পুজোর কেনাকাটা

 

pujo shoppig

পুজোর কেনাকাটা

হাতেগোনা আর কয়েকটা দিন মাত্র বাকি দুর্গাপুজোর।  দিনমজুর অলক তাই একটু বেশিই খাটছে। যাতে হাতে আরো কিছু বাড়তি টাকা পায়। অলকের একটা চার বছরের ছেলে আছে। অলক বরাবরই চায় তার যত কষ্টই হোক তার ছেলে কিশান কে পড়াশোনা শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করবে। তার সমস্ত আবদার সাধ্য মতো মেটানোর চেষ্টা করবে।  অলক টাকার অভাবে পড়াশোনা বেশি দূর করতে পারেনি। কিন্তু পুঁথিগত শিক্ষা না থাকলেও অলক অত্যন্ত সৎ, ও বিনয়ী। তার এই   ভদ্র আচরণের জন্যই  অনেক মানুষ তাকে কাজের জন্য  ডাকে।  তেমনই অনেকেই আবার  তাকে দিয়ে বেশি বেশি কাজ করিয়ে নেয়। তার প্রাপ্য মজুরী টুকু তাকে দেয় না। তাই অনেকেই আবার অলক কে বোকাও ভাবে। তার পিছনে তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টাও করে। ও সব  বুঝতে পারললেও কোনো প্রতিবাদ করে না।


 কিন্তু অলকের বউ বিভা জানে,  ওর স্বামী  কতটা কাজপাগল। অলক নিজেকে সারাদিন কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতেই ভালবাসে। অলক ই  বিভা কে  বলেছে-- জানো,  আমি পড়াশোনা শিখিনি তো কি হয়েছে!  আমি যে কাজটা পারি, সেটা আমি মন দিয়ে আমার সবটুকু উজাড় করে করার চেষ্টা করি। মানুষ আমায় উপযুক্ত মজুরী না দিলেও আমার  কর্ম একদিন আমার পরিশ্রমের দাম নিশ্চয়ই দেবে মিলিয়ে নিও।


 কিন্তু এখন অলকের টাকার খুবই প্রয়োজন । তার একমাত্র ছেলে চার বছরের কিশান তার গলা জড়িয়ে ধরে তাকে আদূরে কণ্ঠে  বলেছে --বাবা, এবারের পুজোয় আমায় একটা নতুন জামা কিনে দিতে হবে। তার পাশের বাড়ির বন্ধু বিট্টুকে  খুব সুন্দর জামা কিনে দিয়েছে তার বাবা। কিশান এইরূপ বায়না করায় বিভা তাকে ধমক দেয়।   কিন্তু অলক বাধা  দিয়ে বলে , আরে ও এখন অনেক ছোট। পুজো তো  ছোটদেরই আনন্দ, উল্লাসের দিন । আমি নিশ্চয়ই দেবো সোনা তোমায় জামা কিনে। 


বাবার মুখে জামা কিনে দেয়ার কথা শুনে ছোট্ট কিশান দৌড়ে চলে গেল বিট্টু কে সে কথা জানাতে।  ওদিকে , বিভা বলল অলক কে ,-- এবছর এতো টানাটানি যাচ্ছে , নাইবা হল নতুন জামা এই বারে।   অলক বললো শিশু মনের এটা একটা আবদার।  মোটেও বিলাসিতা নয়। অভাব-অনটন কি জিনিস সেটা বোঝার মত ক্ষমতা এখনো  ওর হয়নি। বড় হলে ও আস্তে আস্তে নিজেই  ঠিক বুঝবে।  এই বলে ও বেরিয়ে পড়ল কাজে।


 সারাদিন এর  অক্লান্ত পরিশ্রমের পর সন্ধ্যাবেলা অলক বাড়ি ফিরল। তাকে দেখামাত্রই কিশান ছুটে  গিয়ে তার কোলে উঠে তার গালে একটা চুমু খেলো।  তারপর বলল--  বাবা আমায় জামা কিনতে নিয়ে যাবে না? -- নিশ্চয়ই নিয়ে যাব সোনা । কিছুক্ষন পরেই অলক কিশানু  কে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল জামা কিনতে।


 মার্কেটের সামনে একটা বিশাল ঝাঁ-চকচকে শপিংমল।  পুরো কাঁচ দিয়ে মোড়া । বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে সুন্দর সুন্দর জামা কাপড়ের সম্ভার। চোখ ধাঁধানো আলোর রোশনাই, আর রং বরং এর সার।  রাস্তার ওপারেই দাঁড়িয়েই অলক মনে মনে ভাবল,  কিশানুকে এবারে এখান থেকেই একটা সুন্দর জামা কিনে দেবে ।হোক না দামে একটু বেশি।ছোট্ট কিশানের মুখে ওই নির্ভেজাল হাসিটুকুই যে এই বারের পুজোর অলোকের শ্রেষ্ঠ পাওনা। 


 কিন্তু বাবার হাত ধরে গুটিগুটি পায়ে রাস্তা পেরিয়ে , শপিং মলের কাছে আসতেই কিশানুর  কি একটা মনে হতেই তার বাবাকে বললো আমি এই দোকান থেকে জামা নেব না বাবা। আঙ্গুল দেখিয়ে ফুটপাথের দিকে ইশারা করে বললো ওখান থেকে কিনবো। শেষ পর্যন্ত ওখান থেকেই কম দামের একটা জামা কিশান নিজেই পছন্দ করলো। তাই হাতে আরো কিছু টাকা বেঁচে থাকল আলোকের ।এই টাকাতে বিভার জন্য একটা সুতির ছাপা কাপড়ও সে কিনে ফেললো। -- বাবা, তোমার   জন্য  কিছু কিনবে না? কিশানুর কথায় অল্প হেসে দোকানদার বলল -- দাদা আপনিও নিজের জন্য কিছু একটা নিতে পারেন। ছেলেটা দেখে খুশি হবে। বাধ্য হয়ে সেও  একটা নিজের জন্য গেঞ্জি কিনল।

-- কি মজা!  আমার নতুন জামা, মায়ের নতুন কাপড়,  আবার  বাবার ও নতুন গেঞ্জি হল। কিশানের  চোখে-মুখে এত খুশির ঝলক অলক  আগে কখনো দেখেনি।বিভা কেও এই বছর   পুজোয় একটা শাড়ি দিতে পেরে অলকের মনটা আজ বেশ ফুরফুরে।

 অলক আর  কিশান  হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির উদ্যেশে রওনা হলো ।ফেরার পথে আবার ওই শপিংমল টা দেখতে পেয়ে কিশান বলল-- জানো বাবা,  ওই দোকানটা খুব পচা।এই দোকানের জামার অনেক দাম। আমার ওসব পছন্দ নয়। --- তুমি কি করে জানলে সোনা এই দোকানের জামার দাম বেশি?

-- মা ই তো আমায় বলেছে। রাস্তার ধারের ওই দোকান গুলোই  আমার খুব  পছন্দ।কিশানের কথায় অলক বুঝতে পারল ছেলের চাহিদা টা  খুবই সাধারণ। বিলাসিতা টা তার মতোই নেই বললেই চলে।

 এই ভাবেই একটা নিম্নবিত্ত পরিবারের সকলের মুখে খুশির জোয়ার এলো। মা যে সার্বজনীন। পূজা তো সকলের জন্যই। অলক মনে মনে ঠাকুর কে  বারবার প্রণাম করলো।  আর  বলল -- মা গো,  দেখো প্রতিটা বছর ই যেন তোমার আগমনে এই ভাবেই ছেলে , বউয়ের মুখে হাসি ফোটাতে পারি।


ছবি : সংগৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ