনে নেয় নি। গালিগালাজ করে তাড়িয়ে দিতে চায়। শেষ মেষ দীপক এর ই টাল বাহানায় মিলির ওই বাড়িতে জায়গা হয়। দীপক এর বাড়ী বলতে টালির চাল দেওয়া দু কামরা ঘর এক ফালি রান্না ঘর ও একটা ছোট বাথরুম। সেখানেই মিলি নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছিল। শশুর, শাশুড়ি কে আপন করে নিয়েছিল । বিয়ের পর মিলি কাজ টা ছেড়ে দেয়। এরপর চলে মিলির ওপর ওর শশুর শাশুড়ির মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। শুধু শশুর শাশুড়ি নয়, দীপক ও কাজ থেকে ফিরে মদ খেয়ে মিলিকে গালিগালাজ করতো। মিলি তারঅত্যাচার এর কথা কোনো দিন ও ওর মা কে বলে নি। পাছে ওর মা কষ্ট পায়। অন্যদিকে মিলিকে বিয়ে দেওয়ার পর মিলির মা এর অবস্থাও শোচনীয় হয়ে পড়ে। লোকের বাড়ি কাজ করতে আবার শুরু করে। কিন্তু বয়স হয়ে যাওয়ার জন্য লোকের বাড়ি ও ঠিক মতো কাজ ও করতে পারে না। যা হোক করে তার দিন চলে।  আর মিলিও কোনোভাবে ওর মা কে সাহায্য করতে পারে না। 


এই ভাবেই দুটি সংসার অভাব অশান্তিতে চলতে থাকে। বছর দুয়েক পর মিলি সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়ে। মিলি গর্ভের সন্তানকে নিয়ে ওর অনেক আশা ছিল। কিন্তু সে আশা ব্যর্থতায় পরিণত হয়। মিলি ভেবেছিল তার বাচ্ছা টা হয়ে যাওয়ার পর হয়তো শশুর শাশুড়ি ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু এইসব কোনো কিছুই হলো না। মিলির সব স্বপ্নকে ব্যর্থ করে মিলি জন্ম দিল একটি প্রতিবন্ধী ছেলের। ছেলে প্রতিবন্ধী হয়েছে জানার পর থেকেই দীপক হাসপাতাল এও ছেলেকে দেখতে যায় নি। সুতরাং বাচ্ছা হওয়ার পর মিলির শশুর বাড়িতে ওর আর জায়গা হয় নি। একরত্তি বাচ্চাকে নিয়ে মিলি চলে আসে বাপের বাড়ি। মিলির মা তখন একটা পেট চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে। বাধ্য হয়ে মিলির  মা ভিক্ষা বৃত্তির পথ বেছে নেয়। এখনেই ওদের দুঃখের শেষ নয়। মিলির ছেলে রাজুর জন্মের কয়েকমাস পর মাত্র পাঁচদিনের জ্বরে মিলি মারাও যায়। 


এরপর  চলে দিদা আর নাতির বেঁচে থাকার সংগ্রাম। দু- বেলা দুমুঠো খাওয়ার আশায় রাজুও ভিক্ষা করতে করতে বড় হয়ে যায়। দিদাও একদিন হঠাৎ রাজুকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি দেয়। এখন রাজু কেবল একা। তবুও এই প্রতিবন্ধী রাজুর একার পেট চালানোই এক আধ দিন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। পেট ভরে খেতে না পেলেও রাজু কিন্তু লোভী বা চোর নয়। পেটে ক্ষুধার জ্বালা থাকলেও ও কোনোদিন কোনো দোকান থেকে খাবার চুরি করে নি।


রাজুর খুব ইচ্ছা একটা ভালো রেস্টুরেন্ট এ একদিন ভালো ভাবে খাওয়ার। কিন্তু এর আগে কোনোদিন সে রেস্টুরেন্টে খায় নি। আজ ভিক্ষে করে ওর কাছে বেশ কয়েকটা টাকা জমেছে। ও দুটি হাতের ভর দিয়ে পাকা রাস্তা পেরিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে র সামনে এলো। তখন দুপুর বেলা। রেস্টুরেন্ট ভর্তি লোক। রাজু রেস্টুরেন্টে ঢুকেই নিজেকে কেমন একটা মনে করল। ও দেখলো রেস্টুরেন্ট এর সবাই ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে ঘৃণার চোখে তাকাচ্ছে। রাজু হাতের ভর দিয়ে একটি টেবিল এর সামনে এলো । তৎক্ষণাৎ ওই টেবিলকে ঘেরা চেয়ার এর লোক গুলো উঠে পড়ল। কাস্টমার রা উঠে পড়ছে দেখে ওয়েটার ধমক দিয়ে রাজুকে বাইরে বের করে দিলো। তারপর রেস্টুরেন্টে র  বাইরে একপাশে নীচে রাজুকে ওরা খেতে দিলো। রাজু খেতে খেতে দেখলো ওয়েটার রা কত পরিশ্রম করছে তাড়াহুড়ো করে খাবার আনছে, কেউ টেবিল মুছছে কেউ বা বাসন পত্র মুছুছে, মাজছে। রাজুর খাওয়া হয়ে গেল। ও আজ তৃপ্তি করে খেল। খাওয়া হয়ে গেলে ওয়েটার দেখলো বিল এর মধ্যে প্রাপ্য টাকা ছাড়াও বেশ অনেক গুলো টাকা বকশিশ ছিল। 

রাজুর এই ব্যবহার এ ওয়েটার এর চোখে জল এলো। ওয়েটার তখন ছুটে গিয়ে আরো ওয়েটার দের বিষয়টি জানালো। সব ওয়েটার রাই এবার রাজুকে স্যালুট জানালো। রাজুরও চোখে জল। এই প্রথম রাজু দুঃখে নয় সুখে, আনন্দে কাঁদলো।


সমাপ্ত


গরিব বলেই মানুষকে অবহেলা করা উচিত নয়। গরিব রাই বোঝে কর্মের কষ্ট। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ