নিঃস্বার্থ শৈশবের ভালোবাসা


Selfless childhood love নিঃস্বার্থ শৈশবের ভালোবাসা

নিঃস্বার্থ শৈশবের ভালোবাসা

প্রেম, ভালোবাসা ছোট বয়স থেকেই অনেকের মনে দোলা  দেয়। আবার দাগ ও দিয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছোট বেলার প্রেমে লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট এইরকম কারণ হয়তো থাকে না। এই ভালোবাসা তৈরি হয় নেহাতই ঝগড়া, মারামারি বন্ধুত্ব থেকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথেই এই বন্ধুত্বই পূর্ণতা পায় ভালোবাসায়। ভাগ্য যাদের ভালো হয় তারা সারাজীবনই এই ভালোবাসার দোলায় দুলতে থাকে। আর পোড়া কপাল নিয়ে যারা এসেছে তাদের কাছেই এই ভালোবাসা দাগ কাটে মনে।
বয়স বারার সাথে সাথে সীমার ও ছোটবেলার ভালোবাসা মনে দাগ কেটে বিদায় নিয়েছে পাঁচ বছর আগেই। যদিও তাদের দু-পক্ষর কেউই এই প্রেমে ইতি টানতে ছিল নারাজ। কিন্তু সীমার বাবা -আলোকেশ বাবুর ছিল এতে ঘোর আপত্তি। এমনিতেই তিনি প্রেম , ভালোবাসার বিরুদ্ধেই ছিলন বরাবর। তার উপর নিজের পাড়া তেই প্রেম , এটা তার পক্ষে মেনে নেয়া ছিল একদমই অসম্ভব। সীমা ওর বাবাকে বোঝানোর কিংবা, পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত, কোনোটাই নিতে পারে নি তখন। কারণ দুজনেই সবে মাত্র কলেজে পড়ে তখন। 
married car

অতঃপর দেখাশোনা করেই একদিন সানাই বাজিয়ে, মহাসমারোহে বিয়ে হয়ে গেল আলোকেশ বাবুর মেয়ের। বিয়ের পর দিন যখন সীমা শ্বশুর বাড়ির উদ্যেশে রওনা দিলো, গাড়ি থেকেই হঠাৎই তার চোখ চলে গেল অর্কর মানে ওর ভালোবাসার মানুষটির বাড়িটার দিকে। এতদিন যে বাড়িটাকে সে নিজের শ্বশুর ঘর বলে মেনে এসেছে যাকে স্বামী ভেবে কল্পনায় নিজের সাথে সংসার সংসার খেলা খেলেছে - তাদের সকলকে বিদায় দিয়ে সে চলে গেল নতুন শ্বশুর বাড়িতে। 

বিয়ের পর অর্কর সাথে সেভাবে দেখা আর হয়ে ওঠে নি। বিয়ের ঠিক আগের মুহূর্ত গুলোতে যতবারই তারা দেখা করেছে দুজন দুজনকে সারাজীবনের মতো হারিয়ে ফেলার ব্যথাটাই বেশি পেয়ে বসেছিল তখন। হয়তো বয়সটা কম ছিল বলেই হঠকারিতায় কোনো সলিড ডিসিশন ও নিতে পারে নি তখন। আর কেরিয়ার গড়ার এই মোক্ষম সময়ে অর্ককে তাড়াহুড়ো সংসারের ঘেরাটোপে আটকে রাখতে ও সীমা চায় নি।

দেখাশোনা করে বিয়ে হলেও স্বামী রূপে যাকে পেয়েছিল সীমা, সে শুধুমাত্র 'স্বামী' এই সম্পর্কের বাঁধনে নিজেকে বেঁধে রাখে নি। বরং একজন ভালো বন্ধুর মতোই মেলে ধরেছিল নিজেকে। প্রথম প্রথম এমন অনেক রাত ও গেছে সীমা ওর বর-কৌশিকের বুকে মাথা রেখে অর্কের জন্য কেঁদেছে। আর কৌশিকও তার এই অন্যায়কে প্রশয় দিয়ে তাকে যত্নে আগলে রেখেছে। এইভাবেই ধীরে ধীরে মনের অজান্তেই কৌশিক কবে যে সীমার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল তা সীমাও টের পায় নি। 

সীমা ভালোবেসে ফেলে কৌশিক কে। কৌশিক ছিল একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষক। সীমার শ্বশুর বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব বেশি হওয়ায়- তারা অন্যত্র ভাড়া বাড়ি নিয়ে থাকতো। সেখানেই শুরু হয় তাদের সুখের সংসার। বিয়ের বছর দেড়েকের মধ্যেই সীমা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এইসময় সীমাকে বাপের বাড়ি পাঠানো তো দূরের কথা বরঞ্চ ভোর থেকে উঠে কৌশিক একা হাতে রান্না বান্না, ঘরকন্না, স্কুল সব কিছু সামলেছে। সীমাকে কোনো কষ্ট পেতে সে দেয় নি। ইতিমধ্যে কোল আলো করে বাবান এলো সীমার ঘরে। এরপর থেকে সমস্ত কিছুই খুব সুন্দর কাটছিল। কৌশিকের স্কুল,বাবানকে নিয়ে সীমার সারাদিনের ব্যস্ততা এসবের মধ্যে বেমালুম মন থেকে হারিয়েই গিয়েছিল সীমার  ছোটবেলার প্রেমের স্মৃতি। 

কিন্তু সুখের জীবনেও ছন্দপতন ঘটতে বেশি সময় লাগে নি। হঠাৎই মাস ছয়েক আগে স্কুল  বেরোনোর পথে কৌশিকের বাইকের সাথে একটি মালবোঝাই করা লরির এক্সিডেন্ট হয়। মুহূর্তের মধ্যেই সব শেষ । এত টুকুও সময় দেয় নি সে। চলে গেল সীমাকে একা করে, বাবানকে পিতৃহীন করে।

আর তারপর থেকেই একপ্রকার জোর করেই শ্বশুর ঘর থেকে সীমার বাবা তাকে তার জন্মভূমিতে নিয়ে আসেন। সেই থেকেই সীমা আর বাবান এখানে। বাবান এখন সবেমাত্র দু-বছর। ইদানীং সীমার বাবার আলোকেশ বাবুর শরীর টা ও ঠিক যাচ্ছে না। আসলে কৌশিকের অকাল প্রয়ানটা, আর সীমার এই বৈধব্ব তিনি মেনে নিতে পারেন নি।

তবে আলোকেশ বাবু ইদানিং মাঝে মাঝেই অর্কর কথা সীমাকে শোনায়।বলেন-" অর্ক এখন বেশ বড় একটা চাকরি করে,  জানিস সীমা!আর বিয়ে টাও এখনো হয় নি ওর।" এই কথা গুলোর উদেশ্য সীমা ঠিকই বোঝে। আসলে বোঝা নামানোর জন্য নয়, একটা সঙ্গী, একটা ভরসার হাত যাতে আজীবন সীমার মাথার ওপর থাকে সেই জন্যই। কিন্তু সীমা মনে মনে ভাবে যে ভালোবাসা একবার জীবনে দাগ দিয়ে যায়, আর যাই হোক নিজের স্বার্থের জন্য তাকে ব্যবহার করে নিজের সিঁথির সিঁদুর আবার রাঙিয়ে নেওয়া যায় না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ