মুকুটমণিপুর এর দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ শেষ দিনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল শেয়ার করলাম।সাথে কিছু জরুরি তথ্য।

Mukutmanipur dam main gate view



পরের দিন ভোর বেলা তেই ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলাম। কারণ ওই দিন ই আমাদের সকল ৯ টা নাগাদ রুম ছেড়ে দিতে হবে। মানে আমরা একদিনের জন্যই রুম ভাড়া করেছিলাম। তাই ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠেই পায়ে হেটে ই চলে গেলাম মুকুটমণিপুর ড্যাম  এ।

dam main gate mukutmanipur



inside dam view


ওখানে কিছু ছবি তুলে বাইরের একটি দোকান থেকে লিকার চা, আর কেক খেলাম সকালে। ছেলেও কেক ই খেল। আবার রুম এ আসলাম তখন ৮:৩০ বাজে। আগের দিন রাতেই ব্যাগ সব গুছিয়ে নিয়েছিলাম। অর্থাৎ আগের দিন ছেলে, আমি বর যে ড্রেস গুলো পড়েছিলাম সে গুলো গুচিয়েই রেখেছিলাম। যাতে পরের দিন খুব বেশি তাড়াহুড়ো করতে না হয়। রুমে এসে স্নান করে রেডি হয়েই ছেলেকে স্নান করিয়ে ব্যাগ পত্র নিয়ে চাবি তুলে দিলাম হোটেলের কর্মচারীর হাতে। আমাদের ফেরার মেল এর টাইম ছিল বিকাল ৫টায় রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস এ। সুতরাং আমরা সারাদিন এর কিছু প্ল্যান আগে থেকেই করে রেখেছিলাম। আমরা ঠিক ই করে রেখেছিলাম সারাদিন টা মুকুটমণিপুর এর আশেপাশের পার্শ্ববর্তী এলাকা গুলো ঘুরে দুপুরে খেয়ে গাড়ি র ড্রাইভার কে ফোন করে আসতে বলে দেব দুপুর ৩ টে নাগাদ। বাঁকুড়া স্টেশন এ আমাদের পৌঁছে দিয়ে আসার জন্য। ড্রাইভার কে অবশ্য টাইম টা আগে থেকেই দেওয়া ছিল। 

আমরা ভেবেছিলাম হোটেল যেহেতু ছেড়ে দিচ্ছি আমরা সেহেতু ব্যাগ পত্র নিয়েই আমাদের দুপুর অবধি ঘুরতে হবে। কিন্তু না, আমাদের ভাগ্য খুবই ভালো ছিলো। হোটেল এর কর্মচারী রা সকলেই খুব ভালো। তাদের আচার ব্যবহার ও খুব ভালো। ওনারা বলেছিলেন এখানেই ওদের একটা রুম এ ব্যাগ রেখে আমরা ঘুরতে পারি। এবং প্রয়োজন এ ওদের বাথরুম ও ইউস করতে পারি। আর কি চাই বলো? এতেই যথেষ্ট। আমরা ওই হোটেল রই রেস্টুরেন্ট এ দুপুরের জন্য দিশি চিকেন কারী ও মাছ সহযোগে ভাত অর্ডার দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ঘুরতে। 


প্রথমেই আমরা পায়ে হেটে চলে গেলাম কংসাবতী নদীর সামনে। আমাদের হোটেল থেকে পায়ে হেটে ৫ মিনিট এর পথ। তারপর নদীর ধারে অনেক নৌকা বাধা ছিল। টিকিট কেটে চড়ে বসলাম । মাথা পিছু ১২৫ টাকা করে নিয়েছিল। যাওয়া আসা সমেত । প্রায় ৩০ মিনিট জলযানে গিয়ে আমরা পৌছালাম পরেশ নাথ মন্দিরের সামনে । এখানেই আছে কংসাবতী ও কুমারী নদীর সংযোগ।  কংসাবতী র উপর দিয়ে নৌকায় ভ্রমন এর অভিজ্ঞতা অসাধারণ। চারদিকে কুয়াশা আর জল থৈ থৈ করছে। শান্ত, নম্র কংসাবতী র রূপ দেখতে দেখতেই আমরা মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কিন্তু আমরা এখানে বেশিক্ষন থাকি নি। কারণ আগের দিন ই আমরা পরেশনাথ মন্দির দর্শন করেছি। তাই এখনে একটু এইদিক ঐদিক ফটো তুলে আবার চেপে বসলাম ডিয়ার পার্ক এর উদ্যেশে। আরো আধা ঘন্টা মতো নৌকা বিহারে ঘোরার পর আমরা পৌছালাম ডিয়ার পার্কে। নদী পথ থেকে ডিয়ার পার্কে যেতে হলে ভ্যান এ চেপে যেতে হয়। কিন্তু অনেকে হেঁটেও যাচ্ছে। চারিদিকে বড়ো বড়ো গাছ পালা, জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে হেটে যেতেও ভালো লাগবে। কিনতু আমাদের হাতে সময় ছিল না বলে আমরা ভ্যান এই চাপালাম। 


নদী পথ থেকে ডিয়ার পার্ক অবধি যেতে ভ্যান এ সাত জন এর ৩৪০ টাকা নেয়। ভ্যান এ চেপে বসলাম সবাই মিলে। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারবে না, এত রাস্তা খারাপ, উঁচু নিচু ভটভটি ভ্যান এ করে যেতে খুব অসুবিধা হচ্ছিল। মিনিট কুড়ি পর আমরা পৌছালাম ডিয়ার পার্কে। আমাদের ভাগ্য টাই খারাপ ছিল। তাই ২ তো মাত্র হরিণ দেখতে পেয়েছিলাম। ওখানকার লোকেরা বলছিল এখানে অনেক হরিণ থাকে। হরিণ কে পাতা খাওয়ানোর জন্য বাচ্ছা ছেলে মেয়ে গুলো গাছের পাতা বিক্রি করছিল ৫ টাকা করে। আমরা ৫ টাকা দিয়ে এক তারা কিনলাম। ও বাবা, তারের বাইরে থাকা ছাগল গুলো খেয়ে নিচ্ছে হরিণ দের দিতে যাচ্ছি যখন। হাত থেকে মুখ বাড়িয়ে নিয়ে নিচ্ছে। আর তখন ২ টা মাত্র হরিণ ছিল। তাদের সবাই কিনে কিনে এত পাতা খাওয়াচ্ছে হরিণ গুলোর অবস্থা করুন হয়ে গেছে খেয়ে খেয়ে। যাই হোক, ছাগল, হরিণ কে খাইয়ে আমরা চলে এলাম  পুনরায় ভ্যান এ চাপতে এলাম। এবার গন্তব্য সোনার বাংলা পার্ক। তবে ভ্যান এ ওঠার আগে সবাই মিলে আইস ক্রিম খেলাম। সোনার বাংলা পার্কের প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। ওখানে দেখবার মতো বলতে খরগোশ ছিল, ফুলের বাগান ছিল। টার্কি পাখি ছিল। এইসব আমরা বেশিক্ষন ওখানে থাকি নি। আমাদের তো সেইদিন ই ফেরার দিন ছিল। মেল ছিল বাঁকুড়া থেকে বিকেল ৫ টায়। তাই সোনার বাংলা পার্ক থেকে বেরিয়ে নদীর পাড়ে চলে এলাম ভ্যানে। ভ্যানে যাওয়ার অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। খুবই খারাপ রাস্তা । বরঞ্চ যারা গল্প করতে করতে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে তারাই ভালো করেছে। রাস্তার ছবি আমি দিয়ে দেব। দেখো সবাই। ডিয়ার পার্ক, সোনার বাংলা পার্ক ঘুরে এসে পুনরায় নৌকায় উঠলাম তখন ১২: ৪০ বাজে। আবার নদী পথে প্রায় ৪৫ মিনিট যাত্রা করে এপারে এলাম। এসে নদীর পাড়ে দেখলাম তখন সব যারা পিকনিক করতে এসেছে সব খাওয়া দাওয়া করছে। কারো কারো লাস্ট ফিনিসিং রান্না চলছে। অনেক বাস ও দাঁড়িয়ে আছে। অনেক দোকান পাঠ বসেছে। আমার ছেলে বায়না করে একটা বন্দুক কিনলো। দাম নিয়েছিল ৫০ টাকা। অন্যান্য জায়গায় খেলনার দাম বেশি থাকে। এখানে কমের মধ্যেয়েই পাওয়া গেলো। নৌকা থেকে নেমে আবার হেটে তাড়াতাড়ি করে হোটেল এ গেলাম। তখন খুবই তাড়াতাড়ি করছি আমরা । হোটেল ছেড়ে দিলেও ওই হোটেল রই রেস্টুরেন্টে আমরা অর্ডার দিয়ে এসেছিলাম। হোটেল এ পৌঁছে দেখলাম ২ টো বাজে। দুপুরে খেলাম বেগুন ভাজা, আলু পোস্ত, বাধা কপির তরকারি, মাছ এর কালিয়া, দিশি মুরগি কষা। ছেলেকে তাড়াতাড়ি খাইয়ে নিজে খাওয়া শুরু করলাম।৩ টে নাগাদ আমাদের ওই বুলেরও গাড়ি টা চলে আসার টাইম দেওয়া ছিল। ওটায় করেই আমরা আবার বাঁকুড়া স্টেশন যাবো। খেতে খেতে দেখছিলাম ছেলে হোটেল এর সামনে টা তেই খেলছিল। তারপর কেমন যেন একটু চুপ হয়ে গেল। আমি তখন ই বুঝতে পেরেছি ওর নিশ্চই পটি পেয়েছে। আসলে আমরা অনেকেই আছি তো। তাই ও বলতে লজ্জা পাচ্ছে। খাওয়ার ফেলে রেখেই ওকে বাথরুমে নিয়ে গেলাম। ভাগ্গিস কাজ টা ঠিক সময়ই করে নিল। নাহলে মেল এ উঠে অসুবিধা হতো। হোটেল এর সব বিল মিটিয়ে আমরা গাড়ীতে চেপে বসলাম। বাই বাই মুকুটমণিপুর। চললাম বাড়ি র উদ্যেশে এখন গন্তব্য বাঁকুড়া স্টেশন। গাড়িতে চাপতেই চোখ দুটো জুড়ে এসেছিল। ছেলেও অলরেডি তখন ঘুমিয়ে পড়েছে। প্রায় ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট পর আমরা পৌছালাম বাঁকুড়ায়। মেল আসতে তখনও দেরি ছিল। টুকটাক কেক, বিস্কুট কিনে মেল আসতেই চেপে বসলাম। রূপসী বাংলা মেল এ আমরা ফিরছিলাম। মেল এ উঠে ঝাল মুড়ি, চপ খেলাম। মেল হাওড়া পৌছালো ৯:২০ নাগাদ। ওখান থেকে ৯: ৪২ এর বর্ধমান কর্ড লাইনের ট্রেন ধরে ফিরলাম পোড়াবাজার স্টেশন এ। স্টেশন থেকে আমাদের বাড়ি ৭ মিনিট মতো। বাড়ি ফিরলাম রাত ১১: ১০। এই তো এটাই ছিল আমার মুকুটমণিপুর এর শেষ দিনের অভিজ্ঞতা।


নদী পথ থেকে ডিয়ার পার্কে যাওয়ার ভাড়ার লিস্ট এর ছবি দিলাম।

মুকুটমণিপুর এর মাটির বাড়ির দৃশ্য। গাড়ি থেকে তোলা


ডিয়ার পার্কের যাওয়ার রাস্তার করুন অবস্থা


ডিয়ার পার্কের হরিণ এর ছবি 


সোনার বাংলা পার্কের প্রবেশের পথ এর ছবি


মুকুটমণিপুর এর রাস্তার ধারে এইসব জিনিস বিক্রয় হচ্ছিল।




আমার মুকুটমণিপুর ট্যুর তোমাদের পড়ে কেমন লাগলো জানিও। আমি ও তো একটা আশা নিয়ে লিখছি বলো বন্ধুরা। ব্লগ টা  এমনই একটা প্লাট ফর্ম যেখানে সবাই কেই পরিশ্রম করে এগোতে হয়। সবাই সবাই এর মত করে স্ট্রাগল করছে। আমিও করছি। কিন্তু কি বলো তো ব্লগ যে লিখছি যারা পড়ছো তারাও কেউ সাবস্ক্রাইব করছো না। কিন্তু কেন? তোমরা যদি একটু সাবস্ক্রাইব করে আমার পাশে থাকো আমি একটু এগোতে পারতাম। লেখার উৎসাহ পেতাম। প্লিজ তোমরা সকলে আমায় একটু সাবস্ক্রাইব করো প্লিজ। কমেন্ট করে জানাও কেমন লাগছে। তাহলে তো আমি বুঝতে পারব। তোমাদের আশায় রইলাম আমি। সকলে ভালো থেকো শুভ রাত্রি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ