বিষাদের চিঠি

 


বিষাদের চিঠি

“ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না, শেষ হয় শুধু সময়।”

রাতের নিস্তব্ধতা যেন আরও বেশি করে মনে করিয়ে দেয় কিছু অসমাপ্ত কথা, কিছু ফেলে আসা ভালোবাসার পাতাগুলো। কেউ একজন প্রতিদিন রাতে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে। আবার কেউ একজন, ঠিক এই সময়েই, বিছানার এক কোণে বসে অন্ধকারের মাঝে লিখে চলে বিষাদের এক একটা চিঠি। পাঠানোর ইচ্ছা থাকে না, তবু যেন বুকের ভার কিছুটা হালকা হয়


আজ তেমনই এক চিঠির পাতা খুলে বসেছি। সে চিঠির প্রাপক তুমি—তুমি, যে আজ আর আমার জীবনে নেই, তবু যে আমার সমস্ত অনুভব জুড়ে।


#ভালোবাসা

#ভালোবাসি

#রাতেরব্লগ


প্রিয়তম,

তুমি কি জানো, এই শহরের রাতগুলো আর আগের মতো নয়? আলো আছে, ছায়া আছে, কিন্তু উষ্ণতা নেই। তোমার চলে যাওয়ার পর সব কিছু যেন থমকে গেছে। আমি হেসেছি, কথা বলেছি, সংসারের কাজ করেছি, কিন্তু কোথাও যেন তুমি ছিলে না। অথচ কতটা ছিলে, কত গভীরে, তা আমিও জানতাম না, যতদিন না তুমি হারিয়ে গেলে।

তুমি কি আজও রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আমার কথা ভাবো? যেমনটা আমি ভাবি… প্রতিদিন।


ভালোবাসার শুরু, সেদিনের সেই প্রথম চিঠি

তুমি প্রথমবার আমার হাতে চিঠি ধরিয়ে দিলে সেই শরতের দুপুরে। কাঁপা হাতে খোলা সেই চিঠিতে লেখা ছিল, “তোমায় ছাড়া আমি জীবন ভাবি না।”

আমার ঠোঁটে হাসি ছিল, কিন্তু ভিতরে ছিল এক সমুদ্র শঙ্কা—এই মানুষটা কি সত্যিই থাকবে? সময় কি সত্যিই আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে?

হয়তো করেছিল। কিছুদিন। তারপর সময় তার কাজ করেছে, আর তুমি? তুমি হারিয়ে গেছো সময়ের ঢেউয়ে।


স্মৃতির খেরোখাতা

প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙে, কিন্তু বালিশে তোমার গন্ধ নেই। আয়নায় মুখ দেখি, চুলে তোমার আঙুল নেই। চায়ের কাপটা হাতে নিই, তবু পাশে কেউ বলে না, “আজ একটু কম মিষ্টি হয়েছে…”

তুমি ছিলে না, কিন্তু আজও আমার প্রতিদিনের জীবনে আছো। তুমি নেই, কিন্তু তবু আছো।

তুমি যেদিন বললে “আমি আর পারছি না,” আমি কিছু বলিনি। আমি চুপ করে গিয়েছিলাম কারণ আমি জানতাম, কিছু কথা শুধু নিঃশব্দেই বলা যায়।


চাই না ফিরে আসো, শুধু মনে রেখো

আজ আর আমি চাই না তুমি ফিরে আসো। শুধু এইটুকু চাওয়া, তোমার কোথাও কোনো এক নিঃশব্দ রাতে, আমার নামটা মনে পড়ুক।

কোনো সুর শুনে হঠাৎ তোমার বুকটা ভার হয়ে উঠুক। তুমি জানো না, আমি এখনো তোমার সেই পুরনো চিঠিগুলো রেখে দিয়েছি, সেই মোড়ানো গোলাপের পাপড়িগুলোর মতো। মুছে ফেলিনি কিছুই, কারণ এগুলোই তো আমার একমাত্র ‘তুমি’।


যে চিঠি তুমি কোনোদিন পাবে না

আমি আজও চিঠি লিখি—তোমাকে। ছাদের কার্নিশে বসে, অথবা কফির কাপ হাতে। কখনো কাগজে, কখনো নিজের মনেই। সেই চিঠিগুলো তুমি কোনোদিন পাবে না। কিন্তু তবু আমি লিখি। যেন একরকম অভ্যেস হয়ে গেছে—তোমাকে ভালোবাসার, তোমার কাছে চুপচাপ নিজের মন খুলে বলার।

লেখাগুলো হয়তো একদিন পুড়িয়ে দেব। অথবা ছিঁড়ে ফেলে দেব রাস্তায়। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত এগুলোর মধ্যেই আমি বাঁচি, নিশ্বাস নিই।


কেন চলে গেলে, সেই প্রশ্নের উত্তর নেই

আমরা অনেকেই প্রশ্ন করি, “সে কেন চলে গেল?” কিন্তু উত্তর আসে না। হয়তো আমরা উত্তর খুঁজিও না আসলে। কারণ জানলে ব্যথা কমে না, বরং বেড়ে যায়। আমি আর জানতেও চাই না, তুমি কেন গেলে। আমি শুধু চাই, তোমার মনে থাকুক, একবার কোনো এক সন্ধ্যায় তুমি সত্যিই কাউকে ভালোবেসেছিলে। আর সেই কাউকে তুমি চিরকাল কষ্ট দিয়ে গেছো।

শেষ চিঠি নয়, এটা তো একটা যাত্রা

এই চিঠি শেষ নয়। বরং এটা একটা যাত্রা। যেখান থেকে আমি একটু একটু করে বেরিয়ে আসছি। নয়তো তোমার স্মৃতির হাত ধরেই হাঁটছি একা পথ ধরে। হয়তো কোনোদিন কোনো নতুন ভোর আসবে, যেখানে তুমি থাকবে না, কিন্তু তোমার ছায়াটাও আর থাকবে না।

সেদিন আমি একদম নতুনভাবে হাসবো, নতুনভাবে বাঁচবো।

তবু আজ, এই রাতে, আমার বিষাদের চিঠি লেখা শেষ হয় না।

ভালোবাসা কখনো মরে না, মানুষ মরে যায়।”

এই কথাটা আজ বড় বেশি সত্যি লাগে। আমরা বাঁচি, ভালোবাসি, হারাই। তবু ভালোবাসাটা থেকে যায়। তুমি নেই, কিন্তু ভালোবাসাটা এখনো আমার বুকের ডায়েরিতে লেখা আছে, রোজকার পাতায়।


শেষে, একটা অনুরোধ…

যদি কোনোদিন হঠাৎ দেখা হয়ে যায় কোনো অলিতে-গলিতে, মুখে হাসি রেখো।

আর যদি চোখে জল থাকে, জেনে নিও—আমি কখনো তোমার বিরুদ্ধে ছিলাম না। আমি শুধু ভালোবেসেছিলাম। সেই ভালোবাসাই আজ বিষাদের চিঠি হয়ে রয়ে গেছে।


চিঠির নিচে স্বাক্ষর নেই, শুধু একটা নাম লেখা— "তোমার প্রাক্তন ভালোবাসা।”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ