মায়ের শিক্ষা
সাত সকালে কলিংবেলের শব্দ পেয়ে রতন বাবু তার স্ত্রী অলকাকে বাথরুম থেকে চিৎকার করে বলে উঠলেন-- কি গো কলিংবেলটা এতক্ষণ ধরে বাজছে শুনতে পাচ্ছ না??
---তা তো পাচ্ছি ই। যন্ত্রটার যা ষাঁড়ের মতো গলা। কিন্তু আমি তো আর পাখি নই , যে ফুরুৎ করে উড়ে গিয়ে খুলে দেবো।
বিরক্তির সুরে বলতে বলতে অলকা দেবী দরজাটা খুললেন।
--- কিরে তুই সাত সকালে? কি ব্যাপার? অবাক হয়ে অলকা দেবী প্রশ্ন করলেন।
--- কেন আসতে পারি না বুঝি ? এটা কি আমার বাড়ি নয়?
---সে কথা আমি একবারও বলেছি তোকে? আমরা যেমন তোর মা বাবা... তেমনি এই ঘর ও তোর। হঠাৎ কিছু না বলে এলি তাই জিজ্ঞাসা করলাম। ঘরে আয়।
গুবলু সোনা কেমন আছো?
অলকাকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে আধো আধো গলায় তিন বছরের গুবলু বলল-- জানো তো দিদুন, মা বলেছে আজকে থেকে আমরা এখানেই থাকবো। কিন্তু তাহলে যে আমি বাবাকে, ঠাম্মা কে খুব মিস করব।
আদুরে গলায় নাতির মুখ থেকে এ কথা শুনে অলকা দেবী শিউরে উঠলেন। ভ্রু কুচকে একমাত্র মেয়ে মৌ এর দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন।
---আরে , তুমি যা ভাবছো সে সব কিছু নয়। কোন ঝগড়াঝাটি করে এখানে আসিনি।
মৌ এর মুখ থেকে একথা শুনে দুই হাত জড়ো করে অলকা দেবী বংশের কুলদেবীর কে উদ্দেশ্য করে প্রণাম ঠুকে বিড়বিড় করে বললেন--- "রক্ষা কোরো ঠাকুর।"
আরে সাতসকালে দাদুভাই যে ! বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে গুবলুকে দেখেই রতন বাবু একগাল হেসে কোলে তুলে আদর করতে শুরু করলেন গুবলুকে।
এরপর সকালে চা খেতে খেতে মৌ আসল কথাটা বলল।
--- ফাইনালি পলাশের বাইরে পোস্টিংটা কনফর্ম হয়ে গেল। তাই ব্যাগ গুছিয়ে এখানে মাস ছয়েকের জন্য চলে এলাম । আবার ও যখন বাড়ি ফিরবে তখন ও বাড়ি যাবো।
মেয়ের কথায় রতন বাবু ও অলকা দেবী মনে মনে বেশ আহত হলেন।
অলকা দেবী বোঝালেন মৌ কে
সংসারটা শুধু স্বামী-স্ত্রী আর বাচ্চাকে নিয়ে গঠিত হয় না। পরিবারের আরও সকলের পাশে তাদের সুখে-দুঃখে থাকতে হয় ।
---মৌ তুই ভুলে গেলি গুবলুর যখন জন্ম হয় সদ্য মা হওয়ায় ওতোটুকু বাচ্চাটাকে ঠিকমতো কোলে নিতে পারতিস না । তাকে স্নান করানো, তাকে তেল মাখানো সবই তো তোর শাশুড়ি মা ই করেছেন। সিজার হওয়ার কারণে কোনো কাজই করতে দেয়নি তোকে। বাচ্চার কাঁথা কাচা থেকে তোকে টাইমে টাইমে খেতে দেওয়া সর্বস্ব। আমরা ওই সময়ে তোকে নিয়ে যেতে চাইলেও উনি বলেছিলেন আমার নাতির দেখাশোনা নিজেই করবো। এই কাজ টা আমি মন থেকেই করি। আর আমার হাতে হাত রেখে বলেছিলেন আপনার মেয়ের যত্ন, আত্তির কোনো ত্রুটি রাখবো না। এই আপনাকে কথা দিলাম। তবে সপ্তাহে সপ্তাহে সময় মতো এসে মেয়ে নাতিকে দেখে যাবেন কিন্তু।
এটা একটা মেয়ের মায়ের কাছে কতখানি যে ভরসার জায়গা তুই বুঝবি না।
সেই মায়ের ছেলে আজ কাজের সূত্রে বাইরে চলে গেলে তিনি তো তোকেই আরও কাছে পেতে চাইবেন। মেয়ের মতো আঁকড়ে ধরতে চাইবেন । যেমন এতদিন আগলে রেখেছিলেন। একটা সন্তানের মা হওয়েও আর এক সন্তানের মায়ের কষ্টটা বুঝলি না এখনো?
এটা তোর বাপের বাড়ি তুই যখন খুশি আসতে পারিস। কিন্তু তা বলে তোর দেবীর মতো শাশুড়ি মা কে কষ্ট দিয়ে নয়। একবার ভেবে দেখ তো গুবলুও যদি চাকরি পেয়ে বাইরে চলে যায় আর তোর বৌমা যদি বাপের বাড়ি দিনের পর দিন থাকে কেমন লাগবে?
গুবলুর দিকে তাকিয়ে মৌয়ের চোখে জল চলে এলো। কান্না ভরা গলাতেই সে বললো সত্যিই মা ঠিক ই বলেছ আমার শাশুড়ি মা আমার ছেলের জন্য আমার জন্য যা করেছে তা সত্যিই ভোলার নয়। আমার ভুল টা তুমি শুধরে দিলে। আমি আজই পলাশ কে ফোন করে বলবো ওখানে একটা ঘর ভাড়া দেখতে।আমরা সবাই ওখানে গিয়ে থাকব।
আর তোমরাও আমাদের ওখানে যেও কিন্তু।এখন চললাম আবার পরে আসবো।
ছবি : সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ