নতুন মাতৃত্ব


নতুন মাতৃত্ব New motherhood

নতুন মাতৃত্ব


অহনাকে জন্ম দিতে গিয়েই তার মা মারা যায় । অহনার বাবা শ্যামল বাবু এই অবস্থায় দিশাহীন হয়ে পড়েন ।তিনি কখনোই অন্য একটি বিবাহ করে অহনা দেখাশোনার ভার কাউকে দিতে চাননি। এইরকম অবস্থায় শ্যামল বাবুর বাড়িতে কাজ করতে আসা মালতি অহনাকে যত্ন করে কোলেপিঠে করে মানুষ করে।


 অন্যদিকে মালতির ও একটি ছেলে আছে নাম অর্ক। অর্কর যখন বছর চারেক বয়স মালতির স্বামী দুর্ঘটনায় মারা যায়।  তাই শ্বশুরবাড়িতে মালতির আর জায়গা হয়নি।  বাপের বাড়ি ফিরে এসেও দাদা-বৌদি সংসারে থেকে বোঝা হতে চায়নি সে। তাই ও তিন বাড়ি কাজ করে ও আর ওর ছেলের পেট চালাত। কিন্তু অহনার মা রিতা দেবীর আকস্মিক মৃত্যুর পর মাতৃহারা সদ্য প্রস্ফুটিত মেয়েকে দেখে তার খুব মায়া লেগে যায়। তাই শ্যামল বাবুর অনুরোধেই  মালতি আর অর্কর ঠাঁই হয় অহনা দের গেস্ট হাউসে।  সেই থেকে শ্যামল বাবুও বেশ নিশ্চিন্তে  ব্যবসায় মনোযোগ দেন মালতির ওপর সংসারের ভার দিয়ে।


 এত বড় সংসারের দায়িত্ব পেয়ে মালতি কিন্তু কখনোই সেই সুযোগের অসৎ ব্যবহার করে নি।   অর্ক ভালো খেতে পড়তে পারছে অহনাকে মাতৃস্নেহে  সম্পন্ন আপন করে নিয়েছে এই টুকুতেই সে খুশি। দেখতে দেখতে অর্ক আর অহনা  দুজনেই বড় হতে লাগল। তবে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বের  চেয়ে ঝগড়াঝাঁটি টাই বেশি চলতো। তা সামাল দিতে হতো মালতি কে। আবার একে অপরকে ছাড়া চলত ও না । অহনা এখন বিএ সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্রী।অর্ক  ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে বাইরে গেছে প্রায় পাঁচ বছর হল। আজ এতগুলো বছর পর নতুন চাকরি পেয়ে অর্ক ফিরছে তার মা মালতির কাছে।


 অহনা  আজ খুব খুশি সকাল থেকে সে উত্তেজনায় ছটফট করছে ।এতগুলো বছর ধরে সে অর্ক র অপেক্ষায় ছিল। ট্যাক্সি থেকে নেমে অর্ক সদরের গেট টা খুলতেই অহনা ওপরতলা ব্যালকনি থেকে এক ঝলকে তাকে একবার দেখে নিল, তারপর লজ্জায় ঘরে ঢুকে গিয়ে  একবার আয়নায় সে নিজে কে দেখে নিল।  আজ যে সে শুধু সেজেছে অর্কর জন্য। অর্ক প্রথমে এসেই তার মাকে প্রণাম করতে গেলে তার মা বাধা দিয়ে বলেন-- "আগে প্রণাম করো ভগবানের মতো মানুষটাকে যে আমাদের আশ্রয় দিয়ে তোমায় এই নতুন জীবনটা উপহার দিয়েছে। এসো  মেসোমশাই কে প্রণাম করো।" আরে থাক থাক  তুমি জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছ তোমার অধ্যাবসায় আর পরিশ্রমের জন্য। আমি শুধু তোমার পাশে থেকেছি। কিন্তু এই খুশিতে আজ যদি তোমার থেকে কিছু চাই তুমি দেবে অর্ক।" "মেসোমশাই ওভাবে কেন বলছেন আপনার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি। আপনার হাত আমার আর মায়ের ওপর না থাকলে এখন কি আমি এই জায়গায় পৌঁছাতে পারতাম."।" থাক ওসব বলে আমায় লজ্জা দিও না বাবা আমার মা মরা মেয়ে মানে অহনা কে আমি তোমার হাতে তুলে  দিতে চাই এতে তোমার কোন আপত্তি আছে অর্ক ?"অর্কের মুখটা মুহূর্তে খুশিতে লাল হয়ে নিচু হয়ে গেল। দরজার আড়াল থেকে এই কথাগুলো শুনে অহনা একছুটে মালতি পিসিকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকে । শ্যামলবাবু তখন অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলে" ওরে কাঁদবি পরে আগে শাশুড়ি মাকে প্রনাম কর"। এইভাবে এত বছরের বন্ধুত্ব বন্ধন পূর্ণতাপায় পরিণয়ে। মালতিও বাধা পরে যায় নতুন মাতৃত্বে ও আত্মিক সম্পর্কে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ