ছবি : সংগৃহীত
- আসুন । সাবধানে আসবেন। আসলে এখান টা একটু অন্ধকার। আপনি নতুন তো তাই অসুবিধা হবে একটু।
ছাদে ওঠার সময় অন্ধকার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে প্রিয়া লাজুকে গলায় বলল প্রাণময় কে।
প্রত্যুত্তরে প্রাণময় এর দরাজ গলা থেকে ভেসে এলো, - আচ্ছা ঠিক আছে।
ছাদের দরজাটা খুলতেই এক ছুট্টে বিকেলের হলুদাভ আলোটা প্রিয়ার সারা শরীর টাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ছুঁয়ে গেল।
প্রাণময় হটাৎ এই প্রিয়াকে আবার নতুন ভাবে আবিষ্কার করলো। উজ্জ্বল দুটি ঘন কালো চোখে কাজল এর বাহার প্রিয়ার মুখ এর আরো সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে । শেষ বেলার সূর্যের হলুদ এ আলোয় প্রিয়ার মুখে একটা অনন্ত আভা নিয়ে এসেছে । সব কিছু মিলিয়ে প্রিয়াকে প্রাণময় এর দারুন ভালো লাগলো।
প্রিয়া লাজুকে গলাতে কথা বললেও প্রাণময় লক্ষ্য করলো প্রিয়া খুবই স্মার্ট। লাল পাড় হলুদ শাড়িতে লাল ঝলমলে চুড়ি তে বেশ মানিয়েছে মেয়েটিকে । কপালের ছোট্ট লাল টিপ টা যেন সূর্যটার মতোই উজ্জ্বল।
ছাদে উঠে দুজন পরস্পর দাঁড়ালো।
- আচ্ছা আপনাদের এখানে দেখছি অনেক নতুন নতুন বিল্ডিং হচ্ছে। চারদিকে ফ্ল্যাট - বাড়ি। আপনাদের বাড়িটি চারপাশের আরো বাড়ি গুলোর থেকে দেখছি পুরোনো। ( প্রাণময়)
- হ্যা। আসলে আমাদের বাড়িটা আমার ঠাকুরদা করেছিলেন। সেইদিক থেকে ঠিকই বলেছেন এই পাড়ায় আমাদের বাড়িটি সবচেয়ে পুরোনো।
প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে প্রাণময় বললো , আচ্ছা নীচে আমার মা, বাবা, পিসি, মাসির সাথে আপনাদের বাড়ির সকলের আমার আর আপনার দেখাশোনা নিয়ে কথা হচ্ছে। ওনারা দু পক্ষই এই একটু আগে সিদ্ধান্ত নিলেন আমরা যদি একান্তে কথা বলতে চাই তো ওনাদের কোনো অসুবিধা নেই। তো আমি জানতে চাইছি আমার সাথে একান্তে কথা বলতে আপনার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো ? ( প্রাণময়)
- অসুবিধা হলে কি আমি আসতাম আপনার সাথে কথা বলতে ছাদে? ( প্রিয়া)
- তা অবশ্য ঠিক। আচ্ছা আমি শুনলাম আমার ছবি দেখে আপনি নিজেই নাকি এই দেখাশোনায় মত দিয়েছেন?( প্রাণময়)
- হ্যা। কারণ ছবি দেখেই আপনাকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছিল। (প্রিয়া)
প্রাণময় খানিকটা হাসলো।
- আপনি হাসছেন যে? ( প্রিয়া )
- না না। হাসি নি ঠিক। কিন্তু এখনকার যুগে দাঁড়িয়ে একটি ছেলের ছবি দেখেই তাকে পছন্দ হয়ে গেল, এটি যেন কেমন অদ্ভুত লাগলো কথাটা। আচ্ছা কোনো মানুষের ছবি দেখলেই মানুষ টিকে চেনা যায় ?প্রাণময়
- না ঠিক তা নয়। কিন্তু একটা কথা কি বলুন তো মুখ ই হলো মানুষের আয়না।( প্রিয়া)
- খুব ভালো লাগলো আপনার কথা গুলো । আচ্ছা আপনি কি জানেন আমার আগেও একটা বিয়ে হয়েছিল। এবং আমি ডিভোর্সি।
- হ্যা। শুনেছি। কিন্তু আপনার বিয়েটা ভেঙে গেল কেন ?
-কিছু কিছু জিনিস মানতে এবং মানাতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল দুজন এরই। মত এর মিল হচ্ছিল না। কম্প্রোমাইজ আর স্যাক্রিফাইস এই দুটো শব্দ এতটাই আমাদের সম্পর্কে র মধ্যে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে গিয়েছিল আমরা হাঁপিয়ে উঠেছিলাম।
-কিন্তু আমি তো শুনেছিলাম আপনারা নাকি প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু আপনার কাছের মানুষটা এত তাড়াতাড়ি বদলে গেল যে ডিভোর্স এর সিদ্ধান্ত নিতে হলো? ( প্রিয়া)
-মানুষ কি আর বদলায় প্রিয়া? বদলায় তো সময়, পরিস্থিতি। সময়ের সাথে সাথে ওর ও বদল হলো। ও আর আমার সাথে বিশেষ করে আমাদের সাথে থাকতে চাইল না। মানে আমার মা, বাবা র সাথে। এমনকি আমার সাথেও। আমার প্রাক্তন স্ত্রী কে আমি প্রথম দেখেছিলাম আমার পিসির ছেলের বিয়েতে। সেখান থেকেই ফোন নম্বর আদান প্রদান। ভালো লাগা, পরে ভালোবাসা। তারপর বিয়ে। ব্যাস এই ছিল আমার অতীত ইতিহাস। এইটুকুই। ( প্রাণময়)।
প্রাণময় এর কথা শেষ হয়ে গেলেও প্রিয়া তখনও প্রাণময় এর দিকে চেয়েছিল। প্রাণময় প্রিয়াকে উদেশ্য করে প্রসঙ্গ পাল্টে বললো,
- আচ্ছা, প্রিয়া আপনার হবি কি ?
- হবি অনেক কিছু। আমি ডিজিটাল এর যুগেও এখনো ও গল্পের বই পড়তে খুব ভালোবাসি। স্মার্ট ফোন ঘাটার চেয়েও গল্পের বই ই আমার কাছে বেস্ট। তাছাড়া গান শুনতে ভালোবাসি। টুকটাক রান্নায় মা কে সাহায্য করি। আপনার কি হবি ? ( প্রিয়া)
- হবি ? হবি তো অনেক কিছুই ছিল। ছোট বেলায় মাছ ধরার নেশা ছিল। কুল পাড়ার নেশা ছিল। আর একটু বড় হতেই ক্রিকেটের প্রতি নেশা জেগেছিল খুব। তারপর পড়াশোনার চাপে আর প্যাকটিস ও হত না এরপর মাধ্যমিক। উচ্চ মাধ্যমিক। পড়াশোনার আরো চাপ। ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভীষণ চাপ। তারপর চাকরি। এই ভাবেই জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলেছি প্রতিনিয়ত। আজও। জানি এইভাবেই প্রতিটা মানুষকেই চলতে হবে। ভেবে ছিলাম আর কোনোদিন বিয়ে করবো না। কিন্তু সারাদিনের কাজের পর যখন ক্লান্ত অবসন্ন শরীর এ ফিরি তখন আমার সারাদিনের সুখ, দুঃখের কথা গুলো কাউকে শেয়ার করতে পারি না। সেই মানুষটার বড্ড অভাব অনুভব করি। ( প্রাণময়)
প্রাণময় এর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রিয়ার কেমন একটা মনে হলো । খুব মায়ামাখা মুখ প্রাণময় এর। কিছুক্ষন দুজন দুজন এর দিকে তাকিয়ে রইলো।
ছাদের দরজা দিয়ে গলা বাড়িয়ে পীযুষ মানে প্রিয়ার ভাই বললো, দিদি তোদের এবার নীচে সবাই ডাকছে।
পীযুষ এর গলার আওয়াজ পেয়ে ওদের স্তম্ভিত ফিরল।
প্রিয়া বললো তুই যা। আমরা যাচ্ছি।
কথা বলতে বলতে কখন যে সূর্য পশ্চিম গগনে অস্ত গেছে ওরা খেয়াল করে নি।
- চলুন ওরা নীচে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। ( প্রাণময়)
আচ্ছা প্রিয়া আপনার র প্রিয় খাবার কি ?(প্রাণময়)
- উমমম। চাউমিন। আই লাভ চাউমিন।( প্রিয়া)
- ওহ! চাইনিজ! গ্রেট।( প্রাণময়)
- আর আপনার? ( প্রিয়া)
- আমার পরোটা আর খাসির মাংস।(প্রাণময়)
- বাহ! বেশ বাঙালি খাবার তো।( প্রিয়া)
- সূর্য অস্ত চলে গেছে। আধো আলো আধো অন্ধকারে বেশ অস্পষ্ট লাগছে এখন প্রিয়াকে। প্রিয়া বলল চলুন নীচে যাওয়া যাক।
প্রাণময় প্রিয়ার পিছন পিছন আসতে লাগলো।
- আচ্ছা আপনার মতামত টা তো পেলাম না? ( প্রাণময়)
- খাসির মাংস টা আমি রান্না করতে পারি। পরোটা বেলাটা মায়ের থেকে শিখে নেব। আর তোমায় আমায় মিলে গড়ে নেব সুখ দুঃখের সাম্রাজ্য।
প্রিয়ার এইরূপ কথা বলার মাধ্যমে ই প্রাণময় তার মনের কথা বুঝে নিল।
সমাপ্ত
ডিভোর্স হয়ে যাওয়া মানেই সেই ছেলেটি কিংবা মেয়ে টি খারাপ নয়। কিছু পরিস্থিতি তে পরেই মানুষের বিচ্ছেদ হয়।
0 মন্তব্যসমূহ