নুপূর
সত্তর বছর বয়সী বিপত্নীক রাজনারায়ণ বাবু একাই রাতে ঘুমান । তার একমাত্র ছেলে প্রতাপ, তার স্ত্রী পাপিয়া ও তাদের একমাত্র তিন বছরের কন্যা প্রিয়া পাশের ঘরেই থাকে। গতকাল রাতে লোডশেডিং এর জন্য পাখা চলে নি । পাখার যান্ত্রিক আওয়াজের অনুপুস্থিতিতে রাতটা আরো নিস্তব্ধ মনে হচ্ছিল নিদ্রাহীন রাজনারায়ন বাবুর। হঠাৎই নূপুরের শব্দে তার মনে ভয়ের সঞ্চার ঘটে । এমনিতে তিনি ভূত প্রেতে তেমন বিশ্বাসী নয়।তাই বারকয়েক নিজের অন্তর আত্মাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন এটা হয়তো তার মনের ভুল। কিন্তু পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে অন্যতম, কর্ণযুগল তাকে বারবার জানান দিচ্ছিলো নূপুরের শব্দ এর অস্তিত্ব। তাই আতঙ্কেই বিছানার এককোনে কুঁকড়ে, জড়োসড়ো হয়ে কোনমতে নিশিযাপন করেন তিনি। বিছানা ছেড়ে উঠে ছেলেকে ডাকবেন সেটুকু সাহসও মন থেকে সঞ্চয় করতে পারছিলেন না তখন। ভোরের দিকে কখন যে তিনি নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন টের পান নি।
" দাদুভাই দরজা খোলো, সকাল হয়ে গেছে... উঠে পড়ো ... আধো আধো গলায় নাতনি প্রিয়ার গলার আওয়াজে ঘুম ভাঙে রাজনারায়ন বাবুর। দরজা খুলতেই টলমল পায়ে প্রিয়া " দাদুভাই " বলে ছুটে এসে রাজনারায়ণ বাবু কে জড়িয়ে ধরে। তখনই তাঁর নজর পড়ে প্রিয়ার পায়ের নুপুর জোড়ার দিকে। গতকাল রাতের নুপুরের আওয়াজ এর উৎস যে তার নাতনি প্রিয়ার পায়ের নূপুর গুলো এটা বুঝতে পেড়ে তার মনে জমানো অশরীরী চিন্তাভাবনাগুলো উবে গেল নিমিষেই। রাতে প্রিয়া ঘুমানোর সময় এপাশ-ওপাশ করার জন্য নুপুরের আওয়াজ টা যে প্রকট হচ্ছিল এটা ভেবে তিনি মনে মনে লজ্জিতও হলেন বটে।
সমাপ্ত
ছবি : সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ