কৃষ্ণ প্রেমী অনুরাগীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো ঝুলন পূর্ণিমা। একে শ্রাবণী পূর্ণিমাও বলা হয়। বৈষ্ণবদের কাছে দোল পূর্ণিমা ও রথযাত্রার পরবর্তী বড় উৎসব হলো এটি।
শ্রাবণ মাসে একাদশী থেকে পূর্ণিমা পর্যন্ত এই পাঁচ দিন ব্যাপী ঝুলন উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই ঝুলন পূর্ণিমার সূচনা ঘটেছিল দ্বাপর যুগ থেকেই। রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলা কে কেন্দ্র করে এই উৎসবের সূচনা ঘটে।
এই উৎসবে ভক্তিমূলক নাচ-গান, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দোলনা সাজানো, এইসবের মাধ্যমে কৃষ্ণ অনুগামীরা এই উৎসবে মেতে ওঠে মহাসমারোহে।
ঝুলন শব্দ টির মাধ্যমে দোলনা শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই উৎসবের অনুরাগীরা রাধাকৃষ্ণর যুগলবিগ্রহ সুন্দরভাবে ফুলমালা সহযোগে সাজায়। বিভিন্ন ভক্তিমূলক গান, বৃন্দাবনে তাদের প্রেম পর্বের লীলা এই সমস্ত তথ্য ভক্তগণের সামনে আলোচনার মাধ্যমে ঝুলনযাত্রা পরিবেশন করে।
দেশ-বিদেশ থেকে বহু ভক্তরা এই উৎসব দেখতে ভারতের নবদ্বীপ, মায়াপুর, মথুরায় ভিড় জমায় প্রতিবছর এই সময়। নবদ্বীপের ইসকন মন্দিরে এই উৎসবের আয়োজন হয় যা চোখে পড়ার মতো।
ঝুলনের বিশেষ আকর্ষণ হলো এই পাঁচদিন কৃষ্ণের বাল্যকাল থেকে কৈশোর কাল অব্দি তার নানা বিধ কার্যকালাপ পুতুল দিয়ে সাজিয়ে ভক্তরা তুলে ধরেন।
এই উৎসবে রাধা কৃষ্ণের দোলনা টি দোলানো হয় পূর্ব দিক থেকে পশ্চিমে। সূর্যের উদয়-অস্তের উপর নির্ভর করে এটি করা হয়ে থাকে। কৃষ্ণ অনুগামীরা দোলযাত্রা রথযাত্রা স্নানযাত্রার মতো শ্রদ্ধা ও সম্মানের সহিত ঝুলন উৎসবে মেতে ওঠে প্রতিবছর।
এখনো গ্রামাঞ্চলের দিকে বাচ্চারা আনন্দের সহিত পালন করে ঝুলন পূর্ণিমা । বাড়িতে পুতুল সাজানো, কাদামাটি দিয়ে পাহাড় বানানো ,কালিমাটি, বালি, মাটি দিয়ে রাস্তা করা, শ্যাওলা তুলে নিয়ে এসে ঘাসের জমি তৈরি করা, পথ ঘাটতৈরি করা। আবার জঙ্গলে বানানো। এই সমস্ত কিছু করে এই পাঁচ দিন।তারপর সুতো দিয়ে খেলনা এরোপ্লেন ঝোলানো হয়। বিভিন্ন খেলনা জীবজন্তুদের শ্যাওলা দেওয়া ঘাসের উপর বসিয়ে তার উপর ঘাস জড়িয়ে জঙ্গল বানায়। এই সকল প্রভৃতি কাজের মাধ্যমে তাদের সৃষ্টিশীল, শিল্পীমনের পরিচয় দেয় এই উৎসবের মধ্য দিয়ে। যা সত্যিই আকর্ষণীয়।
0 মন্তব্যসমূহ