নীরবে ভালোবাসি পর্ব-৭

 

love silently part 7


আগের পর্ব পড়ুন

নীরবে ভালোবাসি পর্ব-৭


শ্রীলতা, তোর কি অঙ্ক বুঝতে কিছু অসুবিধা হয় নাকি সবটাই ফাঁকিবাজি? রেজাল্ট বেরোনোর উত্তেজনায়, নিস্তব্ধ, কোলাহল হীন ক্লাসে প্রবাল বাবুর গম্ভীর গলায় শ্রীলতা থরথর করে কেঁপে বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়াল। তার একটা হাত তখন ও শ্রেয়ার হাতের সাথে আষ্টেপৃষ্টে আবদ্ধ। প্রবাল স্যার এর ইশারায় শ্রী, বেঞ্চ ছেড়ে এবার স্যারের দিকে মন্থর গতিতে এগিয়ে চলল। স্যারের হাতে থাকা রেজাল্ট এর দিকে চোখ পড়তেই ভয়ে তার সর্বাঙ্গ কাঁটা দিয়ে উঠলো। আশেপাশে থাকা বেঞ্চ ভর্তি ছাত্র-ছাত্রীর দৃষ্টি তখন শ্রী এর দিকেই নিবদ্ধ। রেজাল্টটা স্যারের হাত থেকে নিয়েই সে মুহূর্তের মধ্যে চোখ বুলিয়ে নেয়। পাশ করেছে, শুধু এইটুকু দেখার পরই তার হৃৎপিণ্ডের ধুক পুকুনি টা নিমিষেই উধাও হয়ে গেল। 

শ্রীলতা তোর অংকে কম নম্বর থাকার জন্যই প্রতিবারই তুই রাঙ্ক করতে পারিস না। আর সব সাবজেক্ট এ তো ভালোই নম্বর পাস। শুধু অংকের নম্বর এত কম থাকায় এই রকম রেজাল্ট হয়। প্রবাল স্যারের বলা কথা গুলো তখন শ্রী অবনত  হয়ে শুনছিল। ঠোঁট কামড়ে মাথা নিচু করে অপেক্ষা করছিল কখন স্যার তাকে বসতে অনুমতি দেবে। শেষ পর্যন্ত স্যারের সব উপদেশ এইবার থেকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে এইরূপ প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রী আবার তার বসার বেঞ্চের দিকে ফিরে গেল। স্কুল ছুটির পরে শ্রী এর মেজাজ আজ খুব ফুরফুরে। শ্রেয়া তো বরাবরই সব সাবজেক্ট এ ভালোই নম্বর পায় তাই সকাল থেকে সে শ্রী এর মত উদ্বিগ্ন ছিল না। সকালের উত্তেজনাটা কাটিয়ে শ্রী এর শরীরের তর তাজা অনুভূতিটা শ্রেয়ার নজরে পড়লো।রাস্তায়  হাট তে হাটতে শ্রেয়া উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো , আচ্ছা শ্রী তুই তো আগে থেকেই জানতিস অংকে পাশ করে গেছিস। তাহলে অযথা সকাল থেকে চিন্তা কেন করছিলিস? স্কুল সংলগ্ন দোকান থেকে কেনা কুলের আচার মুখে ভোরে , আচারের মোড়া শালপাতা টা শ্রেয়ার দিকে আগিয়ে সে বলল ঐরকম টেনশন আমার রেজাল্ট বেরোনোর দিন প্রতিবারই হয়। শাল পাতায় ভরা কুলের আচারের এক টুকরো মুখে পুরে শ্রেয়া বললো, কাল তাহলে রবিন স্যারের বাড়ি রেজাল্ট নিয়ে যাবি তো? ঘাড় নাড়িয়ে শ্রী সম্মতি জানালো। 

তুই এবারেও অংকে এই নম্বর পেয়েছিস শ্রী? ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বরে চৈতি বললো। স্কুলের ইউনিফর্ম টা খুলতে খুলতেই বন্ধ রুমের অপর প্রান্ত থেকে শ্রী বেশ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বললো, এই যা পেয়েছি, এটাই আমার কাছে অনেক মা। এর থেকে বেশি কিছু অংকে আমার থেকে আশা করো না। শ্রী এর ভাবলেশ হীন বাক্য টুকু চৈতির কর্ণে যেন চাবুকের মতো এসে বিধলো। রাগে ক্ষোভ এ তখন সে ভাবছিল শ্রী কে সামনে পেলেই তার চুলের মুঠি ধরে তার দু-গালে থাপ্পড় মারবে। রেজাল্ট খানা টেবিলের উপর রেখে আর কথা না বাড়িয়ে চৈতি শ্রী এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকলো। কিন্তু কিছুক্ষনের মধ্যেই শ্রী রুম থেকে বেরিয়ে এলেও তার প্রতি ক্ষোভ টা চৈতি উগরে দিতে পারল না। উপরন্তু একটা চাপা কান্না বিপুল  গতিতে তার চোখ ছাপিয়ে দু-গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। চৈতিকে এই অবস্থায় দেখেই শ্রী শিউরে উঠলো। 

-মা, তুমি কাঁদছো কেন? শ্রী এর চোখে মুখে তখন বিস্ময়ের ছাপ। শ্রী এর হাত টা ঝনাত করে তার শরীর থেকে আলাদা করে চৈতি উঠে দাঁড়াল। 

-মা, কথা বলছ না কেন? 

শ্রী এর প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়েই চৈতি রুমের দিকে পা বাড়াল। ফ্যানের জোরালো হাওয়ায় উড়ে নীচে পড়ে থাকা রেজাল্ট টা কুড়িয়ে হাতে নিয়েই শ্রী তার মায়ের পথ অবরোধ করে সামনে দাঁড়ালো।

তুই এই বারেও অংকে এত কম নম্বর পেয়েছিস। ওদিকে ঘন্টা দুই আগে থেকেই তোর বাবা আমায় ফোন করে জিজ্ঞাসা করছে তোর রেজাল্ট কেমন হয়েছে? অংকে কত নম্বর পেয়েছিস? আমি কি জবাব দেব এবার তুই বল? মানুষ টা তো তোর জন্য কম কষ্ট করে না। তার সাধ্যমত তোর সব বায়নাই তো মেটায়। তার ভালোবাসার এই প্রতিদান?

চৈতির বলা কথা গুলো শ্রী কিছু তেই সহ্য করতে পাচ্ছিল না। প্রবল রাগে হাতাহিত শুন্য হয়ে ভালো মন্দ জ্ঞান হারিয়ে মেজাজ চড়িয়ে সেও পাল্টা জবাব দিলো- একটা সাবজেক্ট এ কম নম্বর পেয়েছি তার ওপর অবলম্বন করে যদি তোমরা ভালোবাসার পরিমাপ করে থাকো, তাহলে এটা শুনে নাও হ্যা ওই মানুষ টাকে আমি ভালোবাসি না। ভালোবাসতে চাইনা। যে  মানুষটা নিজের ভালো লাগা টা শুধু জোরপূর্বক অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে খুশি হতে চায় সেই মানুষটার ভালোবাসা পাওয়ার কোনো অভিপ্রায় আমার নেই।

চৈতি আশ্চর্য হয়ে শ্রী এর মুখের দিকে মৌন হয়ে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে ছিল। তার বোল-ব্যাককি গুলোকেও  বাধা দেওয়ার ক্ষমতাও যেন সে হারিয়েছে। মুখের সামনে যা- নয় তাই বলে শ্রী কাঁদতে কাঁদতে রুমে ঢুকে সপাটে দরজা বন্ধ করে দিলো। বিছানায় উপুড় হয়ে বালিশ টাকে আকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকলো। অস্পষ্ট স্বরে কাঁদতে কাঁদতে উচ্চ স্বরে মাথা খুঁড়ে পাগলের মত বালিশ টাকে আকড়ে বলছিল- কেন? বাবা কেন এমন অন্যায় আবদার আমার কাছে করো তুমি? তুমি কি বোঝ না ওই একটা বিষয় তোমার আর আমার মধ্যে বিচ্ছেদের সৃষ্টি করছে... আমি তোমায় খুব ভালোবাসি বাবা। নীরবে তোমায় খুব ভালোবাসি। তুমি বুঝবে না। তোমরা বুঝবে না আমায় কোনদিন ও।

চলবে...

পরের পর্ব পড়ুন

ছবি : সংগৃহিত

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ