পরকীয়া করতে গিয়ে বউ এর হাতে ধরা পরে কি হলো স্বামীর পড়ুন ছোট গল্প 'পরকীয়া'

Foreigner


শিপ্রার প্রতিদিনই ঘুম ভাঙে সেই কাক ভোরে। ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠে ওকে তরি ঘড়ি ঘরের বাসী কাজ সামলে রান্না করতে হয়। শিপ্রার স্বামী সুমন সকাল সাত টার ট্রেনে অফিস যায়। সকাল এর চা থেকে শুরু করে স্নান করার গরম জল অফিস বেরনোর আগের খাবার, অফিস এর লাঞ্চ বক্স সমস্ত কিছু শিপ্রা একাই করে। শিপ্রার শাশুড়ি খুবই অসুস্থ। সুগার, হাইপ্রেসার , বাতের ব্যাথা তাঁকে একপ্রকার কাবু করে রেখেছে। উনি সারাদিন শুয়ে বসেই থাকেন।  সুমনের মা অর্থাৎ শিপ্রার শাশুড়ি সুরভী দেবী এইজন্য খুবই হীনমন্যতায় ভোগেন। নিজে কিছুই করতে পারছেন না, ঐদিকে শিপ্রার এত খাটুনি উনি সহ্য করতে পারেন না। প্রায়ই সুরভী দেবী শিপ্রা কে বলে - একা হাতে সমস্ত কাজ সামলাস, তোকে কত করে বলি সুমনকে বলে একটা কাজের লোক ঠিক কর। শিপ্রা হাসি মুখে বলে, আমার কোনো কষ্ট হচ্ছে না মা। এত আমার নিজের বাড়ি, নিজের কাজ । আর নিজের কাজ তো নিজেকেই করা ভালো তাই না? তবে আমি তো তোকে দুটো অনাজ কেটে দিয়েও সাহায্য করতে পারি শিপ্রা। না মা, আপনার বয়স হয়েছে। শরীর ভালো না। বাতের ব্যাথা আপনাকে কিছু করতে হবে না। বলছি তো আমার কোনো অসুবিধা হয় না। সুমন ও শিপ্রাকে একটা কাজের লোক এর জন্য অনেকবার বলেছে কিন্তু শিপ্রা ওর নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। শাশুড়ি বর এর সাথে শিপ্রা খুবই সুখে , আনন্দে দিন কাটাতে থাকে। সুমন ও শিপ্রা কে খুব ভালোবাসে। আর শিপ্রা সুমন ও ওর মা কে খুব যত্ন করে। খুব খেয়াল রাখে শাশুড়ি মায়ের। রান্না করতে করতে শত কাজের মাঝেও সকাল সকাল গ্যাসের ট্যাবলেট প্রেসার এর ট্যাবলেট শাশুড়ি মা কে খাইয়ে দিয়ে যায় শিপ্রা। সুরভী দেবী বলেন তুই তোর কাজ কর। আমি সময় মতো নিজে নিয়ে খেয়ে নেব। কিন্তু শিপ্রা প্রতিদিন নিজেই খাইয়ে দেয় সুরভী দেবীকে। পাড়া, প্রতিবেশী বা আত্মীয় স্বজন কেউ আসলে বাড়িতে সুরভী দেবী শুধু বউ মা রই প্রশংসা করেন। এইভাবেই সুখে, আনন্দে শিপ্রা ও সুমনের বিবাহিত জীবনের দুইটি বছর গেল পার হয়ে। 
হটাৎ একদিন শিপ্রা মাঝ রাত থেকেই বমি শুরু হলো। সুমন স্বাভাবিক ভাবেই খুব ভয় পেয়ে গেল। শিপ্রার মনে হল হয়তো খাওয়া দাওয়ার গোলমাল এর কারণ এই এইরকম হচ্ছে। মাঝ রাতে বার তিনেক বমি হলো। সুমন অস্থির হয়ে উঠলো। ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবে বলে শিপ্রা কে জোর করল। শিপ্রা রাজি হলো না। বললো হয়তো হজমের সমস্যার জন্য হচ্ছে ।শিপ্রা বললো ও কিছু না। আপনাআপনি ঠিক হয়ে যাবে। অনেক পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও শিপ্রা ডক্টর এর কাছে যেতে রাজি হলো না। সুমন সারারাত ঘুমোতে পারলো না। আমি এখন ঠিক আছি সুমন । তুমি এত চিন্তা করো না তো। শিপ্রার কথায় একরাশ অভিমান উগরে দিয়ে সুমন বলে তুমি নিজের যত্ন একটুও করো না। আমার আর মায়ের দেখাশোনা করে করে নিজের শরীর এর কি হাল করেছ দেখেছো। একরাশ অভিমান নিয়েই সেই রাত টা কোনো ভাবে দুজন এর কেটে গেল। সকাল বেলা সুমন কোনো কথা না বলেই অফিস বেরিয়ে গেল। রোজকার মতো সেইদিন ও শিপ্রা টিফিন করে দিল। কিন্তু সুমন গুমরা মুখো হয়েই থাকলো। শিপ্রা কথা বলার চেষ্টা করলেও সুমন কথা বলল না। অভিমান নিয়েই অফিস গেল। এইদিকে শিপ্রার সকালের দিকেও গা গুলছিল। শিপ্রা ও সুমনের এই মান অভিমান এর পালা সুরভী দেবীর চোখে পড়েছিল। কিন্তু ওদের কিছু বুঝতে দেন নি। উনি ভাবলেন স্বামী স্ত্রীর মধ্যে মান অভিমান হতেই পারে। এখানে তার না ক গলানোর কোনো দরকার নেই। কিন্তু সুমন অফিস চলে যাওয়ার পর শিপ্রার মাথাটা কেমন ঘুরতে লাগলো। ও কোনো রকমে রান্না ঘর থেকে টলতে টলতে ডাইনিংয়ে এসে সোফায় ধপ করে বসে পড়লো।
- শিপ্রা কি হয়েছে তোর? ঐরকম করছিস কেন?
সুরভী দেবী চিৎকার করতে করতে পা টেনে টেনে কোনো ক্রমে শিপ্রার কাছে এলো। শিপ্রা কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু ও সোফা থেকে উঠে সোজা বেসিন এ গিয়ে বমি করতে শুরু করলো। চোখে মুখে জল দিয়ে এসে শিপ্রা বললো, কাল রাত থেকেই মা বমি হচ্ছে আর এখন কেমন মাথাটা ঘুরে গেল। সুমন বললো ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাবে। আমি বারণ করলাম ভাবলাম সকালের মধ্যেই হয়তো সেরে যাবে। কিন্তু সারলো না তো দেখছি। ভাবছি ও অফিস থেকে ফিরলেই ডক্টর এর কাছে যাবো। সুরভী দেবীর চোখে মুখে তখন খুশির ঝিলিক। শিপ্রা অবাক হয়ে বলল মা তুমি হাসছো কেন? 
- ওহ! তবে এই ছিল তোদের মান অভিমানের ব্যাপার?
- ওরে তুই এখুনি সুমনকে ফোন কর। এখুনি অফিস থেকে চলে আসতে বল।
- কিন্তু কেন মা? আমি এখন মোটামুটি ঠিক আছি। ও ফিরলে তারপর যাবো ডক্টর এর কাছে।
- যা বলছি শোন, তুই এখুনি ফোন কর সুমন কে। 
শিপ্রা ফোন ধরিয়ে দিল সুরভী দেবীকে।
- হ্যালো, সুমন তুই এখুনি অফিস ছুটি নিয়ে চলে আয়।
- কিন্তু কেন মা?
- তুই যে বাবা হতে চলেছিস। শিপ্রা কে নিয়ে একবার ডক্টর এর কাছে নিয়ে যেতে হবে তো।
সুমন এর সব অভিমান মুহূর্তের মধ্যে গোলে জল হয়ে গেল।
শিপ্রা লজ্জায় সুরভী দেবীর কোলে মুখ লুকালো।
কিছুদিনের মধ্যেয়েই শিপ্রার কোল আলো করে ওদের ছেলে হলো। নাম সৌজন্য।  ছোট ছেলে কে নিয়ে এখন শিপ্রা একা কাজ করতে পারে না। তাছাড়া সৌজন্য র যখন মাত্র আট মাস বয়স তখন ই সুরভী দেবী র হটাৎ স্টোক হয়। ও মারাও যান। জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন গুলি উনি একটু নাতির সাথে হেসে- খেলে কাটাতে পারতেন। কিন্তু নিয়তির কাছে হেরে গিয়ে উনি না ফেরার দেশে পারি দিলেন। একার সংসারে কাজের লোক থাকা সত্ত্বেও এবার শিপ্রা ছেলেকে নিয়ে আরো অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সুমনকে আর সেইভাবে টাইম দিতে পারত না। এইভাবেই দুজন এর অজান্তে কখন যে দুজন এর মধ্যে দুরত্বের সৃষ্টি হলো ওরা নিজে রাই বুঝতে পারেনি। আজকাল সুমন আর শিপ্রার খেয়াল রাখে না। ছেলের ব্যাপার এও যেন উদাসীন। এই নিয়ে শিপ্রা ও সুমন এর মধ্যে প্রায়ই সবসময় ঝগড়া লোগেই থাকতো। দুজন এর মধ্যে শারীরিক ও মানসিক দুরত্ব সৃষ্টি হলো। শিপ্রা খেয়াল করতো সুমন ইদানিং ফোনে খুব ব্যস্ত। রাতেও কারো সাথে আড়ালে গিয়ে ফোনে কথা বলে। এই নিয়ে কোয়েকবার কথা বলতে চিয়েছিল শিপ্রা। কিন্তু সুমন  কিছু স্বীকার করতে চায়নি।
একদিন শিপ্রা শপিং করতে ছেলে কে নিয়ে বেরিয়েছিল। ওখানেই দেখতে পায় সুমন একটি মেয়ের সাথে মিলে হাত ধরে ঘুরছে। সঙ্গে সঙ্গে শিপ্রা আড়ালে গিয়ে ফোন করে সুমনকে।
- হ্যালো , তুমি কোথায় সুমন।
- কেন? অফিস এ । এইসময় অফিস এ থাকবো না তো কোথায় থাকবো।
এরপর শিপ্রা ফোন কেটে সশরীরে সুমন এর সামনে দাঁড়ায়। সুমন রীতিমত ভয় পেয়ে যায়। শিপ্রা নিজেকে সামলে সুমন ও ওর প্রেমিকার সামনে একটু অভিনয় করে।
সুমন এর সাথে দেখা হতেই শিপ্রা বলে সুমন এর প্রেমিকা কে আমি সুমন এর কলেজ লাইফের বান্ধবী। সুমন তখন কিছু বলতে পারে না। সুমন এর প্রেমিকা বলে ওর নাম পিউ। শিপ্রা জিজ্ঞাসা করে তোমাদের প্রেম কতদিন ধরে চলছে পিউ একটু হেসে সুমন এর হাত জড়িয়ে বলে এই ছয় মাস মতো। তবে আমরা খুব শীঘ্রই বিয়ে করবো। শিপ্রা কোনো ক্রমে চোখের জল সামলে ছেলেকে ভালো ভাবে কোলে নিয়ে বললো আচ্ছা ঠিক আছে খুব ভালো। সুমন তুমি খুব সুখী হও পিউ কে নিয়ে। এই টুকু বলেই শিপ্রা ওদের সামনে থেকে চলে গেল। পিউ কিছুই বুজল না। সুমন পিউ এর হাত থেকে নিজের হাত টা ছিনিয়ে দৌড়ে গেল শিপ্রার কাছে। ততক্ষনে শিপ্রা মল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে। শিপ্রার হাত টা ধরে বলল - আমার খুব ভুল হয়ে গেছে শিপ্রা। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও। আমি আর কখনো এইরকম কাজ করব না। আমি সৌজন্যের মাথার দিব্বি দিয়ে বলছি। 
- না, আমার ছেলের মাথার দিব্বি দিয়ে তোমায় কিছু বলতে হবে না সুমন। আমি অনেক দিন ধরেই সন্দেহ করেছি। কিন্তু আজ নিজের চোখে দেখলাম। এত কষ্ট করেও নিজের সংসার টাকে ধরে রাখতে পারলাম না। এটাই আমার কষ্ট আর কিছুই না। তুমি যাকে ভালোবাস তাকে নিয়েই থাকো। এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমায় ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিও। আমি সই করে দেব। কোনো দাবি দাওয়া করবো না। কি জানো তো সুমন। আমরা সাধারণ মেয়ে হতে পারি। নিজের সবটুকু দিয়ে সংসার টাকে আগলে রাখতেও পারি। কিন্তু যখন দেখি সেই ছোট্ট ঘরটাতে আর ভালোবাসার ছিটে ফোঁটাও নেই, তখন অচিরেই সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে ও পারি। আমার পথ ছাড়ো সুমন। আমায় যেতে দাও। আমি তোমায় মুক্তি দিলাম।
- প্লিজ ছেড়ে যেও না শিপ্রা।
ততক্ষনে শিপ্রা এগিয়ে চলেছে নিজের ছেলেকে নিয়ে নতুন ভাবে জীবন টাকে গড়ে নেওয়ার নেশায়।
সমাপ্ত 
যে কোনো সম্পর্কেরই বিশ্বাস টাই হলো আসল। বিশ্বাস টাই যখন ভেঙে যায়, তখন সেই সম্পর্কে আর ভালোবাসা, সন্মান এর ছিটে ফোঁটাও  থাকে না। থাকে শুধু ঘৃণা আর কিছু ভয়ংকর স্মৃতি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ