বাঙালিরা একটু কম ব্যবহার করে বটে, তবে মোটামুটি সারা ভারতে এই পাতার ব্যবহার হয় বেশ ভালোমতোই। ব্যবহার হয় রান্না ঘরে। মানে রান্নায় এই পাতার দিয়ে তার স্বাদ আরও বাড়িয়ে তোলা হয়। তার উপর এর ভেষজ গুণ যথেষ্ট পরিমাণে থাকায় নিয়মিত এই পাতা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। পাতার নাম কারি পাতা। তবে উত্তর ভারতের তুলনায় দক্ষিণ ভারতে এই পাতার ব্যবহার বেশি হয়ে থাকে। তরকারি, ডাল, ভাজা, নোনতা সুজি, চিঁড়ের পোলাও ইত্যাদি নানা খাবারে কারি পাতার ব্যবহার হয়ে থাকে।
কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে হওয়া বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত কারি পাতা খাওয়া শুরু করলে মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত শরীরের প্রতি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে একাধিক মারণ রোগকে দূরে রেখে আয়ু বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই যদি সুস্থ-সুন্দর জীবন যদি পেতে চান, তাহলে ভুলেও কারি পাতাকে উপেক্ষা করা চলবে না কিন্তু!
শারীরিক সুস্থতায় ভেষজ (Herbal) উপাদান দারুন উপকারী। প্রাচীনকাল থেকে এমনই কিছু ভেষজ আজও বিভিন্ন রোগ সারাতে ব্যবহৃত হয়। তেমনই এক উপাদান হল কারি পাতা (Curry Leaves)। অনেকেই বিভিন্ন রান্নায় স্বাদ ও ঘ্রাণ বাড়াতে কারি পাতা ব্যবহার করেন। এই পাতার রস বিভিন্ন রোগ সারাতেও কার্যকরী? কারি পাতায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম (Calcium), আয়রন (Iron), কপার (Copper) ও ভিটামিন (Vitamins) থাকে। এ ছাড়াও কারি পাতা ভিটামিন এ (Vitamin A), বি (Vitamin B), সি (Vitamin C) ও বি২ (Vitamin B2) সমৃদ্ধ।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে (Controls Diabetes): প্রতিদিন কারি পাতা খেলে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক লেভেলের উপরে যাওয়ার সুযোগ পায় না। কারি পাতায় উপস্থিত ফাইবারও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে থাকা তামা, লোহা, দস্তা ও লোহার মতো খনিজগুলোই এ কাজ করে। তাই ডায়াবেটিস রোগী নিয়মিত খাদ্যতালিকায় এই পাতা রাখতে পারেন।
তবে একটা বিষয় মনে রাখবেন, এই সমস্ত সমস্যার ক্ষেত্রেই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। (But remember one thing, consult a doctor if necessary in all these problems.)
স্বাস্থ্যকর চুল (Healthy Hair - To Prevent Hair Fall - Preventing hair loss or improving the hair - Naturally Regrew Hair): চুল পড়ার হাতা থেকেও মুক্তি দেয় কারিপাতা। এতে উপস্থিত অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল এবং ভিটামিন এ ও সি চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। শুধু তাই নয় ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষাতেও কারি পাতার কোনও তুলনা হয় না।
হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি (Improves heart health to Preventing heart attack and heart diseases): কারি পাতায় এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা রক্তে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর একবার খারপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে চলে এলে হার্টের ক্ষতি হওয়ার কোনও আশঙ্কাই থাকে না। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি জার্নাল অব চাইনিজ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুসারে কারি পাতা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা তো কমেই, সেই সঙ্গে ভাল কোলেস্টরলের পরিমাণও বাড়তে শুরু করে। ফলে হার্টের কর্মক্ষমতার উন্নতি ঘটে।
তবে একটা বিষয় মনে রাখবেন, এই সমস্ত সমস্যার ক্ষেত্রেই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। (But remember one thing, consult a doctor if necessary in all these problems.)
ক্যান্সারের মতো মারণ রোগকে দূরে রাখে (Keeps away deadly diseases like cancer): ক্যান্সার রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে কারি পাতার খাওয়ার প্রয়োজন যে বেড়েছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে কারি পাতায় উপস্থিত ফেনলস নামক একটি উপাদান, লিউকোমিয়া এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের মতো রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, একদল জাপানি বিজ্ঞানী সম্প্রতি একটি গবেষণা চালিয়েছিলেন। সেই পরীক্ষায় দেখা গেছে কারি পাতায় উপস্থিত কার্বেজল অ্যালকালোয়েড নামক একটি উপাদানও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
তবে একটা বিষয় মনে রাখবেন, এই সমস্ত সমস্যার ক্ষেত্রেই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। (But remember one thing, consult a doctor if necessary in all these problems.)
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি মেটে (Antioxidant deficiency is compensated): এই উপাদানটির মাত্রা শরীরে যত বাড়তে শুরু করে, তত একাধিক রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়। তাই সুস্থ শরীরের স্বপ্ন পূরণ করতে নিয়মিত কারি পাতা খাওয়া শুরু করতে হবে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটির অন্দরে প্রচুর মাত্রায় মজুত রয়েছে এই উপাদানটি, যা নিমেষে দেহের অন্দরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি কোষের নষ্ট হওয়া প্রতিরোধ করে শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে। রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় (Increases liver function): প্রায় প্রতিদিনই কি অ্যালকোহল সেবন করেন? তাহলে তো নিয়মিত কারি পাতা খাওয়াও মাস্ট! কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং ক্ষতিকর টক্সিনের হাত থেকে লিভারকে রক্ষা করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীরের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে লিভারের উপর অ্যালকোহলের কুপ্রভাবও পরে কম। এখন প্রশ্ন হল, লিভারের উপকারে কিভাবে খেতে হবে কারি পাতা? এক্ষেত্রে এক কাপ কারি পাতার রসে এক চামচ ঘি, অল্প পরিমাণে চিনি এবং গোলমরিচ মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন।
তবে একটা বিষয় মনে রাখবেন, এই সমস্ত সমস্যার ক্ষেত্রেই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হজম ক্ষমতা ভাল হতে শুরু করে, কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশা থেকে সহজেই নিস্তার (Digestion starts to improve, easy relief from constipation and diarrhea) : প্রাচীন আয়ুর্বেদিক পুঁথিতে উল্লেখ পাওয়া যায়, কারি পাতায় উপস্থিত ল্যাক্সেটিভ প্রপাটিজ শুধু যে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়, তা নয়। সেই সঙ্গে শরীরে উপস্থিত টক্সিক উপাদনদেরও বার করে দেয়। ফলে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে। তাই যারা প্রায়শয়ই বদ-হজমের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাদের কারি পাতাকে সঙ্গী বানানো মাস্ট!পেটের বিভিন্ন সমস্যায় কারি পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। কারি পাতার গুঁড়ো বাটারমিল্কে মিশিয়ে খেলে ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশা থেকে সহজেই নিস্তার পাবেন। কারি পাতা অন্ত্রের হজমের জন্য দায়ী অ্যানজাইমগুলোকে উদ্দীপিত করে।
অ্যানিমিয়া নিরাময় (Cure Anemia) : ফলিক এবং আয়রনে ভরপুর এই প্রকৃতিক উপাদানটি শরীরে প্রবেশ করার পর লোহিত রক্ত কনিকার মাত্রা এতটাই বাড়িয়ে দেয় যে অ্যানিমিয়ার মতো রোগ বেশিদিন দাপাদাপি করার সুযোগই পায় না। এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে একটা খেজুরের সঙ্গে ২ টো কারি পাতা খেলেই উপকার মেলে।
অসুস্থতা দূর করে (Removes illness): অনেক সময় সকালে উঠে আমাদের জীবন খুব উদ্বেগজনক হয় এবং আমরা বমি বমি ভাব অনুভব করতে শুরু করি, তাই আপনি যদি সকালে খালি পেটে শক্ত পাতা খান তবে তা থেকেও মুক্তি পেতে পারেন ।
ক্ষত নিরাময় করে (Heals wounds): কারিপাতায় আছে উপকারী অ্যালকালয়েড। যে কোনও আঘাত বা জখম অনায়াসে নির্মূল করতে সাহায্য করে এটি। কারি পাতা সেদ্ধ জল চুলকানি, অল্প পোড়া, ইত্যাদি সারাতে ভালো কাজ দেয়। কারি পাতা বাটা খুব ভালো অ্যান্টিসেপ্টিকের কাজ করে।
দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় (Increases eyesight): চোখের দৃষ্টিশক্তির জন্যও কারি পাতা খাওয়া খুব ভালো। কারি পাতায় উপস্থিত ভিটামিন এ-র প্রভাবেই চোখের কর্নিয়া ভালো থাকে বলে অনেকে দাবি করেন।
ওজন কমাতেও সাহায্য করে (Also helps in weight loss) : কারি পাতা ওজন কমাতেও সাহায্য করে। খাবারে নিয়মিত কারি পাতা ব্যবহার করলে কিংবা এর রস পান করলেও ওজন কমে দ্রুত।
বিভিন্ন উপকারিতা(Various benefits): মস্তিষ্ককে সজাগ রাখতেও কারিপাতার জুড়ি মেলা ভার। বিশেষজ্ঞদের মতে, কারিপাতা অ্যামনেশিয়া নিয়ন্ত্রণে দারুণ কাজ দেয়।ব্যাকটেরিয়া দূর করতেও এই পাতা বেশ কার্যকর। কারি পাতায় থাকা কার্বাজোল অ্যালকালয়েড, যা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ক্যানসার ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এই পাতায় লিনোলল যৌগও (যেটি কারি পাতায় ঘ্রাণ দেয়) থাকে। এসবের কারণেই এই পাতা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে সহজেই। এটি শরীর থেকে ক্ষতিকারক ফ্রি র্যাডিকল দূর করতেও সাহায্য করে।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। (This report is for informational purposes only and does not constitute a drug or treatment. Consult your doctor for detailed information.)
0 মন্তব্যসমূহ