( আসামের জনপ্রিয় উৎসব বিহু)
আসামের একটি জনপ্রিয় গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হলো বিহু উৎসব। এটি ফসল কাটার উৎসব হিসাবে পরিচিত। বিহু শব্দটি সংস্কৃত শব্দ থেকে এসেছে। এটি সংস্কৃত শব্দ বিসুবন থেকে এসেছে। এটি সংক্রান্তির দিনে সংঘটিত হয়। আসামের প্রধান ফসল ধান চাষের বিভিন্ন পর্যায়ে তিনটি বিহু আসে। তিন ধরনের বিহু যথাক্রমে বহাগ বিহু ( বৈশাখ / এপ্রিল মাসে), কাটি বিহু ( কার্তিকা / নভেম্বর মাসে) , মাঘ বিহু বা ভোগালী বিহু ( জানুয়ারি মাসে) ।
এই তিনটি বিহু উৎসব এর মধ্যে বহাগ বিহু উৎসবটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এটি একটি বসন্ত উৎসব। বহাগ বিহুর আর এক নাম রাঙালী বিহু। মাঘমাসে যে বিহু উৎসব পালিত হয় সেটি ভোগালী বিহু নামে পরিচিত। কাটি বিহু পালিত হয় আশ্বিন এর শেষ কালে।
বহাগ বিহু :
বসন্তের শুরুতেই উদযাপিত হয় আসামের জনপ্রিয় উৎসব বহাগ বিহু। এটি যৌবনের উৎসব। এটি সাতদিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয় চৈত্র সংক্রান্তির দিন থেকে পরের মাসের ছয় তারিখ অবধি। এই সাত দিনের বিহুৰ আলাদা আলাদা নাম আছে। তাই একে সাত বিহু ও বলা হয়। এই উৎসবে কৃষক রা ধান রোপন এর জন্য জমি প্রস্তুত করে।
ঘরে ঘরে মা, বোনেরা ওই দিন গুলোতে পিঠা, নাড়ু প্রস্তুত করেন। বিহু উৎসবের প্রথম দিনটা গোরু বিহু নামে পরিচিত। এই দিন গরুকে পুজো করা হয়। দ্বিতীয় দিনটি মানুষ বিহু নামে পরিচিত। ওই দিন তারা নতুন বস্ত্র পরিধান করে নতুন বছরটি উদযাপন করেন। তৃতীয় দিন দেবতার মূর্তি স্নান করানো হয়। বিহু গীত ও নৃত্যের মাধ্যমে উৎসব এ আপামর মানুষ মেতে ওঠে।
কাতি বিহু : কাতি বিহু কার্তিক সংক্রান্তির দিন অনুষ্ঠিত হয়। এটি কোঙালি বিহু নামেও পরিচিত। এই সময় আউশ ধান চাষ শেষ হয়। এই সময় শস্য ভান্ডার থাকে শূন্য। এই জমি থেকে ফসলে পরিপূর্ণ। এই সময় তুলসী তলায়, শস্য ভাণ্ডারে, ক্ষেতে প্রদীপ জ্বালানো হয়। ফলনশীল ধানকে রক্ষণ করতে কৃষক একটি বাঁশ দন্ড ঘুরিয়ে খোয়া রোয়া মন্ত্র উচ্চারণ করে ফসল কে পোকামাকড় এর হাত থেকে রক্ষা করেন। এই উৎসবে বাঁশের ডগায় আকাশ বাতি জ্বালানো হয়। এর মাধ্যমে মৃত আত্মার স্বর্গের পথ দেখানোর রীতি আছে।
মাঘ বিহু বা ভোগালী বিহু : মাঘ মাসে এই উৎসব হয়। ভোগালী শব্দের অর্থ হলো ভোগ বা খাদ্য। এই বিহু উৎসবটি তিন দিন ব্যাপী পালিত হয়। পৌষ সংক্রান্তির দিন বিকেল বেলায় যুবকেরা নদী পাড় সংলগ্ন জমির শস্যের খড় নিয়ে ছোট কুঠির নির্মাণ করে। এবং মেজি নামক আগুন জ্বালিয়ে উৎসব পালন করেন। রাত্রি বেলায় মেজির চারপাশ এ বিহু গান ও ও নৃত্য করে। আদি বাদ্য যন্ত্র ঢোল বাজায়। পরের দিন স্নান করে মূল মাজিতে আগুন ধরিয়ে তাতে সুপারি পিঠে দেন। অগ্নিদেবতা কে স্মরণ করে। এই দিন মোরগ লড়াই হয়।
ছবি ও তথ্য : উইকিপিডিয়া
0 মন্তব্যসমূহ