আমি গত ২০ জানুয়ারি রাতের মেল ধরে সপরিবারে মুকুটমণিপুর ঘুরতে গিয়েছিলাম। তারই কিছু অভিজ্ঞতা তোমাদের সাথে আজ ভাগ করে নেব। আমি কোনো ভ্রমণ কাহিনীর মতো নিয়ম মাফিক লিখছি না। আমার অভিজ্ঞতা টুকুই শেয়ার করছি। তবে আজকে আমি মূলত যাওয়ার দিন সকাল থেকে কি কি করলাম তাই শেয়ার করবো।
মুকুট মনিপুর গিয়েছিলাম বর এর অফিস এর কিছু বন্ধু ও তার বউ বাচ্ছা দের সঙ্গে। সবাই এর সাথে একজোটে যাওয়ার মজা টাই আলাদা। যাওয়ার দিন সকাল থেকেই ব্যস্ততা ছিল আমার তুঙ্গে। দিনটা ছিল শুক্রবার। আমাদের মেল ছিল রাত ১২: ৫ টায়। অনায়াসেই ভালো ভাবে রেডি হওয়া সম্ভব। তবুও ওইদিন আমার একটু চাপ ছিল। ছেলের স্কুল তো ছিলই। শাশুড়ি মা ওইদিন গঙ্গা স্নানে গিয়েছিল। তাই আমার সাংসারিক কাজ টা বেশি ছিল।
রোজকার মতো ওইদিন ও সকাল ছয় টায় ঘুম থেকে উঠে ছেলের টিফিন করলাম, ও ভাত খেয়ে স্কুল যাবে, এইদিকে শাশুড়ি মা ও থাকবেন না। উনি ই দুপুরের রান্না বেশিরভাগ টা করেন। আমি সবজি কেটে, মশলা বেটে হেল্প করে দি । তাই আজ সকালেই একেবারে দুপুরের রান্না সেরে নিলাম। হাজব্যান্ড বললো বেশি কিছু করতে হবে না। ডিমের ঝোল, আর ভাত করো, সাথে সিম আলুভাতে। তাই করলাম। আসলে ও ভাজাভুজি খায় না। অল্পে তেই খুশি। ছেলেরও খাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। শশুর মশাই এর ও ওইদিন একটা নেমন্তন্ন বাড়ি ছিল। তাই রান্নার কোনও ঝামেলা ছিল না। তবে রান্না ছাড়াও আরো তো সংসারের অনেক কাজ থাকে। ঘর মোছা, বাসন মাজা, রোজকার জামাকাপড় কাচা, জল তোলা ইত্যাদি। তারপর বেরোনোর একটা তোড়জোড়। লাগেজ গোছানো। সব থেকে বড় ব্যাপার কোথাও বেরোলে, অনুষ্ঠান বাড়ি ই বলো কিংবা ঘুরতে লাস্ট টাইম একটু স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ার ও করতে হয়। সেই সব। সব মিলিয়ে অনেক কাজ ।
শাশুড়ি মা তো বেরিয়ে গেলেন সকাল আট টা নাগাদ। ছেলে স্কুল গেল ৯ টায়। বর এর ওয়ার্ক ফ্রম হোম চলছে, ও অফিসে বসে গেল ১০ টায়। ওই দিকে শশুর মশাই স্নান সেরে, টিফিন এ মুড়ি তরকারি ( ডিমের ঝোল দিয়েই) খেয়ে বেরিয়ে পড়লেন। এরই মধ্যে আমার ঘর দোর মোছা, বাসন মাজা গ্যাস ওভেন পরিষ্কার করা সব হয়ে গেল।
এমনি দিন এর থেকে ওইদিন টা ছিল একটু আলাদা। যেহেতু শশুর শাশুড়ি মা কেউ বাড়ি ছিলেন না, তাই আমি উঠোনে বসেই রোদেই জল নিয়ে এসে শ্যাম্পু করলাম। আমি ঘরোয়া স্কিন কেয়ার করতেই বেশি পছন্দ করি। মুখে ঘাড়ে হাতে পায়ে একটা প্যাক বানিয়ে লাগলাম। তোমরা দেখো প্যাকটা একবার লাগানোর পরই আমার হাত , পা মুখ কত টা ইনস্ট্যান্ট ঝকঝকে হয়ে উঠলো। ফটো দিলাম। আমি এইসময় প্যাকটা জাস্ট ধুয়েই উঠোনে বসেই নিজে নিজে ছবি তুলেছিলাম। সেটাই তোমাদের সাথে শেয়ার করলাম। আমি তখন কোনো ময়সারাইজার মাখি নি। শুধু ধুয়েই ছবি টা তুলে রেখেছিলাম। তোমাদের দেখাবো বলে। আমি এটা দিয়ে বডি ক্লিন করার পর কোনো সাবান/ বডি ওয়াশ ব্যবহার করি নি। এই প্যাকটাই শরীরে সব ধুলো ময়লা ভিতর থেকে পরিষ্কার করে দেয়। ত্বক এ একটা ইনস্ট্যান্ট গ্লো এনে দেবে। আমার কথা বিশ্বাস না হয় তো, ছবি গুলো দেখো। কোনো এডিটিং করা নেই, কিছু না। আমি কোনো ভালো মানের মোবাইল ও ব্যবহার করি না। যে খুব ভালো ছবি উঠবে। যেটা উঠেছে খুব ই ন্যাচারাল। তো , চলো ওই প্যাকটা ঝটপট তোমাদের শেয়ার করে ফেলি। আর, হ্যাঁ, খুব ব্যস্ততার মধ্যে ছিলাম তো, তাই ঝটপট প্যাক রেডি করে মেখেছি। হাতে সময় খুবই কম ছিল। তাই কোনো ডেকোরেশন করে ছবি তুলি নি প্যাকটার।
প্যাকটা তৈরি করতে যে সকল উপাদান ব্যবহার করেছি তা হলো:
বেসন:২চামচ
চালের গুঁড়া: ১চামচ
মসুর ডাল এর গুঁড়ো:১চামচ
কফি: ১চামচ
মুগ করাই গুঁড়ো: ১চামচ
দই: ৩চামচ
মধু:১চামচ
একটা বাটিতে সব উপকরণ মিশিয়ে ভালো করে পেস্ট করে নিতে হবে। যতটা তোমাদের শরীরে প্রয়োজন ততটা ব্যবহার করবে। আমার যতটা লেগেছিল তার হিসাব দিলাম। আর আমি যেহেতু প্যাকটা দিনের বেলা ব্যবহার করেছি, তাই হলুদ গুঁড়ো, লেবু ব্যবহার করি নি। রাতের স্কিন কেয়ার রুটিন এ এটা মাখতে পারো তোমরা। উবটান এর মত কাজ দেবে। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন। আর প্যাকটায় আমি জল ব্যবহার করি নি। টক দই দিয়ে অথবা দুধ দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। এই তো এই গেল আমার স্কিন কেয়ার।
এবার আসি আমার হেয়ার কেয়ার এর কথায়। আমি চুল টা যেহেতু স্মুথনিং করিয়েছি, তাই চুলে Matrix opti. care smooth straight shampoo.. শ্যাম্পু টা আর ওরই একটি কন্ডিশনার আছে ওটা ব্যবহার করছি। দুটোই খুব ই ভালো। শ্যাম্পু টা বেশি লাগে না। ব্যবহারের পদ্ধতি টা বলে দিচ্ছি। যদিও শ্যাম্পু কিভাবে ইউস করতে হয় সবাই জানে। তবুও আমি যেহেতু আমার সব কিছু তোমাদের কাছে শেয়ার করছি, তাই বলে দিলাম।
Matrix option. Care smooth straight shampoo
দাম : ৫৬০ টাকা ( ৩৫০ মিলি)
২২ সাল থেকে ২৫ সাল অবধি বেস্ট বিফোর ডেট আছে।
তোমরা চাইলে অনলাইনে ও কিনতে পারো। আমি অনলাইন থেকেই কিনেছিলাম। কিছু টা দামে ছাড় ও পেয়েছি। আর হ্যাঁ, অরিজিনাল প্রোডাক্ট ই পেয়েছি। তোমরা যদি অনলাইন থেকে কিনতে চাও লিংক টা দিয়ে দেব।
Matrix Opti Care Smooth Straight Professional Sampoo
Matrix Opti Care Smooth Straight Professional Conditioner
কন্ডিশনার টার নাম হলো matrix opti. Care smooth straight conditioner
দাম : ২৬৫ টাকা( ১৯৬গ্রাম)
খুবই ভালো। শ্যাম্পু করার পর চুল টা ভালোভাবে ধুয়ে ভালো করে মুছে নিয়ে কন্ডিশনার টা ভিজে চুল এই মিনিট ৫ থেকে ১০ মিনিট মতো রেখে ভালো ভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। কন্ডিশনার কখনো sclap এ ব্যবহার করা উচিত নয়। চুল এর লেন্থ এ লাগাতে হয় ( এটা হয়তো একটু বেশি ই জ্ঞান দিয়ে ফেলছি তাই না? এই টুকু জ্ঞান আশা করি সবাই এর ই আছে) । আমি বললাম যেহেতু প্রদ্ধতি টা বলছি ঠিক এই কারণে।
প্রথমে চুল টা ভালো ভাবে ভিজিয়ে নিতে হবে। তারপর স্নান করার মগ টায় অল্প জল নিয়ে( দু কাপ মতো) জল নিয়ে তাতে অল্প পরিমাণে শ্যাম্পু নিয়ে ভালো ভাবে গুলি নিতে হবে। শ্যাম্পু এইভাবেই জলের সাথে গুলি করা উচিত। এতে শ্যাম্পুর পরিমান ও লাগে কম। আবার শ্যাম্পু তে যে ক্যামিক্যাল ইউস করা হয় সেটাও ডিরেক্ট আমাদের চুলে এসে চুলের ক্ষতি করে না। আর এতে ফ্যানা হয় খুব। চুল এর ময়লা খুব তাড়াতাড়ি পরিষ্কার হয়ে যায়। হেয়ার স্মুথনিং করার পর এই ম্যাট্রিক্স কোম্পানির শ্যাম্পু, কন্ডিশনার অবশ্যই তোমরা ট্রাই করতে পারো। খুবই ভালো। এটা ইউস করার পর আমার চুল টা বেশ সিল্কি, চকচকে, স্মুথ হয়ে যায়। হাত দিলে ফিলিংস টা খুব ভালো লাগে। জাস্ট তোমাদের বলে বোঝানো যাবে না। তোমরা অবশ্যই ট্রাই করে দেখতে পারো। আমি এই শ্যাম্পু টা সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করি।
স্নান সেরে পুজো করে নিলাম। রান্না করেছিলাম খুবই সাধারণ। ছেলে স্কুল থেকে আসার পর একসঙ্গে তিন জন এ খেয়ে নিলাম । ছেলে কে ঘুম পাড়িয়ে নেলপলিশ পড়তে বসলাম দুপুরে। এটা ওটা সব নেলপলিশ ঘেটে ঘুটে অবশেষে লাল রং এর নেলপলিশ টাই পড়লাম হাতে , পায়ে দু জায়গা তেই। একটু বিকাল হতেই জামা কাপড় উঠোন থেকে তুলে এনে গুছিয়ে রাখলাম। সন্ধেয় দিলাম। শাশুড়ি মা, শশুর মশাই ততক্ষনে বাড়ি চলে এসেছিলেন। চা করে দিলাম ওনাদের। তারপর আটা মাখলাম। ছেলে তখন ও ঘুম থেকে ওঠে নি। তখন বাজে সন্ধেয় ছয় টা। অন্য দিন হলে ডেকে দি। কিন্তু আজ ডাকলাম না। কারণ রাত ১২ টায় হাওড়া থেকে মেল। সুতরাং ঘুম ঠিক মতো হবে না। তাই আর কি। আটা গুলো বেলে দিয়ে ঘরে প্যাকিং গুলো ফাইনালি ঠিক ঠাক সব গোছানো আছে কিনা দেখে নিলাম। আমরা যে মেল টা তে যাবো ওটা হাওড়া থেকে ছাড়ার টাইম ছিল রাত ১২:৫ টায়। বো কারো এক্সপ্রেস। আমারা যেখানে থাকি সেখানকার কাছাকাছি রেলওয়ে স্টেশন হলো পোড়াবাজার। সেখান থেকে হাওড়া স্টেশন পৌঁছাতে মোটামুটি ১ ঘন্টা সময় লাগে। তাই ছেলে কে পৌনে সাত টা নাগাদ ডেকে দিলাম। তুলে দিয়ে বেশ খানিকটা জল খাইয়ে দিলাম। কারণ সাড়ে ৭ টা নাগাদ ই ওকে আজ ডিনার কমপ্লিট করতে হবে। এখন কিছু খাওয়ালে আর তখন কিছু খাবে না। হতে শুধু ২পিস কাজু বাদাম দিলাম। সাড়ে ৭ নাগাদ ছেলে কে খাইয়ে নিজেরা খেয়ে রেডি হয়ে ব্যাগ পত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোলাম ৮: ৪৫ নাগাদ। আমাদের গ্রাম থেকে স্টেশন পর্যন্ত সময় লাগে বাইকে ৭/১০ মিনিট। পোড়াবাজার স্টেশনে এসে টিকিট কেটে ১০ মিনিট মতো বসে থাকতে হলো। তারপর ট্রেন এলো। আমরা ৯: ১৫ এর ট্রেন এ যাবো ঠিক করেছিলাম। কিন্তু আগের ট্রেন টাই লেট করে ওই টাইমে এলো। ট্রেন এ উঠে ভালোই ঠান্ডা লাগছিলো আমার। তবে আমার ছেলে বলছিল ওর নাকি ঠান্ডা লাগে নি। যায় হোক ট্রেন হাওড়া পৌছালো ১০: ১৫ নাগাদ। ততক্ষণে হাজব্যান্ড এর অফিস এর ফ্রেন্ড ও তাদের ফ্যামিলি চলে এসেছে। তারা নিউ কমপ্লেক্স ওয়েট করছে বললো। আমরাও ট্রেন থেকে নেমে ওদের কাছে পৌছালাম তখন বাজে ১০: ৪০। আর মেল তো ১২;৫ টাই। তাই সকলে একসঙ্গে দেখা হওয়ার পর আড্ডা দিতে শুরু করলাম। এইদিকে গল্প করতে করতে মেল এর ঘোষণা শুনছি bokaro মেল এর আর খবর হয় না। এইদিকে আমার ছেলে হাজব্যান্ড এর ফ্রেন্ড এর এক মেয়ের সাথে খুব খেলাধুলা শুরু করে দিয়েছে। বাচ্ছা মেয়েটি আমার ছেলের থেকে অনেক টাই ছোট। ওরা ওদের মতো সঙ্গী পেয়ে হ্যাপি। খুব খেলছে। এইদিকে আমরা হয়রান হচ্ছি, ১২ টা পার হয়ে যাচ্ছে তাও কোনো খবর হচ্ছে না। ঐদিকে গাড়ি বুক করা ছিল আগে থেকে। ড্রাইভার কে টাইম দেওয়া আছে ভোর ৪ টা নাগাদ আমরা বাঁকুড়া স্টেশন নামবো। সেখান থেকে আমাদের নিয়ে যাবে মুকুটমণিপুর। এইদিকে মেল লেট করছে তাহলে ড্রাইভার ও এই শীতে র ভোরে অপেক্ষা করবে। খুবই খারাপ ব্যাপার। অগত্যা মেল এর কোনো খবর না পেয়ে রাত ১২: ১৫ নাগাদ হাজব্যান্ড এর এক বন্ধু ড্রাইভার কে ফোন করে বলে দিল মেল লেট আসছে। মেল এর খবর হলো অবশেষে ১২: ৩০ নাগাদ। ছাড়লো ১২: ৪৫ নাগাদ। আমাদের মুকুটমণিপুর যাত্রা শুরু হলো । পরের দিন এর অর্থাৎ মুকুটমণিপুর এ প্রথম দিন এর অভিজ্ঞতা পরের ব্লগে আসছে।
আজ এই পর্যন্তই। আমার ব্লগ গুলো যদি ভালো লাগে প্লিজ তোমরা সাবস্ক্রাইব করো। আমায় একটু সাপোর্ট করো। যদি ভালো লাগে কমেন্ট করো। সকলে ভালো থেকো। শুভ রাত্রি।
0 মন্তব্যসমূহ