তরুণ : এই কাজটি ভুলেও করোনা। কারণ কোনি ডার্লিং অলরেডি আমার কাছে চলে এসেছে। ওর শুভকামনা চেয়ে বাবা হয়ে এই কাজটা তুমি করবেনা সেটা আমি সেন্ট পার্সেন্ট নিশ্চিত। আমি তোমার মেয়ের গায়ে টাচ পর্যন্ত করবো না। সেট বাজারের ভিতরে যে আমার পুরোনো গোডাউন টা আছে ওখানে চলে এসো তাড়াতাড়ি আর মেয়েকে নিয়ে যাও।
(এইটুকু কথপকথন এর পরই ফোন কেটে দিল তরুণ। )
--- তুমি বললে , মন্দিরের সমস্ত কিছু বিয়ের আয়োজন করেছ -- তাহলে এখানে কেন নিয়ে এলো আমায় এনারা?
-- কনিকা একটা কথা মন দিয়ে শুনে নাও আমি তোমায় জীবনে কোনদিনও ভালোবাসিও নি। আর তোমাকে বিয়েও করব না। আর হ্যাঁ, তোমাকে দেখানো ডিভোর্স পেপার টা সম্পূর্ণ ভাবে জাল। আমার স্ত্রীয়ের সাথে আমার রিলেশন ঠিক ই আছে। আমার নজর ছিল তোমার বাবার ফ্যাক্টরির উপর ।তাই সেটা হাতানোর জন্য তুমি ছিলে আমার দাবার ছক । থ্যাঙ্ক ইউ আমার স্বপ্ন অর্ধ সফল করে দেয়ার জন্য। তোমার জন্যই আমি কণিকা চানাচুর ফ্যাক্টরি অর্ধেক মালিকানা পেলাম। কিন্তু এই মালিকানা পাওয়ার জন্য তোমার সাথে ভালোবাসার খেলা টা বড্ড বেশি হয়ে গেছে। কি করবো বলো যতই হোক আফটার অল আমি তো পুরুষ মানুষ। তারই ফল তোমার কনসিভ করা। তোমার এত বড় ক্ষতি হোক সেটা আমি কিন্তু মন থেকে চাইনি কণিকা। তোমার বাবাকে ফোন করেছি ।তোমায় অক্ষত অবস্থায় এখান থেকে নিয়ে যাবে।
কিছুক্ষণ পরেই তোমার বাবা মা চলে আসবে ততক্ষন এখানে একটু রেস্ট করো। আরে নিজের ভালো পাগলেও বোঝে কণিকা ।যা হয়েছে সব ভুলে যাও। এবরশন করিয়ে নাও।
কনিকা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না, বিশ্বাস করতে পারে না তরুন তার সাথে এত বড় প্রতারণা করেছে। এক মুহুর্তেই তার জীবনে আছড়ে পরে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কালসংকেত।
কনিকা : আমি জানি , আমি বিশ্বাস করি-- তুমি শুধু আমাকেই ভালোবাসো। কেন আমায় শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছ তুমি? আমার সাথে ইয়ার্কি করছো তাই না ?
তরুণ : ইয়ার্কি নয় শালী , এটাই সত্যি। তবে আমার জন্য তোমায় আর একটু কষ্ট করতে হবে।
কণিকা : ডোন্ট টাচ মি। আমার গায়ে হাত দেবে না একদম। এত বড় বিশ্বাসঘাতক তুমি ? বিবাহিত হওয়া সত্বেও, তোমার বাচ্চা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র তোমার মন গলানো কোথায় আমি পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে নিঃস্বার্থভাবে তোমায় ভালোবেসেছি। ভালোবেসেই কাছে এসেছি। বিশ্বাস করেই শারীরিক সম্পর্কে জড়িত হয়েছি। তোমার আর্থিক অবনতি কথা চিন্তা করেই মা বাবাকে আড়ালে রেখে কোম্পানির অর্ধেক অংশ তোমার নামে করে দিয়েছি। আর আজ ... আজ তো তোমায় ভালোবেসেই মা বাবার স্নেহ ভালোবাসা কে পিছনে ফেলে তোমাকে ভরসা করে ঘর ছেড়েছি। তার প্রতিদান এই দিলে তুমি ? তরুণ তুমি শুধু আমার ভালোবাসা নিয়ে খেলেছে তাই নয়... তুমি আমার ভবিষ্যৎ আমার মা-বাবার সম্মান সম্পত্তি সবকিছু তছনছ করে দিয়েছ।
তরুণ : আরে রাখ তোর সম্মান। যে মেয়ে সামান্য কথায় গলে গিয়ে বিবাহিত পুরুষের সাথে শুয়ে পড়ে তার আবার ভালোবাসা, সম্মান... যদি নিজের ভালো চাস এবরশন টা করিয়ে নিস।
কনিকা : আমি আমার গর্ভের সন্তানকে কিছুতেই নষ্ট করবোনা। তোমার বিচার তো ঠিকই হবে।
প্রণব : আমরা এসে গেছি তরুণ । আমার মেয়েকে তুমি ছেড়ে দাও এবার।
তরুণ : তার আগে দুটো শর্ত আছে যে প্রণব বাবু .. প্রথমত কণিকার গর্ভের সন্তানকে নষ্ট করে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, মেয়েকে সশরীরে সুস্থভাবে ফেরত নিয়ে যেতে চাইলে কোম্পানির আরও অর্ধেক অংশ আমার নামে করে দিতে হবে।
প্রণব: আমার যা ক্ষতি করার তা তো করেই দিয়েছো তুমি। আমি তো চাইলেই থানা পুলিশ করে জোরপূর্বক আমার মেয়েকে নিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমিতো তা করিনি বলো? আমি তো তোমার কথা রেখেছি। আর অবিচার করো না আমার মেয়েকে ছেড়ে দাও। আমি আবারো বলছি ও অসুস্থ।
(দুপক্ষই যখন কথা কাটাকাটি তে ব্যস্ত হঠাৎই পুলিশ গাড়ি শব্দে তাদের হুশ ফেরে।)
অফিসার : প্রণব বাবু , আপনার বাড়ির কাজের মেয়ে মিনুর ফোন পেয়ে আমরা আপনাদের উদ্ধার করতে এসেছি।
এইভাবে প্রণব বাবু ও কনিকা মানুষরূপী জানোয়ার তরুণের হাত থেকে মুক্তি পায়। অল্প বয়সী মেয়ের সাথে দিনের পর দিন ভালোবাসার অজুহাতে দীর্ঘদিন সহবাস করা এবং কণিকাকে ভুলিয়ে সম্পত্তি নিজের নামে করে নেয়ার অভিযোগে তরুণ বাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
কিন্তু কণিকা তার ভালোবাসার অংশকে নিজের জীবন থেকে মুছে ফেলতে চাই নি। তাই মাতৃজঠরে পরম যত্নে বড় হতে থাকে সেই প্রাণ । কণিকার মা, বাবা কিন্তু তার সাথে তার এই দুঃসময়ে তাকে দূরে ঠেলে কিংবা কটু কথা শোনায় নি। কণিকা যে প্রণব বাবুর প্রাণ। মেয়েকে জীবিত পেয়েছে তাতেই সে অনেক খুশি। কিন্তু একমাত্র সন্তান কণিকার প্রতি নির্মম অত্যাচার ও তিল তিল করে পরিশ্রম ও যত্নে গড়ে তোলা ফ্যাক্টরির অর্ধেক মালিকানার হারানোর শোকে প্রণব বাবু শরীরে অবস্থা দিন দিন অবনতি হতে থাকে।
ওদিকে তরুণ বাবু জেলে থাকায় মামলা চলতে থাকে। ইতিমধ্যে কণিকা একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। প্রাণের অধিক প্রিয় সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রণব বাবু আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফ্যাক্টরিতে যাওয়া প্রায় এক প্রকার বন্ধ করে দেয়। ফ্যাক্টরি কাজকর্ম মূলত কর্মচারীদের দ্বারা চলতে থাকে।
এইরূপ অবস্থায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন ফ্যাক্টরি টা বিক্রি করে দেবেন। চোখের সামনে কণিকা দেখে তার বাবার প্রাণ ভ্রমরা ফ্যাক্টরিটা নিলামে বিক্রি হতে। ফ্যাক্টরি বিক্রি হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই হঠাৎই একদিন ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক করে প্রণব বাবুর মৃত্যু হয়। এবার কণিকা লড়াইটা শুরু হয় আরো কঠিন।
ওদিকে তরুণ বাবু বছরের পর বছর জেলে থেকে কণিকার বিরুদ্ধে একটার পর একটা মামলায় হেরে টাকাপয়সা সর্বস্ব খুইয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। নিজেকে জেল থেকে মুক্ত করতে কনিকা চানাচুর ফ্যাক্টরির অংশটুকুও বিক্রি করতে বাধ্য হয় । এখন বাকিটা জীবন জেলে থেকেই সে বুঝতে পারছে প্রতারণা করে কোন কিছু কেড়ে নিলে সেটা শান্তিতে ভোগ করা যায় না।
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করার পর জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই ও নানাভাবে ব্যস্ত জর্জরিত কণিকার কলেজে ভর্তি হয়ে ওঠা হয় না। কনিকা তার বিধবা মা এবং একমাত্র কন্যাকে নিয়ে এখন একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করে। এবং একটি বেসরকরি কোম্পানিতে চাকরি করে।
বয়সন্ধিকালে আগত মোহরূপী ভালোবাসার ফাঁদে পা দিয়ে কনিকা তার জীবনের সর্বস্ব হারিয়ে ফেলে এইভাবেই। ভালোবাসা কোনো অন্যায় নয় ।কিন্তু ভালোবেসে অল্প বয়সে হঠকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া যে কতটা বিপদজনক আজ কনিকা নিজের জীবন দিয়ে তা বুঝতে পারছে । ছোটবেলার সেই সামান্য ভুলের ঘটনা কনিকা আজও ভুলতে পারেনা। বিগত কয়েক বছরে তার জীবনে মধ্য দিয়ে অনেক ঝড় বয়ে গেছে। সেইসব ঝড় পেরিয়ে কণিকা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। আর কোনো বিবাহবন্ধনে নিজেকে জড়ায় নি সে । এখনো অবিবাহিতা। একাই সে এখন তার মেয়েকে মানুষ করছে। এবং তার মায়ের যত্ন নিচ্ছে। এতেই সে চরম সুখী।
"অসমবয়সী প্রেম" -- গল্পটি আজ শেষ হলো। ভারত এবং ভারতের বাইরে থাকা প্রবাসী যে সকল গল্পপ্রেমী রা আমার ব্লগ নিয়মিত পড়েন, তাদের জানাই আমার তরফ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
ছবি : সংগৃহীত
0 মন্তব্যসমূহ