বিল্টুর জীবন
সেইদিন টার কথা মনে পড়লে আজও বিল্টুর সারা শরীরটা কাঁটা দিয়ে ওঠে। আতঙ্কে কুঁকড়ে যায়। একরত্তি বোন টাকে আঁকার করে জড়িয়ে ধরে। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে। সেই রাতেই যে ওর মা, বাবা কে ও চিরতরে হারিয়ে ফেলেছিল। কেবল মাত্র ওই শুধু নয়। বিল্টু যে বস্তি তে থাকতো সেইদিন ওখানে থাকা অনেকেই তাদের স্বজন হারিয়ে অনাথ হয়েছিল।
বিল্টু ওর মা, এর সাথে মধুপুর স্টেশন সংলগ্ন একটি বস্তিতে বাস করতো। ওর বাবা ওদের সাথে থাকতেন না। তিনি ভিন রাজ্যে রাজমিস্ত্রি র কাজ করতেন । প্রতি মাসে কিছু করে টাকা পাঠাতেন। তাতে ওদের মা ছেলের ভালোভাবেই পেট চলে যেত। দেখতে দেখতে বিল্টু বারো বছরের হয়ে গেল। সেবারে পুজোর সময় বিল্টুর বাবা ছুটিতে এসে বিল্টুর জন্য, ওর মায়ের জন্য নতুন নতুন বেশ কয়েকটা জামা, কাপড় কিনে নিয়ে এলো। বিল্টু তো নতুন জামা-প্যান্ট পেয়ে খুব খুশি। জামা- প্যান্ট গুলো পেয়েই ও সঙ্গে সঙ্গে চলে গেল ওর বন্ধুদের দেখাতে। বিল্টুর বাবা , ওর মা কে ঘরে একা পেয়ে নিজের হাতে একটা কাপড় বিল্টুর মায়ের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বললেন , বা! মিতালী, তোমায় বেশ লাগছে তো কাপড় খানা পরে। মিতালী লজ্জায় বিল্টুর বাবা, রাজুর বুকে মুখ লুকালো।
খানিক বাদে অভিমানি সুরে বললো, তুমি আমাদের জন্য এত এত কেনা কাটা করলে কই তোমার জন্য তো কিছুই কেন নি দেখছি! রাজু একগাল হেসে বললো, আমি পুরুষ মানুষ সারাদিন কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকি। আমি ওসব নতুন নতুন জামা কখন পরবো? তোমাদের সারাবছর জামা- কাপড় কিনে দিতে পারি না। তাই পুজোতেই বেশ কয়েকটা কিনে আনলাম। তোমার পছন্দ হয়েছে তো মিতালী সব কাপড় গুলো? এক গাল পরম তৃপ্তির হাসি হেসে মিতালী বললো, খুব পছন্দ হয়েছে। সেবার পুজোটা বিল্টু দের খুব মজা করে কেটেছিল। পুজোর প্রত্যেকটা দিন বিল্টু নতুন নতুন জামা পরেছে। অন্যান্য ওর বয়সী ছেলে- মেয়েদের মতো বিল্টুও ওর মা- বাবার হাত ধরে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিল। ফুচকা, চাউমিন খেয়েছিল।
পুজোর সময় রাজু এসে সপ্তাহ তিনেক ছিল। বেশ কিছুদিন আনন্দ হই হুল্লোড়ে কাটার পর রাজুর কাজে ফেরার দিন চলে এলো। যাওয়ার আগে মিতালীর হাত দুখানা ধরে রাজু বলেছিল নিজের খেয়াল রেখো। রাজু তো এ বছর সিক্স এ উঠবে। ওর বই খাতা গুলো ঠিক সময়ে কিনে নিও। তাছাড়া মাস ছয়েক পর আবার তো ফিরে আসবো। বিদায় বেলায় মিতালীর চোখে জল দেখে রাজু তাকে আস্বস্ত করে বললো, চিন্তা কোরো না, তাছাড়া আমি তো প্রতিদিনই চাঁপার মায়ের ফোনে ফোন করবো। মিতালীও কান্না সংবরণ করে কোনোমতে বলেছিল সময় মতো খাওয়া দাওয়া কোরো। সাবধানে কাজ করো।
রাজু ফিরে যাওয়ার মাস খানেক পরেই মিতালী একদিন সুখবর টা দেয় রাজুকে। অন্যান্য দিনের মতোই রাজু ফোন করেছিল চাঁপার মায়ের ফোনে। মিতালী লজ্জা মাখা গলায় বলেছিল, শুনছো আমি আবার মা হতে চলেছি। খবর টা শোনা মাত্রই রাজুর মনে আনন্দের সীমা ছিল না। সে নিজের বেখেয়ালেই উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠে বলেছিল , তুমি আমার কথা মিলিয়ে নিও মিতালী। আমাদের এবার কন্যা সন্তানই হবে। মা লক্ষহী আসবেন আমাদের ঘরে। এক কথা শুনে রাজুর বন্ধুরাও খুশি হয়ে রাজুর থেকে ট্রিট চেয়েছিল। রাজু তাদের সকলকে পেট ভরে খিচুড়ি, মাছ ভাজা খাইয়েছিল নিজে হাতে রেঁধে।
মিতালীর প্রেগনেন্সির খবর টা পাওয়া থেকেই রাজুর কাজে মন বসছিল না। ওর মন পড়েছিল মধুপুরের দিকে, মিতালীর দিকে। কাজ করতে করতে সর্বদা ভাবতো মিতালী ঠিক আছে তো? ঠিক মতো নিজের খেয়াল নিতে পারছে তো? হসপিটাল এ নিয়মমাফিক যাচ্ছে তো? এই সব চিন্তা ভাবনা করতে করতে কাজের ভুল ও হতো। আবার দেরিও হতো। রাজুর এইরকম মানসিক অবস্থা দেখে রাজুর একজন বন্ধু গোবিন্দ তাকে উপদেশ দিলো, দেখ রাজু তুই এখানে ঠিক মতো কাজে মন বসাতে পারছিস না, ওদিকে বৌদি রও ঠিক মতো হয়তো যত্ন আত্তি হচ্ছে না। তুই বরঞ্চ দেশে ফিরে যা। ওখানে গিয়েই কাছাকাছি কাজ একটা জুটিয়ে নে। তাহলে বৌদি কেও চোখে চোখে রাখতে পারবি। কাজও করতে পারবি। গোবিন্দর কথা মতোই রাজু পরের দিনই ফিরে গিয়েছিল মধুপুরে।
তারপর ওখানেই একটা রাজমিস্ত্রি দের দলের সাথে কাজ শুরু করে রাজু। প্রতিবার হসপিটালে চেক আপ এর দিন রাজু নিজেই নিয়ে যেত মিতালীকে। নিজের সামর্থ্য মতো ফল, পুষ্টিকর খাবার আনত মিতালীর জন্য। বিল্টু তো অবাক হয়ে মায়ের পেটে আলতো করে হাত দিয়ে বলতো , বাবা তুমি সত্যি বলছো মায়ের এই এত বড় পেটের ভিতরে আমার ছোট্ট বোনি আছে? রাজু বিল্টুর দুটো গাল টিপে আদর করে বলতো, হ্যা গো বিল্টু সোনা ওখানে তোমার একটা ছোট্ট বোনি আছে। আর কিছু দিন পরেই বেরিয়ে পড়বে। তুমি তখন ওর সাথে খেলতে পারবে। ওকে আদর করতে পারবে। বিল্টু চোখ বড় বড় করে বলতো ওর ছোট ছোট নরম নরম পা, কচি কচি হাত, তুলতুলে গাল হবে তাই না বাবা?
- একদম ঠিক বলেছো।
- বাবা, আমি ওকে খুব আদর করবো। ওকে নিয়ে খেলবো, ওকে স্কুলে দিয়ে আসবো , নিয়ে আসবো, খাইয়ে দেব। স্নান করিয়ে দেব। সব আমি করিয়ে দেব।
- আচ্ছা বেশ, পাকা বুড়ো একটা।
- বাবা, ওর নাম কিন্তু আমি দেব দোয়েল।
- বা! খুব মিষ্টি নাম তো বিল্টুর গালে চুমু দিয়ে মিতালী বলে।
- ঠিক বলেছো, মিতালী। বিল্টু আমাদের মেয়ের নাম টা খুব সুন্দর রেখেছে। দোয়েল। আমাদের ছোট্ট দোয়েল পাখি।
- দেখতে দেখতে আট টা মাস কেটে গেল। একদিন ভোর রাতের দিকে মিতালীর প্রসব যন্ত্রনা শুরু হলো। রাজু তো ভয়ে চাঁপার মা কে ডাক দিল। ততক্ষনে মিতালীর চিৎকার, কাতরানির চোটে বিল্টুরও ঘুম ভেঙে গেছে।
ঘুম চোখে চোখ রগড়াতে রগড়াতে চাঁপার মা বললো, চলো রাজু , গনশার মা কে ডেকে আনি। আমাদের পাড়ার সব ছেলে- পুলেরা তো ওর হাতেই জন্ম নিয়েছে।
রাজু চাঁপার মায়ের কথায় রাজি হলো না।
- না, না চাঁপার মা... আমি হাসপাতালেই নিয়ে যাবো। তুমি একটু শুধু আমায় সাহায্য করো। এইসব প্রসব ব্যথার মা কে হসপিটালে নিয়ে যেতে গেলে একজন মেয়ে মানুষের খুব প্রয়োজন। দোহাই চাঁপার মা চলো আমার সাথে। আমি পল্টুকে বলে এলাম এই মাত্র ও ভ্যান নিয়ে এতক্ষনে চলে এসেছে বোধ হয়। চাঁপার মা আর অমত না করে মিতালী কে ভ্যানে তোলার জন্য তাকে আনতে গেল।
হসপিটালে যাওয়ার আগে রাজু অনেকবার করে বোঝালো বিল্টুকে , বিল্টু সোনা তোমার একটা ছোট্ট বোনি হবে। তাই মাকে এখুনি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। তুমি এখন চাঁপা দের বাড়ি থাকো।
তন্দ্রা জড়ানো গলায় বিল্টু বললো, না বাবা.. আমিও যাবো তোমাদের সাথে। বোনি কে দেখতে।
- ওখানে অনেক বড় বড় ডাক্তার আছে, ওখানে তোমার মত বাচ্ছাদের ঢুকতে দেওয়া হয় না। বোনি বাড়ি এলেই তো তুমি ওকে অনেক আদর করতে পারবে।
- কোলে নিতে দেবে বোনি কে?
- হ্যা, বাবা দেব। এখন আসি বিল্টু সোনা। তোমার মায়ের কষ্ট হচ্ছে তো।
মিতালী বিল্টুর কপালে স্নেহের চুম্বন এঁকে দিয়ে ভ্যানে উঠে বসলো।
সুস্থভাবেই মিতালী একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিল। সেই আনন্দে রাজু বস্তির সকলকে মিষ্টি বিতরণ করলো। এক চিলতে টালির ঘরেই এখন রাজুর সুখের সংসার। রাজু আর মধুপুর ছেড়ে বাইরে চলে গেল না। ছেলে- মেয়ে- বউ কে সে চোখে হারায়। তাছাড়া এখানে কাজ করে যা মজুরি পেত তাতে তাদের কোনো মতে চলে যাচ্ছিল।
প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে বিল্টু তার বোন দোয়েল এর সাথে খেলা করে। বোন কে সে খুব ভালোবাসে। মিতালী যখন সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকে বিল্টুই ওর বোন এর পাশে থাকে। ওকে একদম কাছ ছাড়া করতে চায় না। দেখতে দেখতে আবার দুর্গা পূজা চলে আসে। দোয়েল এর বয়স এখন ছয় মাস। বিল্টুর এখন ওকে কোলে নিতে কোনো অসুবিধা হয় না। কারণ দোয়েল এর মাথা এখন আর টলমল করে না। দুর্গা পূজার কয়েকটা দিন ওদের ভালোই আনন্দে কাটলো। মিতালী, রাজু ওদের দুই ছেলে - মেয়ে কে সাথে নিয়ে পাড়ার কয়েকটা ঠাকুর দেখেছে। বাইরে থেকে খাবার কিনে এনেছে। বাড়িতে এসে ভাগ করে খেয়েছে।
- ধুর! দুর্গা পুজো টা যেন কি তাড়াতাড়ি কেটে গেল। এই তো কদিন আগে মা দুর্গা এলেন এরই মধ্যে বিসর্জন হয়ে গেল - নিরাশ হয়ে সন্ধে বেলায় রাজুর কোলে মাথা রেখে বিল্টু বললো।
- পুজোর ক দিন বেশ মজা করলি তাই না রে বিল্টু? বিল্টুর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে রাজু বললো।
বিল্টু কিছু বলার আগেই রান্না ঘর থেকে কাপড়ের আঁচলে হাত মুছতে মুছতে মিতালী ঘরে এসে বললো, সে তো আনন্দ হবেই। ওই পাঁচটা দিন বই হাতে করতে হয় না। খালি সকাল থেকে দোয়েল কে কোলে নিয়ে ঠাকুর তলায় বসে থাকতেই তো ভালো লাগছিলো তাই না?
বিল্টু মাথা নিচু করে বললো, বোনি কে নিয়ে ঠাকুর তলায় বসলে ঢাক, কাসর বাজলে বোনি কি সুন্দর ছোট ছোট হাতে হাত তালি দেয়। দুটো দাঁত বের করে হি হি করে হাসে আমার খুব আনন্দ হয় তখন বোনি কে দেখে।
- তুই বোনি কে খুব ভালোবাসিস নারে বিল্টু?
- হ্যা , বাবা খুব ভালোবাসি।
আচ্ছা চিন্তা করিস না। আর তো মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন। তারপরই দীপাবলি। তখন আবার বোনকে নিয়ে প্যান্ডেলে গিয়ে ঠাকুর দেখতে যাবি। কেমন?
বিল্টু লাফিয়ে উঠে জিজ্ঞাসা করলো কালি পুজো আর কতদিন দেরি বাবা?
এই তো আর মাত্র সপ্তাহ খানেক দেরি।
বিল্টুর চোখে মুখে আবার খুশির জোয়ার। এক সপ্তাহ যেন ওর কাছে কয়েক টা বছর মনে হলো। প্রত্যেকদিন রাতে ও দিন গুনত।
দীপাবলির দিন সকাল থেকেই বিল্টু ওর বোন কে কোলে নিয়ে বার তিনেক পাড়ার ঠাকুর তলা থেকে ঘুরে এসেছে। কালি ঠাকুর টা প্রায় বিল্টু দের বাড়ির সামনের ক্লাব টা তেই আসে। সারাদিন নাওয়া খাওয়া ছেড়ে ঠাকুর তলায় থাকায় মিতালীর মেজাজ বেশ চড়ে আছে। বিল্টু বাড়ি ফিরতেই ওকে খুব বকেছে মিতালী। রাজু ব্যাপার টা সামলানোর চেষ্টা করে। বিল্টু , এরপর বাধ্য ছেলের মতো স্নান সেরে, খেয়ে নেয়। দুপুরের দিকেও একবার যেতে ইচ্ছা হয়েছিল ওর ঠাকুর তলায় যেতে। কিন্তু মায়ের রাগী মুখ টার কথা মনে পড়ে বিল্টু শুয়ে পড়লো। কিন্তু ওর কিছুতেই ঘুম আসছিল না। চোখ বুজে বিছানায় শুয়ে ছিল। খানিক্ষণ পর ও বলতে শুনলো বাবা বলছে মা কে, মালতি বিল্টু তো ছোট। পুজো তো বাচ্ছা দেরই। বেচারা একরত্তি ছেলে আমার, তোমার শাসনের চোটে কেমন জড়সড় হয়ে ঘুমিয়ে আছে দেখো? আর পুজো তো চারটে দিনের কেবল ব্যাপার। তুমি আর ওকে বোকো না। ঘুম থেকে উঠলে ও যদি ঠাকুর তলায় যেতে চায় , যেতে দিও। বাবার কথা গুলো শুনে পিটপিট করে চেয়ে বিল্টু মিটিমিটি হাসতে থাকে।
বিকেল হতেই বোন কে নিজের হাতে জামা, জুতো পরিয়ে, চুল আঁচড়িয়ে কোলে করে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে পড়ে।
বিল্টু আর দোয়েল বেরিয়ে গেলে রাজু হাক দিয়ে মিতালী কে বলে একটু চা আর পাপড় ভেজে আনো মিতালী। ঠাকুর তলা
থেকে মাইকে মিষ্টি গান ভেসে আসছে, শুনতে শুনতে তোমার সাথে গল্প করতে করতে জমিয়ে খাওয়া হবে। মিতালী চা করে ঘরে আনছে, এমনই সময় ভয়ংকর একটা তীব্র আওয়াজ, মুহূর্তের মধ্যেয়েই পুরো বস্তি আগুনে দাউ দাউ করে পুড়তে থাকে। প্যান্ডেল তলা থেকে ছেলে মেয়েরা সব স্টেশনের দিকে ছুটতে থাকে। চারিদিকে কালো ধোঁয়া কিছু দেখা যায় না, আর মানুষের আর্তনাদ। বিল্টু বুকের মধ্যে জাপটে ধরে থাকে দোয়েল কে। কোনদিকে যাবে দিশাহীন হয়ে পড়ে। বাড়ির দিকে এগোতে গেলে দেখে শুধু আগুন আর আগুন।
- এই বিল্টু কি করছিস? যা পালা! সব শেষ হয়ে গেল রে... বোন কে নিয়ে স্টেশনের দিকে চলে যা...
দোয়েল তখন খুব কাঁদছে। বিল্টু হতভম্ব হয়ে আরো সব লোকের পিছু পিছু ছুটতে থাকলো।
বস্তিতে ওই বিস্ফোরণ এ অনেক বস্তি বাসীই মারা গেছে। মারা গেছে মিতালী , রাজুও। পুলিশ তদন্ত করে জানা গেছে কোনো বাড়িতে গ্যাস লিক করেই এই বিস্ফোরণ।
অবশেষে স্টেশন সংলগ্ন একটা চায়ের দোকানে অনাথ বিল্টু কাজ এ লেগে পরে। অবসরে ছোট্ট বোন টাকে খাওয়াতে আসে। ওদের ঘরের পাশেই একটা ছোট্ট তিরপল ঘেরা বেড়া দেওয়া ঘর করে দিয়েছিল বস্তির লোকেরা। ওখানেই বিল্টু আর দোয়েল থাকতো। বিল্টুর পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিল। ওর স্বপ্ন তখন বোন টার খেয়াল রাখা। আর ওকে লেখা পড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার।
কাজের ফাঁকে বিল্টু যখন আসে দোয়েল কে দেখতে ওর ক্ষুধার্ত মুখের দিকে চেয়ে ওর বুকটা হু হু করত। মাত্র কয়েকটা দিনের ব্যবধানেই যেন ও কত বড় হয়ে গিয়েছিল। বদলে গিয়েছিল ওর জীবন। তবে বিল্টু একটুও দুর্বল হয়ে পড়ে নি। মা, বাবার ফটো গুলোর দিকে তাকালে ও অনেক শক্তি পেত মনে।
চায়ের দোকানের মালিক এর বউ বিল্টু আর দোয়েল কে প্রথম দিন দেখেই খুব ভালোবেসে ফেলে।
- তুমি বলো নি তো আমায় এত ছোট ছেলে কে তুমি কাজে নিয়েছ?
চায়ের দোকানের মালিক অসীম বাবু একটু বিরক্তির সাথেই বলেছিল, কি করবো পটল এসে বললো বাপ মা হারা ছেলে কাজ না পেলে খেতে পাবে না তাই বাধ্য হয়েই...
চুপ করো তুমি। কাঁদতে কাঁদতে বিল্টুকে বুকে জড়িয়ে নেন উনি।
এরপর মালিকের বউ এর ইচ্ছা তেই বিল্টু আবার স্কুলে ভর্তি হয়েছে। সন্তান হারা অসীম বাবু মানে চায়ের দোকানের মালিকও বিল্টুকে আর কাজ করতে দেয় না। সন্তানের মত দুজনকে আপন করে নিয়েছে।
সমাপ্ত
0 মন্তব্যসমূহ