পরকীয়ার অন্তিম পরিণতি


The ultimate consequences of Illicit love অবৈধ প্রেমের চূড়ান্ত পরিণতি


পরকীয়ার অন্তিম পরিণতি

সুনয়নার সাজ পোশাক বিলাসীতা কোনো কিছুরই কোনোদিন ও ঘাটতি রাখেন নি অমিতবাবু। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসাবে সুনাম অর্জন করলেও অতীতের আর্থিক, দুঃখ, কষ্ট পরিশ্রম টাকে নিজের মন থেকে  কখনোই পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলতে পারেন নি। তাই তো, অর্থ প্রতিপত্তির বিস্তার লাভের সত্ত্বেও কর্মচারী সুলভ কর্মঠ মনোভাব টা আজীবন তার কর্মসত্ত্বায় ছিল বিরাজমান। কিন্তু আর্থিক উন্নতির সাথে সাথে অমিত বাবুর স্ত্রীর সুনয়নার চরিত্রের আমূল পরিবর্তনের জোয়ার আছড়ে পরে অচিরেই। অমিতবাবুর থেকে প্রায় জোরপূর্বক টাকা আদায় করে সুনয়না দামি চার চাকা গাড়িও কিনেছিল। তারপর হামেশাই ড্রাইভার নিয়ে এদিক , ওদিক বেরিয়ে যেতো।

প্রিয়ম মনে সুনয়নার সাত বছরের ছেলের প্রতি যত্ন, ভালোবাসার দূরত্ব টা ঠিক এই সময় থেকেই তৈরি হয়েছিল। সুনয়না কিন্তু বরাবরই এইরকম ছিল না। বিধবা শাশুড়ি মায়ের যত্নআত্তি, ছেলের দেখাশোনা নিজের হাতেই করতো। অন্য দিকে অমিতবাবু ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকায় সাংসারিক টুকিটাকি কেনাকাটা, বাজার যাওয়া, ইলেকট্রিক বিল জমা দেয়া, ব্যাংকিং কাজকর্ম, প্রিয়মকে স্কুল দিয়ে আসা নিয়ে আসা এইসকল দায়িত্বই সে নিষ্ঠা সহকারে পালন করতো। কিন্তু সাংসারিক জীবনে অমিতবাবুর সঙ্গ না পাওয়ায় একটা একাকী কত্ত সুনয়নাকে গ্রাস করে ছিলো। 

রোজকার মতো প্রিয়মকে স্কুলে দিতে যাওয়ার পথে সুনয়নার সাথে প্রদীপ নামে একজনের আলাপ পরিচয় ঘটে। সুনয়না, প্রিয়মকে স্কুলে দিতে যাওয়ার পথে প্রায়ই প্রদীপকে দেখতে পেত বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছে বাসের অপেক্ষায়।

একদিন প্রিয়মকে সুনয়না নিয়ে যে অটোটায় করে স্কুলে যাচ্ছিল হটাৎ সেই অটোটাতেই প্রদীপ ওঠে এবং প্রায় গায়ে পরেই খেজুরে আলাপ করতে চায়। তবে সুনয়নাও নির্দিধায় তার ডাকে সাড়া দেয়। আসলে সুনয়নার স্বামী থাকলেও তার তার নিঃসঙ্গ, একঘেয়ে জীবনটাকে সে একটু অন্যভাবে কাটাতে চেয়েছিল। তাই প্রদীপের সাথে তার বন্ধুত্ব টা সহজেই হয়ে যায়। বছর চল্লিশের বিপত্নীক, সুঠাম, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী প্রদীপকে নিজের অজান্তেই কখন মনে জায়গা করে ফেলেছে সুনয়না নিজেই বুঝতে পারে নি। স্কুল নিয়ে যাওয়ার পথে তার চোখ দুটো সর্বক্ষন ই তখন ওই পুরুষের খোঁজে বাসস্ট্যান্ডের দিকে তাকাত। দেখা হওয়ার পর প্রিয়মকে স্কুলে ঢুকিয়ে দিয়ে প্রদীপের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরত সুনয়না। প্রদীপ বলেছিল ও একটি বেসরকারি চাকরি করে। তাই বেশিক্ষন অবশ্য ওরা দেখা করতে পারতো না।

তখন সুনয়নার বেশিরভাগ সময়ই কাট তো সোশ্যাল মিডিয়ায়, আর প্রদীপের সাথে ফোনে কথা বলে। বৌমার এহেন লক্ষী ছাড়া আচরণ অমিতবাবুর মায়ের ও দৃষ্টি এড়ায় নি। সে দেখতে থাকেন চোখের সামনে তার বৌমা তলিয়ে যাচ্ছে অনিশ্চিত পথে। সংসারে কাজকর্মে তার আর কোনো মন নেই। নেই প্রিয়মের জন্য কোনো সময়। আগে প্রিয়মের জন্য রকম রকম রান্না করতো, নিত্য নতুন ভালো ভালো টিফিন করে দিত সেইসব এখন  অতীত। এখন বেশির ভাগ সময়টাই কাটে ফোন আর সাজগোজের ব্যস্ততায়।
সোনালী স্বপ্নের হাতছানিতে তখন মহোছন্ন সুনয়নার জীবন। মাঝে মাঝেই গাড়ি নিয়ে সে আর প্রদীপ বেরিয়ে যেত বিভিন্ন পার্ক, রেস্তোরাঁ, কখনো সিনেমা হলে।

অমিত বাবুকে বৌমার এইরূপ ঘৃণ্য আচরণ সমস্ত কিছু সম্পর্কে তার মা বললেও তাতে কোনো লাভ হয় নি। অমিটবাবুর কোনো কথাই তখন সুনয়না গ্রাহ্য করে নি। উপরোন্তু নিলজ্জের মতো তার আর প্রদীপের ভালোবাসার কথা তাকে আরো বিস্তারিত ভাবে চিৎকার করে শোনায় সুনয়না। অমিতবাবু মাথা ঠান্ডা রেখে তাকে এই আসন্ন বিপদের থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করলেও সে তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকার কথা স্পষ্ট ভাবে বলে দেন। এমনকি প্রদীপের সাথেই বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিতে চায় সে, তার জন্য ডিভোর্স এর জন্য এপ্লাই করার কথাও বলে।

শত বারণ, পারিবারিক সুখ শান্তি , মান- মর্যাদা, এমনকি পুত্র সন্তানের মায়াও ত্যাগ করে কাউকে কিছু না জানিয়েই একদিন সুনয়না বেরিয়ে পড়ল নতুন বাসা, নতুন জীবনের সন্ধানে। ও ভেবেছিল প্রদীপের প্রাচুর্য্য না থাক, তাকে যথেষ্ট সময় দেয়া, তাকে অন্তরে আগলে রাখার সব ক্ষমতাই প্রদীপের আছে। এই কয়দিনে প্রদীপের সাথে মেলামেশার দরুন তার একঘেয়ে একাকীত্ব জীবনে এসেছে মুক্ত বিহঙ্গের স্বাদ।

তাই বিয়ের সমস্ত গয়না, ও অমিত বাবুর দেয়া কিছু গয়না, নগদ কিছু টাকা নিয়ে সে বেরিয়ে পরে প্রদীপের হাত ধরে ভালোবাসার জোয়ারে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুনয়না দু- চোখে যে স্বপ্ন নিয়ে পরিবার - সন্তানকে পর করে যে আগন্তুকের হাত ধরে বেরিয়ে এসেছিল তারই স্বরযন্ত্রের শিকারের বলি হয়েছিল সে। প্রদীপ তাকে বিয়ে তো দূর, মাঝ পথে কোল্ড ড্রিংকসে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দালাল মারফত মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছিল না জানি কোথায়।

অনেক খোঁজাখুঁজি, মিসিং ডায়রি , খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন সব ই হলো বৃথা চেষ্টা। অনেক গুলো বছর গেছে পেরিয়ে । কোনো খোঁজ ই তার মেলে না। হয়তো সুনয়না যেখানে আটকা পড়েছে সেখান থেকে সে চাইলেও আর কখনো বেরিয়ে আসতে পারবে না। দেখতে দেখতে বারোটা বছর পার হয়ে গেছে।

ধীরে ধীরে সংসারে তার মায়া টাও আজ বড্ড ফিকে হয়ে গেছে। প্রিয়ম এখন কলেজে পড়ে। দাদু, ঠাম্মু, বাবাই এখন তার জীবনের সব কিছু। মা এর স্মৃতি তার কাছেও অনেকটাই ঝাপসা। এইভাবেই পরকীয়ার বিষ আসতে  আসতে মুছে দিয়েছে একটি সুখের সংসার থেকে একটি রমণীর ছবি। অবশ্য কাজের অবসরে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে অমিতবাবু এখনো ভাবে বারোটা বছর তো হয়ে গেল, - নেই কোনো খোঁজ , আদৌ কি আছে এই পৃথিবীতে সুনয়নার কোনো অস্তিত্ব? হয়তো আছে, হয়তো নেই। এইভাবেই দিন কেটে যায় ব্যবসায়ী অমিতবাবু বাকিটা জীবন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ