কোনো নারীই বন্ধ্যা নয়


No woman is infertile কোনো নারীই বন্ধ্যা নয়

কোনো নারীই বন্ধ্যা নয়

সুস্থ মানুষরাও বিলাপ বকতে পারে। শিক্ষার আলোর বিচ্ছুরণও কোনো কোনো সময় অশিক্ষার ঘোর টাকে কাটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হয়।তেমন ই এক অশিক্ষিত সমাজের মুখোমুখি পৃথার জীবন।

পৃথা একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা। তাঁর স্বামীও একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী
। পৃথার  গর্ভে ধারণ করার শক্তিটুকু ই শুধু নেই। তারপর সব কিছুই বিদ্যমান এই নারী শরীরে। অর্থাৎ এই বিশ্বচরাচরে দয়া,  মায়া,  মমত্ব, ভালোবাসা , অনুভূতি- এই সব কিছুর সুষম মিশ্রনে গঠিত হয় যে পূর্ণ পরিণত মানুষ তার সর্বস্ব গুণ ই পৃথার মধ্যে স্পষ্ট পরিলক্ষিত।

কলেজ পড়িয়ে ফেরার পথে পৃথা প্রথম প্রথম বড়ো গেটের সামনে বসে থাকা পূজা, রিপুই হোক আর ফুটপাতে বসে ফুল বিক্রি করা সদ্য বালক কৃশ, আনন্দ ই  হোক সবাইকে সে তার এম্বা সেডোর গাড়িতে তুলে নামি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়ে তাদের আবদার মতো যথাসাধ্য খাওয়াতো। তারপর রবিবারের ভুরিভোজে তাদের নিমন্ত্রণ করে নিজের হাতে রান্না করে যত্ন নিয়ে খাবার বেড়ে খেতে দিত।

পৃথা মনে করতো তার শিক্ষা পরিপূর্ণতা পাবে শুধুমাত্র কলেজের সাহিত্যের ক্লাসের মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রেখে নয়। ওই বাচ্চা গুলোর সর্বসুখে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারলে তার 'মান হুশ' জীবন টা সার্থক হবে।

সেইমতো পৃথার আবদারে তাঁর স্বামী অমিত বাবু রাতারাতি একটি সুন্দর ছোট বাড়ি করলেন। অর্থের টানাপোড়েন না থাকার কারণেই যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি চলে এলো প্রয়োজনীয় কতগুলি ছোট ছোট বিছানা, ডাইনিং টেবিল, আলমারী এবং ব্যবহৃত কিছু জিনিস পত্র। পৃথাও ইদানিং খুব ব্যস্ত কলেজ শেষেই বেরিয়ে পরত বাচ্ছাদের দরকারি জিনিসপত্র কেনাকাটায়।

এইদিকে পূজা, রিপুরাও খুব অবাক হলো পৃথার এইরূপ আচরণে। তাদের মনে হলো- দিদিমণি হয়তো তাদের দিকে আর ফিরেও তাকাবে না। কিন্তু পৃথা কলেজ থেকে গাড়িতে উঠেই নিজের মনে মিটিমিটি হাসে আর বলে - আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা কর তোরা, তারপর দেখবি তোদের দিদিমণি কি সারপ্রাইজ উপহার দেয় তোদের।

অন্য দিকে ফুলবিক্রেতা কৃশ, আনন্দও ভাবে দিদিমনির হয়তো কয়টা দিন মনে আবেগ এসেছিল তাই প্রাণ ভরে খাইয়েছিলো।

কিন্তু তাদের এই আজব চিন্তাভাবনায় জল ঢেলে পৃথা আষাঢ়ের রথের শুভ দিনে  তার প্রিয় এম্বা সেডোর গাড়ি করে তাদের নিয়ে এলো নতুন বাড়িতে। বাড়ির সামনেই গাড়িটা দাঁড়াতেই পৃথা বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বললো- এই হলো তোমাদের নতুন বাড়ি।সবাই একসঙ্গে তৎক্ষণাৎ উল্লাসে হইহই করে উঠলো। 

এত আনন্দ, এত সুখ পৃথা যেন পৃথিবীর কোনো স্পর্শেই পায় নি। এতগুলো বাচ্চার হাঁসি মুখ, কচি কচি হাত, তাদের নিষ্পাপ চোখের চাওনি সবকিছু তাকে ক্ষনিকের মধ্যেই ভুলিয়ে দিল তার গর্ভধারণের অক্ষমতা। এই সকল কচিকাঁচা দের মধ্যে একদম ছোট ছিল টিনা। যাকে পৃথা বাসস্ট্যান্ডে ভিক্ষা করতে দেখে ছিল। সে আজ পৃথার নয়নের মণি। সে হটাৎ ই গাড়ির ভিতর থেকেই কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো পৃথাকে-বাড়ির সামনে গেটের গায়ে ওটা কি লেখা আছে দিদিমণি? গাল টিপে টিনা কে সে বলল -ওখানে লেখা আছে আমাদের এই ছোট্ট বাড়িটার নাম। শুনবে সকলে কি লেখা আছে? সবাই চিৎকার করে হ্যাঁ হ্যাঁ বলে উঠলো। বড় বড় চোখ করে পৃথা বললো 'আমার সন্তান সন্ততি' । সঙ্গে সঙ্গে হাততালিতে  ধ্বনিত হয়ে উঠলো পরিবেশ। সাথে সাথে তাদের মুখে 'মা' ডাক শুনে বাক্য হারা হয়ে গেল পৃথা।
সন্তান সন্ততি মানে এই শিক্ষা র অজ্ঞানতায় থাকা বাচ্ছা রাও জানে। তাই ওই রূপ নামকরণের সাথে সাথেই তাকে মা বলে কাছে টেনে নিয়েছে ।কিন্তু হায় রে সমাজ! এত গুলো বাচ্চার মা হওয়া সত্ত্বেও তাকে লোকে এখনও বাঁজা বলে কুটুক্তি করে।

ছবি : সংগৃহীত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ