তোমাকে চাই ( দ্বিতীয় পর্ব)

 

Love story

(আগের কিছু অংশ)

আচ্ছা, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ানোর এত খরচ মিঠু পাচ্ছে কোথা থেকে? 

আমতা আমতা করে ...আমি কি করে জানবো। তাছাড়া মিঠুর ছেলে সূর্য পড়াশোনায় যথেষ্ট ভালো । হয়তো স্কলারশিপ পায়। তাতেই হয়ে যায়।

-আরে, ছাড়ো তো। যতসব ছোটলোক দের ব্যাপারস্যাপার বিরক্তির সুরে বলে অনিমেষ বাবু আবার খাওয়ায় মন দিলেন। 

-- কি বলছো টা কি! আস্তে বলো মিঠু শুনতে পাবে।

- আরে, ছাড়ো তো, এই অনিমেষ মজুমদার কেউ কে পরোয়া করে না। কলকাতা শহরে আমার পাঁচ - পাঁচটা বিল্ডিং। তিনটে ফ্যাক্টরি। চারটে গাড়ি। সব কিছু আমি নিজে করেছি। আজ আমি শহরের সব গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে ওঠাবসা করি। 

চলবে....


( দ্বিতীয় পর্ব)...


- এত অহংকার জানো তো ভালো নয়।

- মৌলি ! মুখ সামলে কথা বলো। তোমার মধ্যে গাইয়া ব্যাপার টা  থেকেই গেছে। জানি সেটা আর শুধরানোর নয়।

আমি অনিমেষ মজুমদার। আমি অতীত কে আকড়ে বেঁচে থাকি না। জীবন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি সবই। 


অনিমেষ বাবুর এই অহংকার এর কথা গুলো 

মৌলি দেবীর বুকে তীরের মতো এসে বিঁধছিল। মনে মনে স্বামীর জন্য ইষ্ট দেবতার কাছে ক্ষমা চাইছিলেন। মৌলিদেবী ও অনিমেষ বাবুর কথোপকথন এর মাঝেই অনিমেষ বাবুর ফোন টা বেজে উঠলো।


- হ্যা....লো....

( ওপার থেকে একটি সহাস্য পুরুষ গলার আওয়াজ পেয়ে অনিমেষ বাবুর ঠোঁট টা হাসিতে বিকশিত হয়ে উঠলো।)


-আরে, এস কে যে এত দিন পর.... 


( ওপারের কণ্ঠস্বর ) -  বলিস কি রে গলা র আওয়াজ পেয়েই বুঝে গেলি আমি ফোন করেছি?


- কি যে বলিস। তুই আমার এত দিনের বিজনেস পার্টনার। তোর সাথেই আমার বিজনেস জীবনের প্রথম কয়েক বছর কেটেছে। কতটা স্ট্রাগল আমরা করেছিলাম বলতো? তোকে ভুলে যাবো তা কি হয়। তা বল হটাৎ এত বছর পর কোথা থেকে উদয় হলি? আর আমার নাম্বার টাই বা পেলি কোথা থেকে? ( অনিমেষ বাবু) 


- ধুস! তুই কি কথাই না বলিস। তোর নাম্বার পাওয়া কোনো ব্যাপার নাকি? তুই কেমন আছিস বল ? ( এস.কে) 


- বেশ ভালো। কলকাতায় তিন তিনটে ফ্যাক্টরি বানিয়ে ফেলেছি। প্রায় তিনশ লেবার কাজ করে। ভীষণ ব্যস্ত সময় এখন। কিন্তু তুই সেই যে কারখানা বন্ধ করে দিলি তারপর থেকে তোর তো কোনো খবর ই পাই নি এত বছর। হ্যা, প্রথম কয়েক বছর তুই কয়েকবার আমার বাড়ি এসেছিলিস বটে। তারপর তো অনেক তোর খোঁজ করেছি পাই নি। তোর বাড়িতেও গিয়েছিলাম। দেখলাম বাড়িটা অন্য কেউ কিনে নিয়েছে। ( অনিমেষ বাবু )


- সে সব অনেক বড় গল্প। আগে তুই বল আমার গলা টা এত বছর পরেও চিনলি কিভাবে?


- তখন তো মোবাইল ফোন সবে সবে উঠেছে। মনে আছে তুই এক আজব কায়দায় হ্যা.... লো.... কথা টা বলতিস। সেই থেকেই তো বুঝলাম।


দুপক্ষের কাছ থেকেই উচ্চস্বরে হাসির আওয়াজ শুনে মৌলিদেবীর বুকটা চ্যাৎ করে উঠলো। এস . কে এর নাম শুনে  ওনার মনে পড়ে গেল অতীতের কিছু খারাপ ঘটনার কথা। মৌলিদেবী নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে দিলেন। একলা ঘরে নিজেকে খুব নিঃসঙ্গ বোধ করতে থাকলেন।


ওদের কথাবার্তার আওয়াজ ও হাসির ফোয়ারা যত মৌলিদেবীর কানে আসতে লাগলো তত তিনি নিজের হাত এর তালু দুটো দিয়ে কান দুটো চেপে ধরলেন।


কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লেন। কোমর ছাপানো চুল গুলি এলোমেলো হয়ে মেঝেতে লুটাতে থাকলো। কপাল থেকে বেয়ে আসা ঘামের সাথে সিঁথির সিঁদুর গোলে পড়তে থাকলো নাক বরাবর। শাড়ির আচল খানি বুক থেকে কোলের কাছে পরে আছে। 


- মৌলি, মৌলি.... মৌলি...

 বার তিনেক ডাকার পরেও মৌলিদেবী সারা দিলেন না অনিমেষ বাবু কে। 


- কি হলো কি ? সকাল সকাল নাটক আরম্ভ করলে নাকি? তাছাড়া তোমার মত একটা  গেও মহিলা এর বেশি কি ই বা আর পারে ! পারে শুধু চাকর বাকর দের মাথায় তুলে রাখতে।


মৌলিদেবী ঠিক করেছিলেন দরজা এখন খুলবেন না। কিছুক্ষণ নিজেকে একলাই রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অনিমেষ বাবুর ঔদ্ধত্তের কথা শুনে ছিটকিনি টা খুলে চোখের জল মুছে নিজেকে একটু সামলিয়ে দাঁড়ালেন। 


- রাবিশ ! সারাজীবন শুধু কান্না আর কান্না। গেঁয়ো ভুত একটা।


অনিমেষ বাবু হন হন করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন।


গাড়ি তে উঠে ড্রাইভারকে বললেন- সাউথ এর ফ্যাক্টরি তে চল। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দিল।


বাড়ির গেট থেকে গাড়িটা বেরোতে বেরোতে অনিমেষ বাবু লক্ষ্য করলো  একটা বছর উনিশ কুড়ির ছেলে গেট দিয়ে ঢুকছে।


- hey, stop the car... গাড়ি দাঁড় করা। ড্রাইভার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দিল।


- এই শোন, সিকিউরিটি কে গাড়ির কাঁচটা খুলে বিস্ময় সূচক চাওনি দিয়ে ডাকলেন।


- জি, বলিয়ে স্যার।


- এই মাত্র যে ছেলেটা বাড়িতে ঢুকলো কে ছেলেটা? 


- উও তো সূর্য দাদাবাবু আছে স্যার।


আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন অনিমেষ বাবু কে সূর্য? 


- স্যার মিঠু নামে যে লেরকি কাজ করে না! ওর বেটা আছে সূর্য।


অনিমেষ বাবু খানিকটা কি যেন ভাবলেন। তারপর ড্রাইভারকে আবার গাড়ি চালাতে বললেন।


অনিমেষ বাবু দেখেছেন আগে সূর্যকে। প্রায়ই ওদের বাড়ি আস্তো। কিন্তু অনিমেষ বাবুর আগা গোড়াই ছেলেটা কে পছন্দ করে না ।


আসলে কোন ছোটলোকের ছেলে- মেয়ে দের অবাধ যাতায়াত থাকুক অনিমেষ বাবুর বাড়ি তা তিনি চাইতেন না।


সেজন্য অনেকদিন আগেই তিনি মৌলিদেবীকে বলে দিয়েছিলেন সূর্য যাতে না আসে। 


তাই এত দিন অনিমেষ বাবু বেরিয়ে গেলেই সূর্য কোনো দরকার পড়লে আসতো এই বাড়ি তে।


আজ অনিমেষ বাবুর বেরোতে একটু দেরি হয়েছে। তাই দেখতে পেল সূর্যকে। 


মণি মা... ও মণি মা..মণি মা....





চলবে...


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ