রাধাষ্টমী

 

Radha Krishna


রাধাষ্টমী


শ্রীরাধার আবির্ভাব তিথিই  রাধাষ্টমী নামে পরিচিত । জন্মাষ্টমীর  ঠিক পনেরো দিন পর এই ধরাধামে রাধারানীর জন্মলাভ হয়। অর্থাৎ ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ধরণী আলোকিত করে শ্রীরাধিকার আবির্ভাব ঘটে। রাধারানীর আবির্ভাব সম্পর্কে শাস্ত্রে নানা ঘটনা  বর্ণিত আছে। 

প্রচলিত আছে সূর্যদেব একদা পৃথিবী পরিক্রমণ করতে এসে পৃথিবীর সৌন্দর্য্য, মাধুর্য্যে  অভূতপূর্ব আকৃষ্ট হন। এবং মন্দন পর্বতের গুহায় গভীর তপস্যায় লিপ্ত হন।  এরূপ অবস্থায় দিন অতিবাহিত হতে থাকলে পৃথিবী ক্রমশ অন্ধকারে আবিষ্ট হতে থাকে। এই সংকটকালে দেবতারা ভীরু, ও নিরুপায় হয়ে শ্রী হরির নিকট ধরাধামকে  রক্ষা করার অনুরোধ নিয়ে তাঁর শরণাপন্ন হন।  এই সময় ভগবান শ্রীহরির দর্শনে সূর্য দেব খুবই আপ্লুত হন। ভগবান বিষ্ণু এইসময় সূর্যদেবকে বর প্রদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে  সূর্যদেব জানান - " আমাকে এমন একটি গুণবতী কন্যা দিন  যার কাছে আপনি চিরকাল বশীভূত থাকবেন।" শ্রীহরি তথাস্তু বলে সূর্য দেবকে সন্তুষ্ট করেন। 


 ভগবান বিষ্ণু সূর্যদেবকে বলেন ধরণীকে রক্ষার্থে তিনি ধরাধামে শ্রীকৃষ্ণ রুপে জন্ম গ্রহণ করবেন ।এবং বৃষভানু রাজা রূপে সেখানে জন্ম নেবেন সূর্যদেব। তারই কন্যা রূপে মর্ত্যলোকে আবির্ভূতা হবেন শ্রী রাধা। শ্রীকৃষ্ণ আরো বলেন যে তিনি মর্তধামে কেবলমাত্র শ্রীরাধারই বশীভূত থাকবেন।

 এরপর ভগবান বিষ্ণু নন্দলয়ে  বাসুদেবের গৃহে জন্ম লাভ করেন। অন্যদিকে রাজা বৃষভানু রূপে--  সূর্য দেবের জন্ম হয় । এবং বৃষভানুর সহিত গোপ কন্যা কীর্তিদার বিবাহ হয়। অবশেষে  ভগবান বিষ্ণুর বরদান এ ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে কীর্তি দার গর্ভ হতে শ্রীরাধিকার জন্ম হয় ।এই দিনটিই রাধাষ্টমী নামে পরিচিত।


 অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়,  একদিন রাজা  বৃষভানু যমুনা নদীতে স্নান করতে গিয়ে দেখেন যমুনা নদীর মধ্যস্থানে সহস্র  রবির আভার ন্যায় প্রজ্জলিত একটি স্বর্ণ পদ্ম ফুটে আছে। এবং তাহার মধ্যে আছে  একটি শিশু কন্যা।  সেই মুহূর্তে ভগবান ব্রম্ভা রাজা বৃষভানুকে  স্মরণ করিয়ে দেন ভগবান বিষ্ণু কর্তৃক তাঁর পূর্বের বরলাভের   স্মৃতি । এরপর মহানন্দে বৃষ ভানু সেই  শিশুকন্যাকে নিয়ে এসে তাঁর পত্নী কৃতিদার হাতে দেন।  কিন্তু খুবই অবাক বিষয় শিশুকন্যা  তখন চোখ মেলে চায় নি। এইসময় ভগবান নারদ মুনির আদেশে   রাজা বৃষভানু কন্যাশিশুর আগমনের আনন্দে  উৎসবের আয়োজন করলে,  সেখানে আমন্ত্রিতদের মধ্যে নন্দরাজ বাসুদেব উপস্থিত ছিলেন শ্রী কৃষ্ণকে নিয়ে। এই অনুষ্ঠান  এ শ্রীকৃষ্ণ যখন হামাগুড়ি দিয়ে শ্রীরাধিকার নিকট  আসেন  সেই মুহূর্তে রাধারানী নয়ন মেলে দেখেন। 

বৈষ্ণব তথা হিন্দু সমাজে জন্মাষ্টমীর  পাশাপাশি মহাসমারোহ এর সহিত  রাধাষ্টমী ও পালন করা হয়। ভাগবত পুরাণে বর্ণিত আছে  কোন ব্যক্তি যদি একবারের জন্য রাধাষ্টমী ব্রত পালন করে তাহলে সে ব্রহ্ম হত্যার মতো মহা পাপ থেকে মুক্তি পাবেন। 


এক বর্ণনা থেকে জানা যায় যে লীলাবতী নামে এক পতিতা ছিলেন । তিনি একসময় ঘুরতে এসে দেখেন নগরে মন্দিরে মহাসমারোহে রাধা অষ্টমী পূজা পালিত হচ্ছে । তিনি কৌতূহলবশত রাধাষ্টমী ব্রতীদের  এই পূজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা রাধাষ্টমী সম্পর্কে ও পূজার নিয়ম সম্পর্কে সমস্ত তারা তাকে বলেন। এবং লীলাবতী ও এই  পুজো  ও ব্রত করেন তাদের সাথে যুক্ত হয়ে।  কিন্তু পরদিন সর্পদংশনে তার মৃত্যু হলে যোম দূতেরা তাকে যোমা লয়ে নিয়ে যেতে এলে সেখানে ভগবান বিষ্ণুর অনুগামীরা তাকে মুক্ত করে বৈকুণ্ঠলোকে নিয়ে যান। এভাবে  পতিতা লীলাবতী ও রাধাষ্টমীর ব্রত পালনের মাধ্যমে পাপমুক্ত হয়েছিলেন।

তথ্যসূত্রঃ sanatandharmatattva.wordpress.com/category/আচারউৎসবপর্বদিন/শ্রীশ্রী-রাধাষ্টমী/

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ