ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বাংলার নারী দের অবদান
ভারতের সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অবদান ছিল অবিস্মরনীয় ।তারা দেশের স্বার্থে অকথ্য অত্যাচার সহ্য করেছে ,কারাবরণ করেছেন ,এমনকি নিজেদের প্রাণ পর্যন্ত উৎসর্গ করেছে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও লড়াইয়ে সামিল হয়েছিল ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে।ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার , সুনীতি চৌধুরী বিনা দাস, কমলা দাশগুপ্ত ,মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রমুখ নারীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
মাতঙ্গিনী হাজরা ( ১৮৭০ --১৯৪২) : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা। তিনি গান্ধী বুড়ি নামে সর্বাধিক পরিচিত। ১৯৩০সালে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেন তিনি এবং গ্রেফতার হন ।মেদিনীপুর জেলা থেকে ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদের জন্য কংগ্রেস সদস্যরা পরিকল্পনা করেন মেদিনীপুর থানা, ও বিভিন্ন সরকারি কার্যালয় দখল করার। সেই উদ্যেশে প্রায় ছয় হাজার মহিলা স্বেচ্ছাসেবকদল তমলুক থানা দখলের জন্য একটি মিছিল বের করেন এবং তাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা। ব্রিটিশ পুলিশের অমান্য সত্ত্বেও মাতঙ্গিনী এগিয়ে চললে তাকে গুলি করা হয়। লাগাতার গুলিবর্ষন চললেও তিনি কংগ্রেসের পতাকাটি শক্ত করে আঁকড়ে ধরে বন্দেমাতরম ধ্বনি উচ্চারণ করে মৃত্যুবরণ করেন।
বীণা দাস(২৪ আগস্ট ১৯১১-- ২৬ ডিসেম্বর ১৯৮৬) : বীণা দাস রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাই ছোট থেকেই দেশের প্রতি ভালোবাসা তার অল্প বয়স থেকেই হয়েছিল। তিনি বৃটিশ বিরোধী দলের নেত্রী ছিলেন ।তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসন কে গুলি করে হত্যা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি ব্যর্থ হন ।এই জন্য তাকে নয় বছর কারাবরণ করতে হয় । পরে তিনি কংগ্রেসের সম্পাদিকা ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্যা পদে যুক্ত ছিলেন।
কমলা দাশগুপ্ত ( ১১ মার্চ ১৯০৭-- ১৯ জুলাই, ২০০০) : ছাত্রাবস্থা থেকেই তার ব্রিটিশবিরোধী মনের সৃষ্টি হয়। তিনি লাঠিখেলা শেখেন বিপ্লবী দীনেশ মজুমদার এর কাছে। স্ট্যানলি জ্যাকসনকে হত্যা করার জন্য বিনা দাস যে রিভিলভার ব্যবহার করেছিলেন সেটি কমলা দাশগুপ্ত জোগাড় করে দেন তাকে। বোমা হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে কমলা কে গ্রেপ্তার করা হলেও উপযুক্ত প্রমাণ এর অভাবে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। হিজলি বন্দি নিবাসে আবদ্ধ থাকাকালীন তিনি ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হন। ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে যোগ দিয়েও তিনি কারাবরণ করেন।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার( ৫মে ১৯১১-- ১৯ জুলাই ২০০০) : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে স্মরণীয় বহুল পরিচিত নাম প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তিনি মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে যোগ দেন ।এবং ১৯৩২ সালে প্রীতিলতা ১৫জনের একটি দল গঠন করেন পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখল এর জন্য। ক্লাবটির সাইন বোর্ডে লেখা ছিল 'কুকুরএবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ'। ক্লাবটি আক্রমণের সময় পুলিশের হাতে প্রীতিলতা ধরা পড়ে গেলে তাদের কাছে আত্মসমর্পণ না করার জন্য পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
সুদূর পল্লী অঞ্চলের মেয়েদের মধ্যেও জাতীয়তাবাদী মনোভাব সৃষ্টি হয়। উল্লেখ্য দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবী ব্যাপকভাবে বাংলার বিভিন্ন জেলা পরিভ্রমণ করে। এবং তাঁরই অনুপ্রেরণায় গঠিত হয় তিলক স্বরাজ ফান্ড। এখানে ব্যাপকভাবে গয়নাও টাকা কড়ি দান করা হয় ।বাসন্তী দেবী যখন সভা সমিতির মাধ্যমে নারী সমাজকে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছিযেন সেই সময় দেশবন্ধুর ভগিনী উর্মিলা দেবী( ১৯০০ থেকে ১৯৫৬) মহিলাদের মধ্যে স্বরাজ এর মূল মন্ত্র প্রচার এবং চরকা ও খাদিকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য ১৯২১ সালের' নারী কর্ম মন্দির" প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়াও বাংলার বিভিন্ন জায়গায় বেশকিছু নেত্রীর আবির্ভাব ঘটে এইসময়। তারা বিভিন্ন সভা সমিতির মাধ্যমে মেয়েদের ঐক্যবদ্ধ করতে সচেষ্ট হন। ভারত স্বাধীনতার ইতিহাসে সিলেটের সরলা বলা দেব,বালুরঘাটের প্রভা চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান এর সুরমা মুখোপাধ্যায়, ময়মনসিংহ এর উষা গুহ ,বরিশালের প্রফুল্ল কুমারী দের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়।
Few important information:
On August 15, 2024, India will complete 77 years as an independent nation. In other words, we exclude 1947 and start our count from 1948.
However, when we calculate the number of Independence Day the country has celebrated, we also include August 15, 1947, making it our 78th Independence Day on August 15, 2024.
তথ্য সংগ্রহ : উইকিপিডিয়া, পাঠ্য পুস্তক
0 মন্তব্যসমূহ