আমি তনুশ্রী দাস। আমার বাড়ি হুগলী জেলায়। আমি একজন গৃহবধূ। এটি আমার একটি ব্লগ। এখানে আমি আমার ভালো লাগা, মন্দ লাগা জীবনের সব কিছু সুখ- দুঃখ লিখি।এখন অনেকেই আছে ইউটিউবে তাদের প্রতিদিনের ডেলি রুটিন শেয়ার করে। আমিও তেমন দৈনন্দিন জীবনের খুঁটিনাটি সকল বিষয় ডায়রিতে লিপিবদ্ধ করে রাখি নিয়মিত। আমার মতই অনেকেই নিয়মিত ডায়রি লিখতে অভ্যস্ত। এতে মন ভালো থাকে। তাই ডায়রির মতো করেই আমার রোজকার জীবনের কিছু কিছু ভালো লাগা , খারাপ লাগা তোমাদের কাছে শেয়ার করবো। যারা পড়তে ভালোবাসো আশা করি তাদের খুব ভালো লাগবে। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট বক্স এ জানাবেন।
আজ ৬ই জানুয়ারি। আমি আজ সকাল ১০ টা অবধি কি কি করলাম তাই তোমাদের কাছে শেয়ার করছি। এখানে আজ ঠান্ডা বেশ ভালো ই পড়েছে। তোমাদের ওখানে কেমন ঠান্ডা পড়েছে কমেন্ট বক্স এ জানিও। আজ সকাল থেকেই আমি খুব ব্যস্ত। এখন বাংলার পৌষ মাস। এই সময় গ্রামে গঞ্জে পৌষ পার্বণের প্রস্তুতি থাকে তুঙ্গে। আজ আমাদের ধান ঝাড়ার দিন। আগের দিনই সন্ধেয় বেলায় জানতে পেরেছিলাম আগামীকাল আমাদের ধান ঝাড়তে আসবে কিষেনরা । তাই ভোর বেলা ৫ টা নাগাদ উঠে পড়েছি। মোট ৬ জন কিষেন হয়েছিল আজ। তারা জলখাবারে মুড়ি আলুরদম খাবে। তারই তোড়জোড় করতে হয়েছে সকালের দিকটা। আবার সকাল বেলায় আমার ছেলের স্কুল থাকে। তাই ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে ব্রাশ করে বাসি জামা কাপড় ছেড়ে প্রথমেই রান্নাঘরে এলাম। সকাল বেলা উঠেই আমি খালি পেটে এক গ্লাস উষ্ণ গরম জলে মধু মিশিয়ে খাই। আজ খুব তারা ছিল। তাই জল টা আর আয়েশ করে খাওয়ার সময় পাই নি। জলদি জলদি খেয়ে প্রথমেই আটা মাখা শুরু করে দিলাম। ছেলে কে আজ টিফিন এ দেব রুটি আলুর দম। সাথে একটা আপেল। ছেলেকে আমি বেশির ভাগ দিনই বাড়ির তৈরি ঘরোয়া খাবার ই দিয়ে থাকি। ওর মতোই দু পিস রুটি করলাম। তারপর আলু কেটে তরকারি চাপালাম। যেহেতু কিষেন হয়েছে তাই অনেকটা পরিমান এই তরকারি করতে হবে তাই একটু বেশি ই সময় লেগেছে। ৭ : ৩০ নাগাদ শশুর মশাই ও শাশুড়ি মায়ের জন্য চা করলাম। আমি চা খাই না। শুধু ওনারাই খান। আমি গরম জল টা খাওয়ার আধা ঘন্টা পর কাজ করতে করতেই ড্রাই ফ্রুটস খেয়ে নি। গ্যাস এর একদিকে তরকারি হচ্ছে। অন্য ওভেন এ চা করে দিলাম। তরকারি ফুটছিলো, আমি ছেলেকে ঘুম থেকে ডাকতে গেলাম। এখন শীত টা ভালোই পড়েছে। তাই ও সকাল সকাল উঠতে চায় না। টেনে তুলতে হয়। ওর বয়স পাঁচ বছর। ঘুম থেকে ওকে তুলে ব্রাশ করলাম। তখন বাজে ৭ টা ৪৫ ।ততক্ষনে তরকারি টা হয়ে গেছে। নামিয়ে রাখলাম। ছেলে আজ আলু সিদ্ধ ভাত খেয়ে স্কুল যাবে। তাই ভাত চাপিয়ে আবার ঘরে এলাম। ছেলে কে ও একটু গরম জল খাইয়ে দিলাম। মিনিট পনেরো পর চবন প্রাস ও মধু দিলাম। এখন শীতের সময় বাচ্ছাদের এটা খাওয়ানো খুব উপকারী। সর্দি ,কাশি থেকে রেহাই পাওয়া যায়। যদিও আমার ছেলে খুবদুস্টু। সুযোগ পেলেই জল ঘাটে। তাই ওর মাঝে মধ্যেয়েই সর্দি কাশি হয়।৮
:১৫ নাগাদ ওকে স্নান করিয়ে দিলাম। তার আগে গিয়ে ভাত টা নামিয়ে দিয়ে এলাম। এরপর স্নান করিয়ে ওকে স্কুল এ ইউনিফর্ম পরিয়ে , ওর টিফিন রেডি করে, বোতলে জল ভোরে দিলাম। খাইয়ে দিয়ে রেডি করাতেই গাড়ি এসে গেল স্কুল এর। ও স্কুল এ গেল। আমার যেন একটা যুদ্ধ শেষ হলো।ছোট বাচ্চাদের ঘুম থেকে তুলে খাইয়ে পরিয়ে রেডি করিয়ে স্কুল পাঠানো টা একটা যুদ্ধই বটে তাই না? তোমাদের যাদের ছোট বাছা আছে তারা তো জানোই।
ও বেরিয়ে যাওয়ায় পর ঘরে ঢুকে দেখলাম ঘড়িতে বেলা ৯টা বাজে। এতক্ষন খুব তাড়াহুড়ো তে ছিলাম, তাই বুঝতে পারিনি কিষেনরা কাজে এসেছে কিনা। এখন শুনতে পেলাম ওদের গলার আওয়াজ। আমাদের বাড়ির পাশেই আমাদের খামার । ওখানেই ধান ঝাড়ার কাজ চলছে। শাশুড়ি মা এক গামলা ধান নিয়ে এলেন। পৌষ পার্বণের পরের দিন বাড়িতে লক্ষহী ঠাকুর পুজো হয় তাই জন্য নতুন ধান লাগে।
নতুন ধান সিদ্ধ করে আমাদের পিঠের জন্য ধান ভাঙ্গানো ও হয়ে গেছে । এই ধান ভাঙ্গানো চাল দিয়েই আমাদের পিঠে তৈরি হয় পৌষ পার্বণের দিন। আমাদের পৌষ পার্বণের দিন সরুচাকালি, চিতই পিঠে, নারকলের পুলি পিঠে, আসকে পিঠে, গুড় পিঠে এইসব পিঠে হয়। তোমাদের কি কি পিঠে ওইদিন হয় কমেন্ট বক্স এ লিখে জানিও।
১০ নাগাদ কিষেন দের মুড়ি, তরকারি দিলাম। আজ সকাল ১০ টা পর্যন্ত আমার জার্নিটা আমি তোমাদের কাছে শেয়ার করলাম। ভালো লাগলে জানিও কেমন লাগলো। পরবর্তী আবার ব্লগ নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি হাজির হব। সকলে ভালো থেকো , সুস্থ থেকো।
0 মন্তব্যসমূহ