রসুন খাওয়ার প্রচলন আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ভারত ও মিশরে আরম্ভ হয় ও ধীরে ধীরে এটি সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। রসুনের মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যার ফলে এটি একটি ওষধীয় গুণ সমৃদ্ধ গাছ বললেও একেবারেই ভুল হবেনা। রসুনে রয়েছে এলিসিন, সালফার, জিঙ্ক ও ক্যালসিয়াম যা স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য্য দুটির জন্যেই অনবদ্য। এছাড়া রসুনে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ সেলেনিয়াম যা ভিটামিন ই- এর সাথে মিলিত হয়ে এন্টি অক্সিডেন্ট বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে শরীর ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা অর্জন করে। রসুন শরীরে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে। রসুন খাওয়ার উপকারিতা পেতে হলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তত ২ থেকে ৩ কোয়া রসুন অবশ্যই যোগ করা উচিত।
সকালে খালি পেটে রসুন? ইসস! ওই বিচ্ছিরি গন্ধের কথা ভেবেই নিশ্চয়ই আপনি নাক সিটকোচ্ছেন? সকালে উঠেই এতো ভালো ভালো খাবার থাকতে কিনা শেষে রসুন খেয়ে বসে থাকবেন! ভাবলেই গা-টা গুলিয়ে উঠছে তো? ভাবছেন নিশ্চয়ই বিদঘুটে গন্ধওয়ালা ওই বস্তুটা সাতসকালে কাঁচা খাবার থেকে তো রান্না করে খেয়ে ফেলা অনেক সহজ! রসুনকে রান্নায় দিলে তার অর্ধেক গুণ, যেমন কিছু ফ্যাটি অয়েল তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। অবশ্য কাঁচা রসুন খেতে অসুবিধা হলে তা অন্য কোনো তরকারিতে ব্যবহার করে খাওয়া যেতে পারে।
রসুন প্রায় প্রত্যেকের রান্নাঘরেই এক আবশ্যকীয় উপকরণ। বিশেষ স্বাদ ও গন্ধের
জন্য এটি রান্নায় একটি বিশেষ ফ্লেভার সৃষ্টি করে। যেকোনো আমিষ রান্নায়
যেমন মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদিতে ও বিশেষ কিছু সবজি বা তরকারি রান্নায় রসুন
ব্যবহার করা হয়। আপনি জানেন কি যে রসুনের গুণ শুধু রান্নাঘরে সীমাবদ্ধ নয় ?
রসুন খাওয়ার উপকারিতা নানা রকম ভাবে স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। আজ জেনে
নিন রসুন ও রসুনের উপকারিতা নানা তথ্য।
‘ওয়ান্ডার ড্রাগ’ (Wonder drug)
রসুনকে আদর করে কিন্তু এই নামেই ডেকে থাকা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ রসুনকে নানা কাজে ব্যবহার করেছে। সেই কাজের মধ্যে অবশ্য চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যবহারই বেশী হতো। রসুনে প্রচুর পরিমাণে সালফার যৌগ থাকে থাকে যাকে অ্যালিসিন বলা হয়। এই অ্যালিসিন কিন্তু কাঁচা রসুনেই পাওয়া যায়। অ্যালিসিনের নানা গুণ আছে। জানেন কি, প্রতি ১০০ গ্রাম রসুনে প্রায় ১৫০ ক্যালোরি ও ৩৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬.৩৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এছাড়া রসুনে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি ১, বি ২, বি ৩ ও বি ৬, ফোলেট, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম আর জিঙ্ক থাকে।
রোজ সকালে উঠে খালি পেটে এক বা দু’কোয়া রসুন আপনি চোখ বন্ধ করে গন্ধ সহ্য করে খেয়ে ফেলার অভ্যেস যদি করতে পারেন, তাহলে দেখবেন কত্ত উপকারই না পাচ্ছেন!
রসুনের পুষ্টিগত মান – (Garlic Nutritional Value)
পুষ্টি (Nutrition) | পুষ্টিগত মান (Nutritional value) | DV % |
---|---|---|
এনার্জি (Energy) | ১৪৯ কিলো ক্যালোরি (Kilo calories - Kg ) | ৭.৫% |
কার্বোহাইড্রেট(Carbohydrates) | ৩৩.০৬ গ্রাম | ২৫% |
প্রোটিন (Protein) | ৬.৩৬ গ্রাম | ১১% |
ফ্যাট (Fat ) | ০.৫ গ্রাম | ২% |
কোলেস্টরল (Cholesterol) | ০ মিলিগ্রাম | ০% |
ফাইবার (Fiber) | ২.১ গ্রাম | ৫.৫ % |
ভিটামিন (Vitamins) | ||
ফোলেট (Folate) - B9 | ৩ µg | ১% |
নায়াসিন (Niacin) - B3 | ০.৭০০ মিলিগ্রাম | ৪% |
প্যান্টোথেনিক এসিড (Pantothenic acid) - B5 | ০.৫৯৬ মিলিগ্রাম | ১২% |
পাইরিডক্সিন (Pyrodoxin) - B6 | ১.২৩৫ মিলিগ্রাম | ৯৫% |
রিবোফ্লাবিন (Riboflavin) - B2 | ০.১১০ মিলিগ্রাম | ৮% |
থায়ামিন (Thiamine) - B1 | ০.২০০ মিলিগ্রাম | ১৭% |
ভিটামিন এ (Vitamin A) | ৯ IU | ১% |
ভিটামিন সি (Vitamin C) | ৩১.২ মিলিগ্রাম | ৫২% |
ভিটামিন ই (Vitamin E) | ০.০৮ মিলিগ্রাম | ০.৫% |
ভিটামিন কে (Vitamin K | ১.৭ µg | ১.৫% |
ইলেক্ট্রোলাইট (Electrolyte) | ||
সোডিয়াম (Sodium) | ১৫৩ মিলিগ্রাম | ১০% |
পটাসিয়াম (Potassium) | ৪০১ মিলিগ্রাম | ৮.৫% |
মিনারেল (Minerals) | ||
ক্যালসিয়াম (Calcium) | ১৮১ মিলিগ্রাম | ১৮% |
কোপার (Copper) | ০.২০০ মিলিগ্রাম | ৩৩% |
আয়রন (Iron) | ১.৭০ মিলিগ্রাম | ২১% |
ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium) | ২৫ মিলিগ্রাম | ৬% |
ম্যাঙ্গানিজ (Manganese) | ১.৬৭২ মিলিগ্রাম | ৭৩% |
ফসফরাস (Phosphorus) | ১৫৩ মিলিগ্রাম | ২২% |
সেলেনিয়াম (Selenium) | ১৪.২ µg | ২৬% |
জিঙ্ক (Zinc) | ১.১৬০ মিলিগ্রাম | ১০.৫% |
ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট (Fight nutrients) | ||
ক্যারোটিন বি (Alpha carotene) | ৫ µg | – |
ক্রিপ্টো জানথিন (Beta carotene) | ০ µg | – |
লিউটিন-জিজানথিন (Lutein xanthin) | ১৬µg | – |
১) রসুন রক্তকে পরিশুদ্ধ করতে (Garlic to purify the blood)
আপনি কি প্রায়ই ব্রণর সমস্যায় ভোগেন? নানারকম ওষুধ লাগিয়ে বা নামীদামী ডাক্তারকে দেখিয়েও কোনো ফল পাননি তো? এবার রসুন ব্যবহার করে দেখুন। কাঁচা রসুন আপনার রক্তকে পরিশুদ্ধ করে, তার ফলে আপনার ত্বক ভেতর থেকে পরিষ্কার হয়। সকালে উঠে খালি পেটে দু’কোয়া রসুন খান আর প্রচুর পরিমাণে জল খান দেখবেন ব্রণর সমস্যার সমাধান খানিক হয়েছে।
২) রসুন সর্দি কাশিতে (Garlic used on cold cough)
জানেন কি, রসুন সর্দিকাশির অব্যর্থ ওষুধ হিসেবে কাজ করে? কারণ রসুনে থাকা প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট সর্দিকাশির জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের অনাক্রম্যতাকে বাড়ায়। ফলে সর্দিকাশির সম্ভাবনা কমে। সকালে উঠে ২-৩ কোয়া রসুন খান, বা রসুন থেঁতো করে চা বানিয়ে খান, দেখবেন বন্ধ নাকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে গেছেন। তাছাড়া নিয়ম করে রসুন খেয়ে গেলে সর্দিকাশি আর আপনার ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারবে না।
৩) রসুন কোলেস্টেরল কমাতে (Garlic to reduce cholesterol)
রোজ খালি পেটে রসুন খেলে তা আপনার শরীরে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন সমীক্ষায় জানা গেছে রোজ সকালে খালি পেটে রসুন খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা ৯-১২ শতাংশ কমে। এল.ডি.এল., ট্রাই-গ্লিসারাইডের মাত্রাও রসুন খেলে কমে। তাছাড়া রসুনে থাকা অ্যালিসিনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ থাকায় তা রক্তচাপ ও ব্লাড সুগারের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪) রসুন অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে (Garlic as an anti-bacterial)
প্রাচীনকালে রসুন অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। রসুনে থাকা অ্যালিসিন প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে, তাই রসুনকে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-বায়োটিক বলা হয়। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াল, প্যারাসাইটিক ইনফেকশন সারানোর জন্য রসুন ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৫) রসুন মুখের ব্যাকটেরিয়া তাড়াতে (Garlic repels oral bacteria)
রসুনের মাউথওয়াশ—শুনতে আপনার আজব লাগছে নিশ্চয়ই। কিন্তু এই রসুনের মাউথওয়াশ আপনার দাঁতে ক্যাভিটি সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে। তাই দাঁতের পোকা তাড়াতে আর দাঁতকে সুস্থ রাখতে রসুন খান।
৬) রসুন অ্যান্টি-ফাঙ্গাল হিসেবে (Garlic as anti-fungal)
রসুনে থাকা অ্যালিসিন বিভিন্ন ক্ষতিকারক ফাঙ্গাসকেও ধ্বংস করে। তাই ত্বকের নানারকম ফাঙ্গাল ইনফেকশন কমাতে রসুন ব্যবহার করা হয়। রোজ সকালে এক কোয়া করে রসুন কাঁচা চিবিয়ে খেলে রিংওয়ার্ম, অ্যাথলিট’স ফুট ইত্যাদি ফাঙ্গাল ইনফেকশনের হাত থেকেও আপনি মুক্তি পেতে পারেন।
৭) রসুন কৃমি দূর করতে (Garlic to get rid of worms)
বিভিন্ন রিসার্চ থেকে জানা গেছে রসুন বাচ্ছাদের কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। কৃমির সমস্যা ছোটবেলায় কম-বেশী সব বাচ্চারই থাকে। ওষুধ খাওয়ানোর বদলে এবার আপনার বাচ্ছাকে কাঁচা রসুন খাওয়ান। দেখবেন কৃমি বাপ বাপ করে পালিয়েছে।
৮) রসুন ক্যান্সার দূর করতে (Garlic to reduce cancer risk)
সাম্প্রতিক কালের নানা স্টাডি থেকে জানা গেছে নিয়ম করে কাঁচা রসুন খেলে স্টমাক আর কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমে। এছাড়া রসুনে থাকা অ্যালাইল সালফাইড কোলন ক্যান্সার, প্রস্টেটের ক্যান্সার, স্তন ও ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্ভাবনাকেও কমায়। আর কাঁচা রসুন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরের অনাক্রম্যতাকেও বাড়ায়।
তবে একটা বিষয় মনে রাখবেন, এই সমস্ত সমস্যার ক্ষেত্রেই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। (But remember one thing, consult a doctor if necessary in all these problems.)
৯) রসুন ত্বকের যত্ন নিতে (Garlic to take care of the skin)
ফ্রি-র্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব ও কোলাজেনের ভাঙ্গন থেকে রসুন আমাদের ত্বককে রক্ষা করে। কোলাজেনের ভাঙনের ফলে আমাদের ত্বক বয়স্ক দেখায়। রসুন আমাদের ত্বকের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-এজিং-এর কাজ করে ও ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা রক্ষা করে। ত্বকের বিভিন্ন ফাঙ্গাল ইনফেকশনের হাত থেকেও রসুন আমাদের বাঁচায়। ব্রণ শুকোতেও রসুন সাহায্য করে। তাছাড়া ত্বকের সারফেসে থাকা ব্যাকটেরিয়াকেও রসুন ধ্বংস করে ও ব্রণর সম্ভাবনা কমায়।
১০) রসুন শ্বাসকষ্ট কমাতে (Garlic to reduce shortness of breath)
আপনার যদি শ্বাসকষ্টর ধাত থাকে, তাহলে রসুন আপনার জন্যও একদম যথার্থ ওষুধ হতে পারে। শ্বাসকষ্টের ধাত কমানোর জন্য রোজ সকালে উঠে রসুন খান। উপকার পাবেন। তাছাড়া নিউমোনিয়া, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি গুরুতর রোগের চিকিৎসাতেও রসুন ব্যবহার হয়।
তবে একটা বিষয় মনে রাখবেন, এই সমস্ত সমস্যার ক্ষেত্রেই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। (But remember one thing, consult a doctor if necessary in all these problems.)
১১) রসুন যক্ষ্মার চিকিৎসা (Garlic treatment of tuberculosis)
রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি যদি আস্ত একটা গোটা রসুন খেয়ে ফেলতে পারেন, তাহলে যক্ষ্মার উপসর্গর হাত থেকে আপনার মুক্তি মিলবে। যক্ষ্মার সম্ভাবনাও অনেক হ্রাস পাবে।
১২) রসুন পেট ঠিক রাখতে (Garlic to keep the stomach right)
আগেই বলেছি রসুন অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। রোজ সকালে উঠে খালি পেটে যদি রসুন খান, তাহলে তা আপনার পেটে থাকা ব্যাকটেরিয়া, টক্সিনকে দূর করে পেটকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। আর আপনার যদি ডায়েরিয়ার টেন্ডেন্সি থাকে তাহলেও রসুন খান নিয়মিত।
১৩) রসুন হার্ট ঠিক রাখতে (Garlic to keep the heart just right)
জানেন কি, হার্টের চিকিৎসায় রসুনকে সুপারফুড বলা হয়। রসুন হাইপার-টেনশন কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া রসুন রক্তের ঘনত্বকে কমায় ও রক্ত সঞ্চালনকে স্বাভাবিক রাখে। ফলে হার্টও সুস্থ থাকে। ধমনীর প্রাচীর শক্ত হয়ে গেলেও হার্টের নানা রোগ দেখা যেতে পারে। রসুনে থাকা সালফারের যৌগ ধমনীর প্রাচীরকে সুস্থ রাখে। ফলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। আর জমাট বাধা রক্ত পাতলা করতেও রসুন ব্যবহার করা হয়। যার ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে। তাই সুস্থ থাকতে রোজ সকালে উঠে এক কোয়া রসুন থেঁতো করে খান। দেখবেন আপনার হার্টও সুস্থ থাকবে, আপনিও সুস্থ থাকবেন।
তবে একটা বিষয় মনে রাখবেন, এই সমস্ত সমস্যার ক্ষেত্রেই প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। (But remember one thing, consult a doctor if necessary in all these problems.)
১৪) রসুন খিদে ও হজম শক্তি বাড়াতে (Garlic to increase appetite and digestion)
রোজ সকালে উঠে যদি এক কোয়া করে রসুন খান, তাহলে দেখবেন আপনার হজমশক্তি কেমন বেড়ে গেছে! পেট খারাপের সম্ভাবনাও কমে। তাছাড়া ওই এক কোয়া রসুন রোজ নিয়ম করে খেলে আপনার খিদেও বেড়ে যাবে।
১৫) রসুন নার্ভের সমস্যায় (Garlic used on nerve problems)
নার্ভের নানারকম সমস্যায় অনেকসময় খালি পেটে রসুন খেলে কাজ দেয়। প্রাচীনকালে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় নার্ভের অসুখের ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা খালি পেটে রসুন খাবার পরামর্শ দিতেন।
১৬) রসুন স্ট্রেস কমাতে (Garlic to reduce stress)
আপনি কি জানেন যে রসুনে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট থাকে যা আমাদের শরীরের ফ্রি-র্যাডিক্যালকে ধ্বংস করে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। ফ্রি-র্যাডিক্যাল কোষের প্রাচীর ও ডি.এন.এ.-কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা বেড়ে গেলে তা শরীরে নানারকম রোগ ডেকে আনে।
১৭) রসুন অনাক্রম্যতা বাড়াতে (Garlic enhances immunity)
রসুনে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ভিটামিন বি ৬, সেলেনিয়াম আর ম্যাঙ্গানিজ থাকে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়ায়। আর রসুনের অ্যান্টি-ভাইরাল গুণ থাকায় তা ভাইরাস বাহিত বিভিন্ন রোগের হাত থেকে আমাদের বাঁচায় ও শরীরে এইসব ক্ষতিকারক ভাইরাসের বিরুদ্ধে একধরণের অনাক্রম্যতা তৈরি করে। জানেন কি, যে রাশিয়াতে রসুনকে সেখানকার লোকে ‘রাশিয়ান পেনিসিলিন’ বলে? রোজ খালি পেটে রসুন খাওয়া শরীরের অনাক্রম্যতা বাড়ায়, ফলে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তাছাড়া পরিবেশের নানা ক্ষতিকারক জীবাণু, ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকেও রসুন আমাদের রক্ষা করে।
১৮) রসুন অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস কমাতে (Garlic to reduce atherosclerosis)
রক্তের জমাট বাঁধা ও প্লাক আমাদের শরীরে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের সম্ভাবনা তৈরি করে। রসুন রক্তের জমাট বাঁধার সম্ভাবনাকে কমায় ও প্লাককে ধ্বংস করে, ফলে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের সম্ভাবনাও কমে। তাই রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে নিয়ম করে কাঁচা রসুন খান।
১৯) রসুন লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে (Garlic enhances liver performance)
কাঁচা রসুন আমাদের লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়াতে ও লিভারকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
২০) রসুন সোরাইসিস কমাতে (Garlic to reduce psoriasis)
রসুনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ সোরিওসিস কমায় ও ত্বকের নানা সমস্যার সমাধান করে।
২১) রসুন অস্টিও-আরথ্রাইটিস কমাতে (Garlic to reduce osteo-arthritis)
বিভিন্ন স্টাডি থেকে জানা গেছে যেসমস্ত মানুষ রোজ সকালে উঠে নিয়ম করে এক বা দু’কোয়া কাঁচা রসুন খান, তাঁদের অস্টিও-আরথ্রাইটিসের সম্ভাবনা বহুগুণ হ্রাস পায়। কারণ রসুনের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট বৈশিষ্ট্য ডায়ালিল ডাই-সালফাইড নামক যৌগ থাকে, যা শরীরের কার্টিলেজকে ক্ষতিগ্রস্তকারী উৎসেচকের পরিমাণ কমায়। হাত-পায়ের হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা ও প্রদাহ কমায় ফলে রিউম্যাটয়েড আরথ্রাইটিসের রোগীরা উপকার পান।
২২) রসুন অ্যালজাইমার কমাতে (Garlic to reduce Alzheimer's)
অ্যালজাইমার ও ডিমনেশিয়া রোগের সম্ভাবনা কমাতেও কাঁচা রসুন ব্যবহার করা হয়। যারা সকালে উঠে কাঁচা রসুন নিয়ম করে খান, তাঁদের এই দুটি মারাত্মক রোগের সম্ভাবনা কিছুটা হলেও কমে যায়।
রসুনকে বেশিদিন সুরক্ষিত রাখার উপায় – (How to Store Garlic)
রসুন সংরক্ষণ করা খুব একটা কঠিন নয়। জেনে নিন রসুন কেনার ও সুরক্ষিত রাখার কিছু কিছু টিপ্স।
১) রসুন কেনার আগে ভাল করে তা হাতে ধরে টিপে দেখে নিন যে কোনোরকম আর্দ্রতা বা নরম ভাব আছে কি না। নরম বা আর্দ্র হলে তা খুব তাড়াতাড়ি পচে যেতে পারে। তাই কিনবেন না। (Before buying garlic, hold it well by hand and see if there is any moisture or softness. If it is soft or moist, it can rot very quickly. So don't buy.)
২) রসুন সেরকম দেখেই কিনুন যেগুলি বেশ শক্ত ও ডাঁটির সাথে আটো সাটো করে বাধা থাকে। (Buy garlic by looking at the ones that are quite stiff and sticky with the stalks.)
৩) আপনার যদি প্রায় দিনই রসুন খাওয়ার অভ্যেস থাকে তাহলে বড় কোয়া দেখে রসুন কিনবেন। কারণ, ছোট কোয়ার রসুনের খোসা ছাড়ানো খুব সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। (If you have a habit of eating garlic almost every day, then buy garlic by looking at the big koya. Because peeling small cloves of garlic is very time consuming.)
৪) রসুন ছাড়ানোর ও সংরক্ষণ করার সেরা উপায় হল কোয়াগুলিকে ছাড়িয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে নিয়ে তারপর একটি মুখ বন্ধ করা স্টিলের বাটিতে রেখে ভালো করে ঝাঁকানো। তাতে এক মিনিটের মধ্যে সব খোসা বেরিয়ে আসে।
৫) রসুন কখনও ফ্রিজে রাখবেন না। সাধারণ ঘরোয়া তাপমাত্রায় শুকনো জায়গায় রাখার ব্যবস্থা করবেন। (Never refrigerate garlic. Arrange to keep in a dry place at normal domestic temperature.)
৬) খোসা ছাড়িয়ে বেশিক্ষণ রসুন রাখলে রসুনের আসল গন্ধ চলে যায়; তার বদলে একটি অন্যরকম ঝাঁঝালো গন্ধ ফুটে ওঠে। সেটি তখন আর ভালো লাগেনা। তাই ঠিক রান্নায় ব্যবহার করার আগে বা খাওয়ার আগেই সেটির খোসা ছাড়াবেন।
৭) খোসা ছাড়িয়ে রসুন রাখলে তা একটি মুখ বন্ধ করা শুকনো ব্যাগে রাখবেন। তার আগে সেগুলিকে একটু ভিনিগার বা তেল দিয়ে মাখিয়ে নেবেন।
রসুনের অপকারিতা – (Side Effects of Garlic - Caution For Eating Garlic)
রসুন খাওয়ার উপকারিতা এতখানি থাকার সত্ত্বেও এর কিছু কিছু অপকারিতাও রয়েছে যা আপনার অবশ্যই জানা উচিত। রান্নায় ব্যবহার করা রসুনের থেকেও বিশেষ করে কাঁচা রসুনের অপকারিতা বেশি। আসুন বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
১) কাঁচা রসুনের একটি তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ থাকে যা খেলে বেশ খানিক্ষণ মুখে লেগে থাকে ও দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। এমনকি, হাত দিয়ে ছাড়ানোর সময়ও রসুনের গন্ধ বেশ খানিক্ষণ হাতে লেগে থাকে। (Raw garlic has a strong pungent odor that sticks to the mouth for a while and causes bad breath. Even when handled, the smell of garlic sticks to the hands for a while.)
২) বেশি পরিমাণ কাঁচা রসুন খেলে বুকে জ্বালাভাব ও ব্যাথার অনুভূতি হয়, যার ফলে বমি পেতে পারে। (Eating too much raw garlic causes chest irritation and pain, which can lead to vomiting.)
৩) অত্যাধিক কাঁচা রসুন খাওয়ার ফলে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। এমনকি, পেটে জ্বালাভাব, ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে। (Eating too much raw garlic causes gas problems. There may even be abdominal irritation, pain or discomfort.)
৪) কাঁচা রসুন বেশি খেলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে যার ফলে খুব ঘাম হয়। (Eating more raw garlic can increase body temperature which results in excessive sweating.)
৫) মাইগ্রেন বা অত্যাধিক মাথা ধরার সমস্যা থাকলে কম রসুন খাওয়াই ভাল। বেশি পরিমাণ কাঁচা রসুন খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায়। (If you have migraines or severe headaches, it is better to eat less garlic. Eating too much raw garlic increases the risk of migraines.)
৬) অত্যাধিক রসুন খাওয়ার ফলে দৃষ্টি শক্তির ওপর প্রভাব পড়ে। এর ফলে চোখের ভেতরে রক্তপাত বা হাইফেমার মত সমস্যা দেখা দিতে পারে। (Eating too much garlic affects the eyesight. This can lead to problems such as bleeding inside the eye or hyphae.)
৭) রসুন উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, কিন্তু বেশি রসুন খেলে রক্তচাপের মাত্রা অতিরিক্ত কমে যেতে পারে। (Garlic helps reduce high blood pressure, but eating too much garlic can lower blood pressure levels.)
৮) বেশি রসুন খেলে ত্বকে চুলকানি, লালচে ভাব, ঘামাচি বা শুষ্কতা দেখা দেয়। (Eating too much garlic causes itching, redness, itching or dryness on the skin.)
৯) কম রসুন খেলে যোনির ইনফেকশন যদিও কমে যায়, কিন্তু বেশি খেলে তা আবার বেড়ে যায় ও যোনিতে দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে। (Eating less garlic reduces vaginal infections, but eating more can increase it and cause vaginal odor.)
১০) অত্যাধিক রসুন খাওয়ার ফলে লিভারে বিষাক্ত ক্রিয়াকলাপ সৃষ্টি হতে পারে যা আপনার লিভারের কার্যকলাপকে নষ্ট করে দিতে পারে। (Eating too much garlic can cause toxic activity in the liver which can impair the activity of your liver.)
কাদের রসুন খাওয়া উচিত নয় – (Who Should Avoid Garlic)
আপনার যদি নিচের তালিকার কোনো একটি পরিস্থিতি বা সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আপনার একেবারেই রসুন খাওয়া উচিত না।
১) অনেকের রসুন খেলে এলার্জি সমস্যা দেখা যায়। তাদের রসুন খাওয়া উচিত নয়। (Many people have allergy problems when they eat garlic. They should not eat garlic.)
২) পেটের আলসার, আই.বি.এস, আই.বি.ডি. বা যেকোনো রকমের ইন্টেস্টাইনের সমস্যা থাকলে রসুন খাওয়া উচিত নয়।
৩) কোনোরকম সমস্যার জন্যে যদি আপনার ডাক্তার রসুন খেতে না করেন, তাহলে রসুন খাওয়া উচিত নয়। (If your doctor does not eat garlic for any problem, then garlic should not be eaten.)
সবকিছুর মধ্যেই ভালো ও মন্দ দুটি দিকই থাকে। এক্ষেত্রেও তাই। তাই আপনাকে ঠিক করতে হবে ঠিক কতটা পরিমাণ রসুন খাওয়া আপনার জন্যে ঠিক।
Disclaimer: এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। (This report is for informational purposes only and does not constitute a drug or treatment. Consult your doctor for detailed information.)
তথ্য: সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ