দিপুর বড়দিন

 

dipur christmas


দিপুর বড়দিন


রাত পোহালেই বড়দিন। প্রভু যীশুর জন্মদিন ।সেই উপলক্ষে এই দিনটিতে কেক খাওয়ার প্রচলন আছে । তাই পাঁচ বছরের ছোট্ট দিপু আজ খুবই উতলা । তার বাবা তাকে কথা দিয়েছে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তাকে নিয়ে কেক কিনতে যাবে। সেই উত্তেজনায় সারা রাত বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করে কেটেছে তার।  দিপুর এই ছটফটানিটা তার মা-বাবার দৃষ্টি এড়ায়নি।  তার মা তাকে আশ্বস্ত করে বলেন এখন অনেক রাত দিপু । চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।  সকাল হলেই তোমায় ডেকে দেবো । তখন বাবার সাথে কেক কিনতে যাবে। ছোট দিপু অভিমানে মাখা সুরে বলে 

--- আর বাবা যদি রোজকার মতো কাল ও সকালবেলায় উঠেই  অফিস চলে যায় তাহলে কি হবে ? তখন তো আর  কেক নিয়ে আসা হবে না। 

--- আমার পাগল ছেলে! কালকে আমার অফিস ছুটি। ছোট্ট দিপুর কপালে চুম্বন এঁকে দিয়ে  তার বাবা  বললেন। 

---কি মজা! কি মজা ! কাল আমার স্কুল ছুটি। তোমারও অফিস ছুটি । কাল সারাদিন আমরা দারুন এনজয় করব।  কেক কাটবো , তুমি আর আমি মাকে রান্নায় হেল্প করব। ভাল ভাল রান্না করা হবে । বেশ উৎসাহ আনন্দের সাথে দিপু বলল।

--- আচ্ছা, ঠিক আছে।  সবই হবে।  এখন ঘুমাও।

 সকাল হতেই দিপু  চলল বাবার হাত ধরে পাড়ার মোড়ে কেকের দোকানে।  সেখানে নানা রঙের,  নানা ডিজাইনের বিভিন্ন সাইজের কেকের সমাহার। দিপু কোনটা ছেড়ে কোনটা কিনবে ঠিক করতে পারছিলো না । তার চোখ যেন ধাঁধিয়ে গেল । দিপুর ভ্যাবাচাকা মুখটার দিকে তাকিয়েঅনিতেশ বাবু  একটা স্নেহ মাখা হাসির রেখা টেনে বললো ---- তুমি এই বড় কেক টাই নাও।  কেকটা দিপুর খুবই পছন্দ হল। অত্যন্ত আনন্দের সাথে দীপু কেকের প্যাকেটটা একহাতে দোলাতে দোলাতে বাড়ির দিকে রওনা হলো। কিন্তু মাঝপথে কয়েকজন বস্তির ছোট ছোট ছেলেমেয়ের উপস্থিতি তার চলার পথটা হঠাৎ যেন রুদ্ধ  দিল।  তার আনন্দে মুখরিত মুখটা তাদের দেখামাত্র বিদন্নতায় পরিণত হল । দিপুর ভাব ভঙ্গীর এই রূপ পরিবর্তন অনিতেশ বাবুর দৃষ্টি এড়াল না।  কিন্তু সেই ক্ষুধার্ত বাচ্চাগুলোকে দেখে দিপুর মুখে বিষন্নতা দেখা দিলেও  ক্ষণিকের মধ্যে তার মধ্যে খুশির ঝিলিক আবার ফিরে এল। সে খানিকক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে বাচ্চাগুলোকে দেখে  আবার বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। কিন্তু বাড়ি এসে অনিতেশ বাবু  সন্ধান পেলেন দিপুর  অতল মনের পরিকল্পনা।

---  মা , তুমি আজ মোট কুড়ি জন বাচ্চা ছেলেমেয়েদের জন্য প্লিজ রান্না করে দাও । আমি আর বাবা তোমায় হেল্প করব। --- কেনরে ? ওতো গুলো বন্ধু কোথায় পেলি ? দিপুকে কাছে ডেকে  মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তার মা জিজ্ঞাসা করলেন।

প্রত্যুত্তরে দিপু বললো

--- কেক  কিনে আসার সময় দেখলাম কয়েকটি ক্ষুধার্ত, আর্ত বাচ্চার মুখ । তাই  দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলাম আজ আমি স্যান্টা  সেজে  তাদের খাওয়াতে যাবো ওই বস্তিতে । সাথে এই কেক টাও নিয়ে যাব । মা,  বাবা তোমরাও আমার সাথে যাবে তো? অনিতেশ বাবুর  চোখে তখন আনন্দাশ্রুর আনাগোনা ।কাঁপা কাঁপা গলায়  বললেন 

--- অবশ্যই যাবো।  তোমার এই মহৎ কর্মের জন্য আমাদের সহযোগিতা তুমি সর্বদাই পাবে।  আর শুধু এই বছরে নয়  প্রতি বছরই এই দিনটাতে  তুমি ওদের হাসি খুশিতে ভরিয়ে রাখবে।

সমাপ্ত

ছবি : সংগৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ