নতুন জীবন



new life নতুন জীবন



নতুন জীবন

নগ্ন শরীরে বিধ্বস্ত অবস্থায় বাইপাসের ধারে কতক্ষণ যে রীতি পরেছিল তা ও নিজেও জানে না। আসতে আস্তে যখন জ্ঞান ফিরল অস্পষ্ট শুনতে পেল নার্সদের  হালকা কণ্ঠস্বর। ঝাপসা চোখে চারপাশটা  চোখ মেলে দেখে বুঝতে পারল একটা নামি নার্সিংহোমের  বেডে সে শুয়ে আছে। রিতির অজান্তেই ওর হাতের আঙ্গুল গুলো একটু নড়তেই  একজন নার্স ছুটে গিয়ে ডাক্তারবাবুকে ডাকতে গেলেন।

 সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারবাবু এসে রিতির প্রায় কানের কাছে মুখ দিয়ে আস্তে করে বললেন--" আপনি এখন একটু সুস্থ বোধ করছেন?" উত্তরে রিতি "হুমম" ছাড়া আর কিছু বলতে পারল না। ডাক্তারবাবু আবার ওই একই ভাবে কানের কাছে এসে বললেন --"ভয় পাবেন না আপনি এখন সম্পুর্ন বিপদমুক্ত। আর একটু রেস্ট নিন। নার্সেরা এখানে আছে ।তারা সময়মতো ওষুধ দিয়ে দেবে। আপনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাবেন।"

 এরপর নার্সেরা ডাক্তারবাবুর পরামর্শ মতো বেশকিছু ইঞ্জেকশন আর ওষুধ খাওয়ালে প্রায় সঙ্গে সঙ্গে তার ঘুম চলে আসে। এভাবে প্রায় অনেকক্ষণ রীতি ঘুমাচ্ছিল। প্রায় ঘন্টা চারেক পর হঠাৎই রিতি র চিৎকারে নার্সেরা ছুটে এসে দেখে সে বেড থেকে পড়ে গেছে। হাতে স্যালাইন এর সুচ খুলে গিয়ে গল গল করে রক্ত বেরুচ্ছে। আর "আমায় ছেড়ে দাও আমায় বাঁচতে দাও "বলে চিৎকার করে চলেছে ক্রমাগত। নার্সেরা তৎক্ষণাৎ রীতিকে বেডে শুইয়ে তাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু রীতির তখন গতকালের ভয়াবহ সমস্ত ঘটনা মনে পড়ে গিয়েছিল। 


অন্যান্য দিনের মতোই রীতি সন্ধ্যেবেলায় কাজ থেকে বাড়ি ফিরছিল গতকাল। বছর ঊনিশের  রীতি একটা বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করে। চাকরির জন্য তাকে তার বাড়ি পলাশপুর থেকে কলকাতা রোজ ডেলি প্যাসেঞ্জার ই করতে হয়। বাড়িতে বিধবা মা এবং বোন ছাড়া আর কেউ নেই। পড়াশোনায় মেধাবী ছাত্রী হলেও গত বছর তার বাবা মারা যাওয়ায়  তাকেই সংসারের হাল ধরতে হয়। কিন্তু কোন মরণব্যাধি রোগের প্রকোপে তার বাবা মারা যায়নি। তার  বাবা ছিল একজন মাছ ব্যবসায়ী। পলাশ পুর গ্রামের বাসস্ট্যান্ডের কাছে রোডের ধারে তিনি মাছ বিক্রি করতেন। গতবছর দিওয়ালির সন্ধ্যায় রোজকার মত বিক্রিপাট্টা সেরে  পুজোর দরুন একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ একটি চারচাকা গাড়ি সজোরে এসে রীতির বাবা সুজয় বাবুর সাইকেলটা কে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এবং পিছনে আসা একটি লরি সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরের উপর দিয়ে চলে যায়। সেখানেই তার মৃত্যু হয়। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সুজয় বাবুর অকালমৃত্যুতে  সংসারের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। এমতা অবস্থায় সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা রীতি সংসারের দায়িত্ব বহন করার জন্য কলকাতায় বেসরকারি কোম্পানিতে জয়েন করে।

কিন্তু গতকাল সন্ধ্যায় প্রতিদিনের মতো অফিস থেকে সাতটার ট্রেনেই পলাশপুর নামে রীতি।  তখনো ও জানতো না ওর জন্য কি ভয়ানক বিপদ রাস্তায় ওৎ পেতে  আছে। স্টেশনে নেমেই সে বাড়ির উদ্যেশে হাঁটা দেয়। পলাশ পুরের মতো গ্রাম্য এলাকায় সাতটা মানে বেশ রাত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ