তোমাকে চাই ( প্রথম পর্ব)

Love story


- মা, পিসি কে বলো না আর এক পিস মাছ দিতে, ডালের  সাথে গরম ভাত টা মাখতে মাখতে শ্রীজা বলল


মৌলি কে মানে শ্রীজার মা কে আর বলতে হলো না। মিঠু পিসি প্রায় তড়িঘড়ি রান্না ঘর থেকে এসে খুন্তি করে একটা গরম মাছের পেটের অংশ টা শ্রীজার পাতে রাখতে রাখতে একরাশ বিরক্তি আর ব্যস্ততার সাথে বললো, শ্রীজা দিদি তুমি তো জানো এই সময় তোমার মা ঠাকুর ঘরে ব্যস্ত থাকে, তবু তুমি কেন মা কেই হুকুম করো। আমি তো রান্না ঘরেই ছিলাম। আমাকে হাকলেই তো চলতো।


শ্রীজা মুচকি হেসে পিসির মুখে চেয়ে এক খাবল ভাত আবারমুখে চালান করে বললো, মা কে রাগানোর জন্য গো। বোঝনা তুমি?


- সব বুঝি শ্রীজা দিদি। কিন্তু এ তোমার বাজে অভ্যাস, কাপড়ের আঁচল খানি কোমরের গুজি থেকে খুলতে খুলতে মিঠু বললো।



(গল্পের নায়িকা শ্রীজা মজুমদার। বড়ো লোক ব্যবসায়ী অনিমেষ মজুমদারের একমাত্র বখে যাওয়া হিরের টুকরো সন্তান। শ্রীজার মা মৌলি মজুমদার। ধার্মিক মহিলা। খুবই দয়ালু, মমতাময়ী। মাটির মানুষ। মিঠু পিসি শ্রীজা দের বাড়িতে কাজ করে।  অভাবের সংসার। স্বামী বিয়ের পর অন্যত্র বিয়ে করেছে অনেক দিন আগেই। মিঠুর একটা ছেলে আছে নাম সূর্য। ওই মিঠুর পৃথিবী। ওকে আগলেই বেঁচে আছে মিঠু। শ্রীজা পিসিকে শুধু পিসি বলেই ডাকে)


হাতে প্রসাদের থালা নিয়ে মৌলি দেবীর প্রবেশ, 


- কি হয়েছে কি শ্রীজা ডাকছিলস কেন?


প্রসাদের থালা থেকে একটা সন্দেশ মিঠুর হাতে দিয়ে মৌলিদেবী শ্রীজার পাশে এসে দাঁড়ালেন।


মাছের কাঁটা ছাড়াতে ছাড়াতে শ্রীজা বললো কই আমায় তো প্রসাদ দিলে না?


- পাগল হয়েছিস নাকি ? এটো কাঁটা হাতে কেউ আবার প্রসাদ নেয়। আগে খেয়ে হাত ধুয়ে আয় তারপর দেব।


- তোমার এত বিচার তোমার কাছেই রাখো মা। মুখে শেষ বারের মতো মাছ এর শেষ অংশ টা মুখে ভরে চিবোতে চিবোতে শ্রীজা চেয়ার থেকে উঠে বেসিন এর দিকে এগোলো।


- কি হলো, ভাত গুলো না খেয়েই যে উঠে পরলি?


মুখ , হাত চটপট ধুয়ে টাওয়াল এ হাত মুছে শ্রীজা হাত পেতে মায়ের দিকে চাইলো। 

- কি হলো? 

- প্রসাদ দেবে তো! হাত পেতে দাঁড়িয়েই আছি সেই থেকে।

- তুই ভাত টা পুরো টা খেলি না কেন ? হাতে সন্দেশ টা দিয়ে মৌলিদেবী বললেন।


মা তোমায় আর পিসিমনি কে কত বলেছি আমায় ভাত দিও না। আমি দিনদিন  কেমন মোটা হয়ে যাচ্ছি। সেই কলেজ বেরোনোর আগে ভাত ই খাইয়ে পাঠাবে। আমার ভালো লাগে না। আর হ্যা, পুজোর প্রসাদ এ একটা গোটা সন্দেশ দেওয়ার দরকার নেই। প্রসাদ অল্প একটু মুখে দিলেই হলো। 

গোটা সন্দেশ থেকে একটু খানি ভেঙে খেয়ে শ্রীজা পুরোটা মায়ের মুখে ভোরে দিল।


বাবা! এত দেখছি সকাল সকাল মা মেয়ের ভালোবাসা খুব বেড়েছে। উপর থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অনিমেষ বাবু খোশমেজাজে বললেন।


-গুড মর্নিং বাপি। আই লাভ ইউ বলে শ্রীজা ছুটে গিয়ে অনিমেষ বাবুকে জড়িয়ে ধরলো।


- গুড মর্নিং। তা এত সকাল সকাল কোথায় বেরোচ্ছ শ্রীজা মা?


হাতের রিস্ট টা বাড়িয়ে দিয়ে শ্রীজা বললো এখন কটা বাজে বাপি দেখেছো? 

এক গাল হেসে - তাই তো ? আমি তো খেয়াল ই করি নি । বেলা এগারোটা বেজে গেল। আমাকেও তো কারখানায় যেতে হবে। 


শ্রীজা মা একটু ওয়েট করে যা। আমি কারখানায় যাওয়ার পথে নিজে তোকে কলেজে ড্রপ করে দিয়ে আসছি।


বাপির গালে একটা চুমু খেয়ে - না বাপি আমার অলরেডি অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।  আমি ড্রাইভার কাকু কে নিয়ে চললাম। বলতে বলতে শ্রীজা সকলকে হাত নাড়া দিয়ে টা টা করতে করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল।


গাড়ির ড্রাইভার বাইরে গাড়ি নিয়ে রেডি ই ছিল। শ্রীজা গাড়িতে এসে বসলো। ড্রাইভার সঞ্জয় গাড়ি স্টার্ট দিলো।

দরজা থেকে মৌলি দেবী হাত জোড়া করে বিড়বিড় করে বললেন - দুগ্গা, দুগ্গা।


এতক্ষণ বাবা মেয়ের আদিখ্যেতা দেখছিল মৌলি দেবী ও মিঠু। এ অবশ্য নতুন কিছু না। 


শ্রীজা বেরিয়ে যাওয়ার পরই ডাইনিং টেবিলটা তাড়াতাড়ি মুছে দিয়ে অনিমেষ বাবুকে খেতে দিলেন।


ডিমের পোচ টা চামচে করে কাট তে কাটতে অনিমেষ বাবু জিজ্ঞাসা করলেন, হ্যারে মিঠু তোর ছেলে যেন কিসে পড়ে? 


- আজ্ঞে, দাদা বাবু এই বছরে ইঞ্জি ...নিরিং এ ভর্তি হলো।


অনিমেষ বাবু বেজায় বিষম খেলেন । কাশ তে শুরু করলেন। 


মাথায় তিন বার ফুঁ দিয়ে পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে মৌলিদেবী বললেন তোমায় কতবার বলেছি খাওয়ার সময় কথা বলবে না। জল খাও তো ! 


জল খেয়ে একটু ধাতস্থ হয়ে, 


চোখ, মুখ মুছে, বাপ রে, বাপ.... তোর যা উচ্চারণ মিঠু। আমি  তো  এক্ষুনি শেষ হয়েই যাচ্ছিলাম।


মিঠু লজ্জায় মাথা নোয়ালো।

- আসলে দাদাবাবু ....আমি তো লেখাপড়া করি নাই।

এক গাল মিষ্টি হাসি নিয়ে মিঠু আবার বললো, আমার সূর্য কিন্তু আমাদের এই কলকাতা তেই খুব বড় কলেজে এবারে ভর্তি হয়েছে। 

সবই আপনাদের দয়ায় দাদা।

আচ্ছা ঠিক আছে মিঠু অনেক হয়েছে। এবার রান্না ঘরে যা তো মেলা বাসন পড়েছে মাজ গে.... তড়িঘড়ি মৌলিদেবী মিঠুকে রান্নাঘরে পাঠিয়ে দিলেন।


মিঠুর মুখে সূর্যের গুনগান শুনে অনিমেষ বাবু বেশ বিরক্তই হলেন।

বিড়বিড় করে নিজের মনে খেতে খেতে কি যেন বললেন।

আবার কি মনে পড়তেই ভ্রু জোড়া কুঁচকে মৌলিদেবীর মুখের দিকে তাকালেন

মৌলি খানিকটা ভয়ে ভয়ে আড় চোখে তাকিয়ে বলল কি হলো কি খাও তাড়াতাড়ি তোমার তো দেরি হচ্ছে।


-আচ্ছা, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ানোর এত খরচ মিঠু পাচ্ছে কোথা থেকে? 

আমতা আমতা করে ...আমি কি করে জানবো। তাছাড়া মিঠুর ছেলে সূর্য পড়াশোনায় যথেষ্ট ভালো । হয়তো স্কলারশিপ পায়। তাতেই হয়ে যায়।

-আরে, ছাড়ো তো। যতসব ছোটলোক দের ব্যাপারস্যাপার বিরক্তির সুরে বলে অনিমেষ বাবু আবার খাওয়ায় মন দিলেন। 

-- কি বলছো টা কি! আস্তে বলো মিঠু শুনতে পাবে।

- আরে, ছাড়ো তো, এই অনিমেষ মজুমদার কেউ কে পরোয়া করে না। কলকাতা শহরে আমার পাঁচ - পাঁচটা বিল্ডিং। তিনটে ফ্যাক্টরি। চারটে গাড়ি। সব কিছু আমি নিজে করেছি। আজ আমি শহরের সব গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে ওঠাবসা করি। 

চলবে....







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ