সূর্যোদয়ের স্বপ্নময় বনে ( শুভ সকাল)




 হালকা কুয়াশায় ভোরটাকে সোহাগে মুড়ে ধরে বনমহল। একটি নীরব কিন্তু হৃদয়চ্ছুয়া কান্না মনে করায়—নতুন দিনের প্রথম নিশ্বাস। সূর্যের প্রথম আলোটা যেন পাতার আঁকড়ে টের পায় নিজেকে জীবন্ত রাখার অমলিন দায়িত্বে। প্রতিটি কাণ্ডের ফাঁক দিয়ে ভোরের সোনালী রশ্মি প্রবেশ করে, মাটির বুকে সোনা ঢেলে দেয়। সেই সোনালী আলোর খেলা দেখে মনে হয়, অন্ধকারের অন্তরালে দিয়ে এক ক্লান্ত আজকের রাত বিদায় নিয়েছে, আর আজকের দিন উৎসবের আমন্ত্রণপত্র হাতে নিয়ে এসেছে।


পাথুরে মাটিতে ভেজা পাতা ভোরের শিশির নিয়ে টিপে রাখে এক অদ্ভুত নীরবতা। একটু দূরে ছোট্ট কচি লতা তার কোঁচকানো পাখা ঝাঁকায়, যেন নবজন্মের নাট্য মঞ্চে উদ্বোধনী দৃশ্য পরিবেশন করছে। শাখা-প্রশাখার ফাঁক দিয়ে সূর্যের কিরণে কণ্ঠহীন বন্ধুবনের প্রতিটি দুয়ার খোলা—পাখিদের মৃদু চুরমুরি, পাতা-পাতার নাচের তাল, আর দূরে কোথাও কাঠবিড়ালির ছুটাছুটি, সব মিলে এক অনূভূতির সিম্ফনি বয়ে আনে।


আমি এই বনপথ ধরে হাঁটছি, প্রতিদিনের ক্লান্তিকর আবরণ ছেঁড়েই, ফিরে যাচ্ছি প্রকৃতির সেই না বলা ঠিকানায়। প্রতিটি নিঃশ্বাসে মিশে যাচ্ছে ওই ভোরের ঠান্ডাবেলা কোলাহল, মনে হচ্ছে মনেরও ভেতর থেকে অপ্রয়োজনীয় সব মন্থর ভাব ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। হাঁটার প্রতিটি পদে, পায়ের ছাপ ধুলোয় মিশে নীরব চিহ্ন হয়ে রয়ে যাচ্ছে, কিন্তু প্রকৃতি সেটা ভুলে যাচ্ছে—খেলায় মগ্ন সবকিছু, বিন্দুমাত্র হিসাব-নিকাশ নেই।

এই সময়টায় আমার মন টানে এক অদেখা কবিতা


লিখতে। প্রত্যেকটা শব্দ যেন ভোরের শিশিরের মতো কাছে টেনে নেয়, প্রতিটি বাক্য যেন পাতার সারাজীবনের গল্প বলে। এঁটে রাখতে চাই সে গল্প, যেখানে প্রতিটি জীবাণু, প্রতিটি কণা, প্রতিটি রশ্মি সম্মিলিত একটি অমলিন উপলব্ধি তৈরি করে—জীবন অনির্বচনীয়, অথচ নিরন্তর প্রবাহমান।

একটু আগেই ছন্দ হারানো বাতাস কানে  গুঞ্জন তুলেছিল। এখন তা থেমে গিয়েও বনের অন্তঃপ্রাণে অসংখ্য জীবনের আওয়াজ ছড়িয়ে দেয়—সে আওয়াজ এক নবজাতকের কান্নার মতোও নরম, আবার এক বৃদ্ধের স্মৃতিচারণার মতোও নিঃসন্দেহ। বনের প্রতি একটা অবিচল বিশ্বাস তৈরি হয় এই ভোরটায়—প্রকৃতি কখনো ছেড়ে যায় না; সে শুধু পথ বদলে নেয়, রূপ নেমে আসে নতুন ছন্দে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ