পাশের পাড়ার ঠাকুর
মুকুটমণিপুর এর প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল তা আজকের ব্লগে লেখার কথা ছিল । কিন্তু আমি সত্যিই তোমাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ওই ব্লগ টা আমি আগামী দিনে পোস্ট করবো। তার একটা কারণ ও আছে। সেটা হলো আজ সরস্বতী পূজা। আজকের দিন টা যদি আমি তোমাদের সাথে না ভাগ করে নি তাহলে হয়ত মা সরস্বতীই আমার ওপর বিরূপ হয়ে থাকবেন তাই না? তবে চলো শুরু করা যাক সরস্বতী পূজা স্পেশ্যাল ব্লগ।
সরস্বতী পূজা আমাদের কাছে খুবই প্রিয় একটি অনুষ্ঠান। এই দিন টা বাচ্ছা দের কাছে আরো প্রিয়। কারণ এই দুদিন তাদের পড়াশোনা থেকে রেহাই মেলে। বই খাতা যাবতীয় মায়ের কাছে রেখে দিয়ে সারাবছর এর জন্য তারা মায়ের কাছ থেকে আশীর্বাদ চেয়ে নেয় যাতে সারাবছর টাই মন প্রাণ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারে। বিদ্যা, বুদ্ধি দিয়ে মা সরস্বতী যেন তাদের পরিপূর্ণ করে তোলে। অনেক প্রবাসী হিন্দু রাই দেশের সরস্বতী পূজা খুব মিস করে জানি। যদিও বিদেশেও তারা নিজেরা বেশ জাকজমকপূর্ণ ভাবেই সরস্বতী পুজো করে থাকেন। তবুও যে যার জন্মভূমি র পুজোটা খুব মিস করে। মনে পড়ে তোমাদের ছোট বেলায় আমরা কুল খেতাম না সরস্বতী পূজা না হওয়া পর্যন্ত। আমরা জানতাম সরস্বতী পুজোর আগে কুল খেতে নেই। পাছে যদি পরীক্ষা ই কম নম্বর পাই সেই ভয়ে কুল খেতাম না। আর সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি দেওয়া হয় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা প্রাসাদে কুল টাই আগে খুঁজতাম। সেই সব ছেলে বেলা গুলো খুব ভালো ছিল বলো? মা, কাকী রা বলতেন ওরে আজ হলুদ বেটে গায়ে মেখে স্নান করতে হয়। ভোর বেলা উঠে পুজোর জন্য ফুল তুলে আনতাম কাঁপতে কাঁপতে । তারপর হলুদ বাটা মেখে শ্যাম্পু করে স্নান করতাম। ওই দিন টাই তো শাড়ি পড়ার দিন। মা, কাকী দের হলুদ শাড়ি পড়তাম। আমার বৌদি কোনোবার আমার কাকিমা আমায় শাড়ি পরিয়ে দিত। বাড়িতে তখন ঠাকুর আনা হত। বাড়ির পূজা হয়ে গেলে সবাই একসঙ্গে দল বেঁধে খিচুড়ি ভোগ খেতে যেতাম। আমাদের সময় স্কুলের মেনু তে ছিল বেগুনি, খিচুড়ি, বাঁধা কপির তরকারি, চাটনি, বদে।তার স্বাদ ই ছিল আলাদা। কিন্তু এখন স্কুল হুলোতে প্যাকেট সিস্টেম, কোনোস্কুলে লুচি আলুর দম খায়ান হয়। ওই দিন আর একটি প্রচলিত প্রথা আছে। ওইদিন গোটা সিদ্ধ রান্না করতে হয়। অনেক বাড়িতেই এই নিয়ম মআছে। অনেক বাড়ি তে নেই। যেমন আমার বাপের বাড়ি তে এই নিয়ম আছে । শশুর বাড়ী তে নেই। তাই এখন খুব মিস করি। গোটা সিদ্ধ খেতেও খুব ভালো লাগে। মুগ করাই, গোটা বেগুন, গোটা আলু, পুঁই ডাটা, গোটা সিম, গোটা মটরশুটি, গোটা রাঙা আলু দিয়ে মশলা দিয়ে গুড় দিয়ে এই গোটা সিদ্ধ হয়। মা দেখতাম বড় হাঁড়ি তে রান্না করত। ঝিকের উনুনে রান্না হত। বিয়ের পর কয়েকবছর বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসতাম। এখন আর প্রতি বছর আনতে যাওয়া হয় না।
আজ আমি এই শাড়ি টা আর এই ব্লাউস টা পরে অঞ্জলি দিলাম। ( ছবি দিলাম। ) সাথে এই চুড়ি, গলার হার, আর কানের। আর এই প্রোডাক্ট গুলো দিয়ে সেজেছি। প্রোডাক্ট গুলো আমি অনলাইন থেকেই কিনেছি। প্রত্যেকটি প্রোডাক্ট ই খুব ভালো। আমার একটু ড্রাই স্কিন। ড্রাই স্কিন এর জন্য এই ফাউন্ডেশন টা একদম পারফেক্ট। খুবই ভালো ভাবে ব্লেন্ড হয়ে যায় স্কিন এর সাথে। এর অনেক গুলো স্কিন টোনের ফাউন্ডেশন আছে। নিজের স্কিন অনুযায়ী কিনে নিতে পারবে। আর প্রাইমার টা নিয়ে তো কোনো কথাই হবে না। এক কথাই অনবদ্য। আমার খুব পছন্দের একটা প্রোডাক্ট। এটা সুইস বিউটির একটা প্রাইমার। এখন সবাই একটু আমরা গ্লসি মেক আপ চাইছি। মানে এটাই এখন ট্রেন্ড। সেই হিসাবে এই প্রাইমার টা তোমরা চোখ বন্ধ করে কিনতে পারো। হাইলাইটিং প্রাইমার। মাখার পর ফেস টা গ্লসি হয়ে যাবে। আমি কোনো প্রোডাক্ট এর কিন্তু বিজ্ঞাপন করছি না। আমি যেগুলো ইউস করি সেগুলো মেখে আমার কেমন লাগছে তাই তোমাদের শেয়ার করছি। আচ্ছা আমি আপাতত ফাউন্ডেশন আর প্রাইমার টার অনলাইন এ কেনার লিংক টা দিয়ে দিচ্ছি। তবে লিপস্টিক আমি লোকাল মার্কেট থেকে কিনেছি।
আমি চুড়ি গুলো নিজেই বাড়ি তে বানিয়েছি। আর হার টাও। এই গুলো ফেলে দেওয়া চুড়ি গুলোর উপর উলের সুতো দিয়ে করেছি। দেখতে বেশ ভালো লাগে পরলে। এবার আমাদের পাড়ার ঠাকুরের ছবি দেখলাম। এই ভাবেই ছোট করে কিন্তু বেশ হইহুল্লোড় করেই আমরা এই দুদিন সরস্বতী মা কে নিয়ে কাটাই। অঞ্জলি দেওয়া হয় যাওয়ার পর আসে পাশে গ্রামের কয়েকটা ঠাকুর দেখে এলাম।আজ সন্ধেয় বেলা তে এই ঠাকুর তলা তেই সারা গ্রামের লোক খাওয়া দাওয়া করেছি। গ্রামের সব বউ রা গল্প করতে করতে আলু কাটি, মশলা করি, ময়দা মাখা হয়। লুচি করা হয়। বড়ো বড়ো দাদা রা রান্না করে। সব বউ রা মিলেই পরিবেশন করি। নিজেরা নিজেদের মতো আনন্দ করি। ছোট রা খেলা ধুলা করে। আমরা খুব ভালো সময় কাটাই। আর কথা নয়। কয়েকটা ছবি দিচ্ছি । দেখো তোমাদের খুব ভালো লাগবে।
আজ এই পর্যন্তই। আমার ব্লগ ভালো লাগলে প্লিজ তোমরা সাবস্ক্রাইব করো। আমার পাশে থেকো। ফিরছি নতুন ব্লগ নিয়ে খুব শীঘ্রই। ততক্ষণ ভালো থেকো সকলে। শুভ রাত্রি।
0 মন্তব্যসমূহ